প্রায় ৯ বছর আগে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে গুরুতর দগ্ধ হন নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার ২নং ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক মিথুন ইসলাম। সে সময়ে তার শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে যায়। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, মিথুনকে বাঁচাতে পারার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।
তবে হাল ছাড়েনি তার পরিবার। দীর্ঘকাল ছেলের চিকিৎসা চালিয়ে গেছেন মিথুনের বাবা। একপর্যায়ে জীবন বেঁচে গেলেও ডান হাত কবজির উপর থেকে কেটে ফেলতে হয়; পুরোপুরি অকেজো হয়ে যায় অপর হাতের আঙুলগুলো। এতে কার্যত বাম হাতটিও অচল হয়ে যায়।
তবে এভাবে বছরের পর বছর ধরে ব্যয়বহুল চিকিৎসা করতে গিয়ে আর্থিকভাবে খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে মিথুনের পরিবার। ছেলের চিকিৎসা চালিয়ে নিতেও হিমশিম খাচ্ছিলেন তার বাবা। তাই পরিবার ও ছাত্রলীগের কমিটির অন্যান্যরা মিথুনের চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহ শুরু করেন। বহুকষ্টে তারা ৫০ হাজার টাকা জোগাড়ও করেন, তবে চিকিৎসার জন্য ব্যয় করতে হয়নি সেই টাকা।
এই সবকিছুর মধ্যেই মিথুন যোগাযোগ করেন রাজনৈতিক সিনিয়র বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক জিএস গোলাম রাব্বানীর সংগঠন টিম পজিটিভ বাংলাদেশ (টিপিবি) এর সঙ্গে। তবে সবকিছু জানার পর ভীষণ খারাপ লাগলেও যেন কিছুটা আশ্বস্ত হন গোলাম রাব্বানী। কেননা কৃত্রিম হাত তৈরি ও প্রতিস্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান রোবোলাইফ টেকনোলজি’র কর্ণধার তারই ঘনিষ্ঠ ছোট ভাই এবং টিম পজিটিভ বাংলাদেশের সদস্য সজয় বড়ুয়া লাবলু।
তবে বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) রাত ৯টায় টিম পজিটিভি বাংলাদেশের অফিস ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। সজয় বড়ুয়া লাবলু ও গোলাম রাব্বানী দুজনে মিলে মিথুনের কেটে ফেলা হাতে একটি রোবটিক হাত লাগিয়ে দেন। একইসঙ্গে মিথুনের হাতে খাবার তুলে দেন লাবলু এবং কৃত্রিম হাতের সাহায্যে সেটি খান মিথুন। এ সময় সেখানে উপস্থিত অন্যান্যরা হাততালি দিয়ে মুহূর্তটিকে আরও আনন্দঘন করে তোলেন।
গোলাম রাব্বানী বলেন, আমরা তাকে যে হাতটি দিতে পেরেছি, সেটা বিদেশ থেকে কিনে আনতে গেলে তার দাম হতো পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা। তবে মিথুনের পরিবারের পক্ষে এই সময়ে এত টাকা খরচ করার মতো সামর্থ্য ছিল না। এরইমধ্যে আমাদের শরণাপন্ন হয় তারা।
তিনি বলেন, আমার খুব ভালো লেগেছে, আমার ছাত্রলীগের একজন ভাইয়ের পাশে আমরা দাঁড়াতে পেরেছি।
কৃত্রিম হাতটির নির্মাতা লাবলু বলেন, রোবটিক হাতটিকে কীভাবে পরিচালনা করতে হবে সেটি মিথুন ভাইকে মোটামুটি শিখিয়ে দিয়েছি। প্রথম প্রথম কিছুটা অসুবিধা লাগলেও কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি এই হাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়বেন।
উপহার হিসেবে একটি কৃত্রিম হাত পেয়ে এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মিথুন। অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি আজ ভীষণ খুশি, আমি নিজ হাতে খেতে পারছি।
এছাড়া পরবর্তীতে মিথুনের জীবিকার প্রয়োজনে একটি দোকান করার জন্য টিম পজিটিভ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা মিথুনের হাতে তুলে দেন গোলাম রাব্বানী। পাশাপাশি নীলফামারী গিয়ে মিথুনের দোকান উদ্বোধনের ঘোষণাও দেন তিনি।
মন্তব্য করুন