জনি রায়হান
প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২৩, ০৪:১০ এএম
আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২৩, ১১:৫৪ এএম
অনলাইন সংস্করণ

১৫২ দিন ধরে অনশনে মা-ছেলে

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশনরত মা-ছেলে। ছবি : কালবেলা
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশনরত মা-ছেলে। ছবি : কালবেলা

রাজধানীর ব্যস্ততম একটি স্থান জাতীয় প্রেস ক্লাব। সভা-প্রতিবাদ-মানববন্ধন আর কর্মব্যস্ত মানুষের ভিড় লেগে থাকে এ প্রেস ক্লাব ঘিরে। সেখানেই দেখা মিলল এক হতভাগা মা-ছেলের। ৬০ বছর বয়সী মা ফাতেমা বেগমের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছেন ৪১ বছরের শেখ ফরিদ মৃধা। রুগণ ও শুকনো শরীর নিয়ে কোনোভাবেই উঠে বসতে পারছিলেন না। এর মধ্যেই হঠাৎ শুরু হয় বৃষ্টি। অসুস্থ ছেলেকে টেনে নিয়ে কোনো নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছানোর আগেই ভিজে যান দুজন।

জমি দখল ও প্রভাবশালীদের হামলার হাত থেকে বাঁচতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পাটি বিছিয়ে ১৫২ দিন ধরে এভাবেই অনশন করছেন তারা। প্রথমে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নাসরিন আক্তার ও তিন বছর বয়সী মেয়ে খাদিজাকে নিয়ে সেখানে বসে থাকতেন ফরিদ; কিন্তু গরমে স্ত্রী-সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের বাড়ি পাঠিয়ে মায়ের সঙ্গে শুরু করেন অনশন।

গত শনিবার ফরিদ জানান, তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের রুস্তমপুরে। জমি নিয়ে একাধিকবার তাকে ও পরিবারের সদস্যদের মারধর করেছে প্রতিপক্ষ। এখনো দিচ্ছে প্রাণনাশের হুমকি। এ কারণে বাড়ি ফিরতে পারছেন না তিনি। কে তাদের হুমকি দিয়েছে এবং কীভাবে মারধর করে রক্তাক্ত করা হয়েছে—সবকিছুর ছবি রয়েছে ব্যানারে। সেখানে নিজের দাবিগুলোও লিখে রেখেছেন। বললেন, আমি সৌদি আরবে কাজ করতাম। আমার আরেক ভাইও সেখানে ছিল; কিন্তু জমি দখলের খবর শুনে আমরা দেশে ফিরে আসি। একটি কবরস্থানের জায়গাসহ ৪৮ দশমিক ৬২ শতাংশ জমি বিভিন্ন সময় দখলের চেষ্টা করছে মোজাম্মেল হোসেন, মোশাররফ হোসেন ও তাদের লোকজন।

হাত-পা বেঁধে রড দিয়ে মারধর: নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে ফরিদ বলেন, ‘জমি নিয়ে কয়েকটি মামলা হয়েছে আদালতে। মামলাগুলো এখনো চলমান; কিন্তু এরই মধ্যে আমাদের ওপর অনেকবার হামলা করেছে ওরা। আমারে আর আমার ভাইরে হাত-পা বেঁধে লোহার রড দিয়ে পিটাইছে। পরে সেই ভিডিও ফেসবুকে গেলে থানায় মামলা ও ওরা চারজন গ্রেপ্তার হয়; কিন্তু জামিনে বের হয়ে আবারও হামলা করে। মোশাররফ হোসেন ঢাকার মুগদার আওয়ামী লীগের নেতা। তার প্রভাবেই প্রশাসন আমাদের কোনো সহায়তা করে না। এই মোশাররফের ভয়ে দিন-রাত আতঙ্কে থাকি আমরা।’

জমি নিয়ে বিরোধ থেকে মামলা: ফরিদ ও অভিযুক্ত মোজাম্মেল হোসেনের বাড়ি একই গ্রামে। ফরিদ জানান, যে জমি নিয়ে বিরোধ সেই জমি তার বাবা কিনেছেন। বাবার মৃত্যুর পর তারা এখন ওয়ারিশসূত্রে মালিক; কিন্তু এর কিছু অংশ প্রতিপক্ষ মোজাম্মেল হোসেন দখল করতে চাইছে। তিন বছর ধরে এ নিয়ে তাদের বিরোধ চলছে। আদালতে পাঁচটি মামলাও হয়েছে। এর মধ্যে একটি খারিজ হয়েছে। বাকি চারটি চলমান।

আদালতের মামলা খারিজের রায়ে সন্তুষ্ট বলে জানিয়ে ফরিদ বলেন, ‘কিন্তু ওদের (প্রতিপক্ষের) হামলার ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারছি না। মোজাম্মেল হোসেন রায়ের দিনও আদালতে হুমকি দিয়েছে আমাকে।’

এদিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশনে বসার আগে ফরিদগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছিলেন ফরিদ। এরপর সেখানে এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

এসব ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ২০২২ সালে আমার ওপর হামলা হয়। ডিসেম্বর মাসে হামলার পর ফরিদগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে আমি ৯৬ ঘণ্টা অনশন করেছিলাম। এরপর ফরিদগঞ্জ থানার পুলিশ আমার মামলা নিয়েছিল। এর আগেও ২০২২ সালের ১৩ মে মোজাম্মেল হোসেন ও তার লোকজন প্রকাশ্যে আমাদের দুই ভাইকে বেঁধে রড দিয়ে মারধর করেছিল। আর কত মার খাব আমরা।

ফরিদ বলেন, অনশন অনেক কষ্টের। নিজের বাড়িঘর থাকতে কেন এভাবে এখানে পড়ে থাকতে হচ্ছে। প্রশাসন যদি আমাদের নিশ্চয়তা দেয় যে, আমাদের ওপর আর হামলা হবে না, জীবনের নিরাপত্তা পাব, তাহলে বাড়ি গিয়ে থাকতে পারব। আমরা বাড়ি যেতে চাই।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ফরিদ ও আমাদের বাড়ি খুবই কাছাকাছি। রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও দুই পরিবারের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল; কিন্তু আমার দাদা, দাদি ও বাবার কবর যেখানে, সেখানে তারা প্রস্রাব করতে চায়। তারা যদি জায়গার মূল মালিক হয়, আইন অনুযায়ী যদি তারা পায়, তাহলে অবশ্যই তাদের জায়গা তারা নিয়ে নেবে।

মারধরের ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, মিলাদের দিন ফরিদ ও তার ভাই বাবার কবরে প্রস্রাব করতে চেয়েছে। এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে মারামারি হয়। এরপর সে মামলা করে। সেই মামলায় আমাদের তিনজন গ্রেপ্তার হয়। এখন জামিনে আছি সবাই। মামলা আদালতে চলমান। তবে প্রাণনাশের হুমকি ও মারধরের বিষয় অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা সবাই ঢাকায় থাকি। তাহলে সে (ফরিদ) বাড়িতে গেলে আমরা মারধর করব কীভাবে?

ফরিদগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল মান্নান বলেন, তাদের দুপক্ষের মধ্যে জমি নিয়ে ঝামেলা। কেউ কারও কথা মানে না। এটি নিয়ে এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন সবাই মিলে সমাধানের জন্য অনেকবার চেষ্টা করেছে। কমিটিও করা হয়েছিল। এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আইন অনুযায়ী যা করার পুলিশের পক্ষ থেকে সেটা সবসময়ই করি। আপাতত দুপক্ষকেই বলা হয়েছে, আদালতের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত কেউ জায়গার ওপর যাবেন না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রেমিককে বিয়ে, সেই তরুণীর রহস্যজনক মৃত্যু

টটেনহ্যামকে উড়িয়ে প্রিমিয়ার লিগে শীর্ষস্থান মজবুত করল আর্সেনাল

যে কারণে ক্ষমা চাইলেন বাফুফে সভাপতি

গাজায় সেনা পাঠানো নিয়ে নতুন সংকটে পাকিস্তান

তারেক রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে ৬১ ক্রিকেট ব্যাট-বল বিতরণ

ভূমিকম্পে আহত হামীমের চিকিৎসার খোঁজ নিলেন ডা. কাঁকন

৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যা

খালেদা জিয়ার হাসপাতালে ভর্তির কারণ জানালেন চিকিৎসক

ফাইনালে সুপার ওভারে হেরে বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গ

বিদেশিদের হাতে বন্দরের ব্যবস্থাপনা তুলে দেওয়া অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত : লায়ন ফারুক

১০

হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় / পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় মেজর সিনহাকে

১১

কর্মী নিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশকে সুখবর দিল সৌদি আরব

১২

সোনালী ব্যাংকে ‘শয়তানের নিঃশ্বাস’ দিয়ে প্রতারণা

১৩

জাল টাকার নোটসহ আটক ২

১৪

রাজশাহীতে ৬ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

১৫

এসএ সিদ্দিক সাজুকে বিএনপির শোকজ

১৬

বিএনপি নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বাবলম্বিতা বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ : সেলিমা রহমান

১৭

মুফতি মামুনুর রশিদ কাসেমী গ্রেপ্তার

১৮

রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকা উচিত : রিজভী

১৯

যুদ্ধবিরতির মধ্যে গাজায় হামলা, কমান্ডারকে নিহতের দাবি ইসরায়েলের

২০
X