পরিবর্তন না আনলে ব্যবসা এক দশকের বেশি টিকবে না বলে মনে করেন বিশ্বের প্রায় অর্ধেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীরা (সিইও)। বৈশ্বিক পরামর্শ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান পিডব্লিউসির বৈশ্বিক শীর্ষ নির্বাহী জরিপে অংশ নেওয়া বিশ্বের ১০৫টি দেশ ও অঞ্চলের বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ৩৯ শতাংশ সিইও এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
জরিপের ফল প্রকাশ করে আজ মঙ্গলবার পিডব্লিউসি বাংলাদেশ কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক (৪৫ শতাংশ) সিইও মনে করেন, প্রযুক্তি ও জলবায়ুর চাপ দ্রুত বৃদ্ধিতে তাদের ব্যবসা পুনর্নির্মাণ ছাড়া এক দশকের বেশি সময় টিকতে পারবে না।
তবে জরিপে অংশ নেওয়া ৩৯ শতাংশ সিইও আশা প্রকাশ করেছেন, তাদের কোম্পানির কর্মীর সংখ্যা ২০২৪ সালে ৫ শতাংশ বা এর বেশি বৃদ্ধি পাবে। জরিপে অংশ নেওয়া একাংশের মতে, চলতি বছরে বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার অনুপাত গত বছরের ১৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৮ শতাংশ হবে। জরিপে অংশ নেন ১০৫টি দেশ ও অঞ্চলের ৪ হাজার ৭০২ জন সিইও।
৭০ শতাংশ সিইও মনে করেন, জেনারেটিভ এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) আগামী তিন বছরে তাদের কোম্পানির মূল্য সংযোজন পদ্ধতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে। তাদের মতে, ব্যবসা টিকে থাকার উদ্বেগ ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। কারণ প্রযুক্তি ও জলবায়ুর চাপ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এছাড়া ৩৮ শতাংশ সিইও আগামী ১২ মাসে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী, যা ২০২৩ সালে ১৮ শতাংশ ছিল। অর্থনৈতিক অবনতির সংকেতেও সিইওদের প্রত্যাশা গত বছরের জরিপের রেকর্ড উচ্চতা (৭৩ শতাংশ) থেকে কমে ৪৫ শতাংশ হয়েছে। কারণ মুদ্রাস্ফীতি ও ম্যাক্রোইকোনমিক অস্থিরতার প্রতি অনুভূত ঝুঁকি যথাক্রমে ১৬ শতাংশ পয়েন্ট কমে ২৪ শতাংশ হয়েছে এবং ৭ শতাংশ পয়েন্ট কমে ২৪ শতাংশ হয়েছে।
চলমান সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে যেসব সিইওর ধারণা, তাদের কোম্পানি ভূরাজনৈতিক সংঘাতের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে, তাদের অনুপাত ৭ শতাংশ কমে ১৮ শতাংশ হয়েছে। যদিও প্রবণতা ইতিবাচক, তবে আত্মবিশ্বাস দুর্বল। যেহেতু মেগাট্রেন্ড, যেমন প্রযুক্তিগত অস্থিরতা- জেনারেটিভ এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) হচ্ছে এর একটি বড় উদাহরণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনও এর সঙ্গে একীভূত হচ্ছে।
প্রায় অর্ধেক (৪৫%) সিইও বলেছেন, তারা মনে করেন না গতানুগতিক ধারায় চলতে থাকলে তাদের বর্তমান ব্যবসা এক দশকের বেশি টিকে থাকবে। এই ধারণা ২০২৩ সালে ৩৯ শতাংশ ছিল। মেগাট্রেন্ড কীভাবে সামলাবেন সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা প্রতিফলিত হওয়ায় সিইওরা গত বছরের তুলনায় নিজেদের কোম্পানির আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনায় কিছুটা কম আত্মবিশ্বাসী- যা ৪২ শতাংশ থেকে কমে ৩৭ শতাংশ হয়েছে।
পিডব্লিউসির গ্লোবাল চেয়ারম্যান বব মরিটজ বলেন, ব্যবসায়িক নেতারা যেহেতু ম্যাক্রোইকোনমিক চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে কম উদ্বিগ্ন হচ্ছেন, তারা তাদের শিল্পের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী শক্তিগুলোর প্রতি আরও বেশি মনোনিবেশ করছেন। বিশ্ব অর্থনীতি সম্পর্কে আশাবাদ বাড়লেও, তারা গত বছরের তুলনায় নিজেদের রাজস্ব সম্ভাবনা নিয়ে কম আশাবাদী ছিলেন এবং তাদের ব্যবসায়ের মৌলিক পুনর্নির্মাণের প্রয়োজনের প্রতি আরও তীব্রভাবে সচেতন। জেনারেটিভ এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) এর দ্রুত বিস্তার ঘটানো বা জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ ও সুযোগগুলো মোকাবিলা করে তাদের ব্যবসা গড়ে তুলতে হবে, এটি একটি পরিবর্তনের বছর।
মন্তব্য করুন