বর্তমানে ৪৩ ধরনের পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা দিচ্ছে সরকার। তবে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে এসব পণ্য রপ্তানিতে তৈরি পোশাক খাতসহ অন্যান্য খাতে ১০ শতাংশ পর্যন্ত রপ্তানি প্রণোদনা কমানো হয়েছে। ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগের সার্কুলারটির বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস এম মান্নান (কচি) স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রপ্তানি শিল্পের প্রচলিত নগদ সহায়তার হার ও কাঠামোতে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই পরিবর্তন শিল্পের জন্য মোটেও সহায়ক ও সময়োপযোগী নয়, বরং এটি শিল্পে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝুঁকি ও বিপর্যয় ডেকে আনবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তটি পুনঃবিবেচনা করা হবে বলে তিনি আশা করছেন।
বিজিএমইএ জানিয়েছে, নতুন সার্কুলারে বাংলাদেশ ৫টি প্রধান রপ্তানি পণ্যের ওপর নগদ সহায়তা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করেছে। পণ্যগুলো হলো- টি শার্ট, সোয়েটার, নীটেড শার্ট, পুরুষদের আন্ডার গার্মেন্ট এবং ওভেন ট্রাউজার ও জ্যাকেট। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই ৫টি পণ্যের রপ্তানি মূল্য ছিল ২৫ দমমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার, যা আমাদের মোট পোশাক রপ্তানির ৫৫ দশমিক ২২ শতাংশ।
এ ছাড়া সংগঠনটি দাবি কছে, শুধু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রণোদনা ছাড়া বাকি সব প্রণোদনার হার ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ কমানো হয়েছে। তবে যদিওবা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রণোদনার হার কমানো না হলেও অধিকাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানার উৎপাদন ও রপ্তানি কিছু মৌলিক (বেসিক) পণ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, বিশেষ করে টি-শার্ট, ট্রাউজার ও সোয়েটার। এই পণ্যগুলো সামগ্রিক প্রণোদনা ব্যবস্থা থেকে বাদ দেওয়ায় মূলত এসব পণ্য রপ্তানিকারী ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানাগুলো কোনো প্রণোদনাই পাবে না।
এসএম মান্নান বলেন, আমাদের মোট পোশাক রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬০ শতাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শ্রেণির।
বিজ্ঞপ্তিতে বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন, ডব্লিউটিওয়ের এএসসিএম বিধান অনুযায়ী এই ৫টি পণ্যের ওপর নগদ সহায়তা বাদ দেওয়া হয়েছে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এলডিসি গ্রাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে ডব্লিউটিও অভিযোগ পদ্ধতিতে বিকল্প প্রণোদনা প্রবর্তনের বিষয়ে সার্কুলারটিতে কোনো উল্লেখ নেই, যদিওবা অনেক মধ্যম আয়ের দেশ তাদের শিল্পের জন্য সরাসরি প্রণোদনা না দিয়ে বিকল্প প্রণোদনা দিয়ে আসছে। বিকল্প প্রণোদনা প্রদানের বিষয়টি আমাদের দেশেও সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। বিকল্প ব্যবস্থা না করে হঠাৎ প্রচলিত ব্যবস্থা কর্তন শিল্প ও অর্থনীতির জন্য সহায়ক পদক্ষেপ বলে আমরা মনে করি না।
তার মতে, সামগ্রিক বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, উল্লেখিত সার্কুলারের ফলে পোশাক খাতে প্রচলিত প্রণোদনার প্রায় ৭০ শতাংশ কাটা হয়েছে। যেখানে চলতি অর্থবছরের শুরুতে গত ২৪ আগস্ট ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলারের (এফই সার্কুলার নং-১৩) মাধ্যমে সকল প্রণোদনার হার ও কাঠামো ঘোষণা করে তা চলতি অর্থবছরের ৩০ জুন ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত জাহাজীকৃত পণ্যের ওপর কার্যকর থাকবে বলে ঘোষণা করল, যেখানে এই প্রণোদনাগুলো বেশকিছু বছর যাবৎ কার্যকর রয়েছে, যেখানে ঘোষিত প্রণোদনা অনুযায়ী কারখানাগুলো অর্ডার কনফার্ম করেছে এবং বিনিয়োগ করে ফেলেছে, সেখানে স্টেকহোল্ডারদের সাথে কোনো প্রকার পূর্ব আলোচনা ছাড়া হঠাৎ এ রকম একটি গুরুতর সিদ্ধান্ত শিল্পকে চরমভাবে বিপর্যস্ত করবে। বিশেষ করে যখন আমাদের প্রধান রপ্তানি বাজারগুলোর পোশাক আমদানি ও চাহিদা ভালো নয়, এবং স্থানীয় পর্যায়ে আমরা উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির চাপে আছি তখন এ রকম একটি পদক্ষেপ শিল্প ও অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের যে নিম্নমুখী প্রবণতা ও ব্যালেন্স অব পেমেন্টে যে চাপ রয়েছে, সেই বাস্তবতায় এ রকম একটি পদক্ষেপ আমাদের অর্থনীতির জন্য মোটেই সহায়ক নয়, বরং তা এই সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে।
এস এম মান্নান (কচি) বলেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে শিল্প ও শ্রম খাতে যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা তৈরি না হয় সেজন্য আমাদের কারখানাগুলো আর্থিক চাপে থাকলেও ব্রেক-ইভেন মূল্য এমনকি লোকসান দিয়েও উৎপাদন ও শ্রমিকের কর্মসংস্থান ধরে রেখেছে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল সরকার ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে পোশাক খাতের জন্য বিশেষ নীতি সহায়তা প্রদান করবে।
তিনি আশা করছেন, বর্তমান বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করে আমাদের অর্থনীতিকে ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত অর্থনীতির দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকার শিল্প ও দেশের স্বার্থে এই পদক্ষেপটি পুনঃবিবেচনা করবে।
মন্তব্য করুন