ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের দিন গত বছরের ৫ আগস্ট সকালে চানখাঁরপুলে শহীদ হন মেহেদী হাসান জুনায়েদ ও শাহারিয়ার খান আনাস। তাদের নামে ‘শহীদ জুনায়েদ চত্বর’ এবং ‘শহীদ শাহারিয়ার খান আনাস সড়ক’-এর নামফলক উন্মোচন করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
সোমবার (০৭ জুলাই) গেন্ডারিয়ার ধূপখোলা মাঠ সংলগ্ন এলাকায় এই দুই শহীদের নামে চত্বর ও সড়ক উন্মোচন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ৫ আগষ্ট সকালের দুর্বিষহ স্মৃতি স্মরণ করে উপদেষ্টা বলেন, চানখাঁরপুলে যে স্থানে আনাস এবং জুনায়েদ শহীদ হয়, আমি তার পাশেই ছিলাম। আমরা সবাই পুলিশ, এপিবিএনের ব্যারিকেড ভেঙে শহীদ মিনারের উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হই। কিন্তু গুলিতে জুনায়েদ-আনাসসহ আরও অনেকে শহীদ হয়। আমরা এই শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা দূর করতে আর যেন কাউকে জীবন দিতে না হয়। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় যে নিরাপত্তা বাহিনী আমাদের নিরাপত্তায় রয়েছে, তাদের গুলিতে যেন কাউকে শহীদ হতে না হয় এজন্য বিচার ও কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।
অনুষ্ঠানে শহীদ আনাসের মা এবং শহীদ জুনায়েদের বাবা বক্তব্য দেন। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ এবং ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের দাবি করেন। এছাড়াও সকল শহীদদের কবর সংরক্ষণ এবং স্মৃতি সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ জ্ঞাপন করেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, চানখাঁরপুলে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের চার্জশিট আগামী ১৪ জুলাই গঠন করা হবে এবং ৫ আগস্ট থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মুখোমুখি করা হবে যেন আগামী এক শতাব্দী আমাদের সন্তানদের গায়ে কেউ হাত তোলার সাহস না পায়।
নামফলক উন্মোচনের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে শহীদদের উদ্দেশ্যে দোয়া ও একটি কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষ রোপণ করা হয়। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া।
১৪ বছরের কিশোর মেহেদী হাসান জুনায়েদ ছাত্রদের পানি খাওয়াতে তার মাটির ব্যাংকে জমানো টাকা নিয়ে এসেছিলেন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে। চাঁনখারপুলে মিছিলরত অবস্থায় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। আরেক শহীদ শাহারিয়ার খান আনাস আদর্শ একাডেমি গেন্ডারিয়ার ১০ম শ্রেণির ছাত্র। আনাস মায়ের উদ্দেশ্য চিঠি লিখে বীরের মতো মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে নেমে এসেছিলেন চানখাঁরপুলের রাজপথে।
মন্তব্য করুন