রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের পুনর্বাসনের আশ্বাসের পরও রাজধানীর ‘গোপীবাগ-টিটিপাড়া রেলওয়ে হরিজন কলোনি’তে বারবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন সেখানে বসবাসকারী লোকজন। সেইসঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে কলোনির সব বাসিন্দাকে সম্মানজনক পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছে গোপীবাগ হরিজন ঐক্য পরিষদ।
শুক্রবার (২১ জুলাই) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে নেতৃবৃন্দ এ দাবি জানান।
গোপীবাগ (টিটিপাড়া) রেলওয়ে হরিজন কলোনিতে আবারও বসতবাড়ি উচ্ছেদের প্রতিবাদ ও যথাযথ পুনর্বাসনের দাবিতে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের কারণে টিটিপাড়া রেলওয়ে হরিজন কলোনির জমি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। এ জন্য শুরুর দিকে প্রকল্পের পক্ষ থেকে কলোনিতে বসবাসকারী সবার পুনর্বাসনের তালিকা করা হয়। এক পর্যায়ে কোনো ধরনের সহযোগিতা ছাড়াই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেন প্রকল্প কর্মকর্তারা।
এ পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা। রেলমন্ত্রী অসহায় মানুষদের কষ্টের কথা শুনে তাদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দেন। সেইসঙ্গে পুনর্বাসনের আগে আর উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দেন। এ ব্যাপারে মন্ত্রী নিজেই সরাসরি প্রকল্প কর্মকর্তার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন।
মন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করে গেল প্রায় ১৫ দিনে দুবার কলোনিতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। এ কারণে আতঙ্কের মধ্যে রাতদিন কাটছে স্থানীয়দের। হরিজন ও তেলেগু সম্প্রদায়ের মানুষের দাবি, প্রায় ২০০ বছর আগে ভারত থেকে তাদের এ অঞ্চলে জমাদারের কাজ করার জন্য আনা হয়। স্বাধীনতার পর তাদের এ দেশের নাগরিকত্ব দেয় সরকার। প্রথমে তারা রেলওয়ের কর্মচারী হিসেবে ফুলবাড়িয়া কলোনিতে বসবাস করত। পরে তাদের টিটিপাড়া কলোনিতে জায়গা দেওয়া হয়। সবার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা এই কলোনি। এখানে বাস করা খুব কমসংখ্যক লোকজন এখন রেলে কাজ করেন। এই অজুহাতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের উচ্ছেদ করতে চায়।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, হরিজনদের উচ্ছেদ করা হবে না- রেলমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পরও কেন তাদের উচ্ছেদ করা হলো। যাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে তারা এখন কোথায় যাবে, কোথায় থাকবে? পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থা ছাড়া কেন এভাবে তাদের অমানবিকভাবে উচ্ছেদ করা হলো। সরকারের অনেক জায়গা আছে। আমরা চাই ভালো কোনো জায়গায় তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক। এ জন্য সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। না হলে উচ্ছেদ করা হরিজনদের পক্ষে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
প্রতিবাদ সমাবেশে সংগঠনের সভাপতি পারদ লালের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের সভাপতি কৃষ্ণ লাল, সাধারণ সম্পাদক পঙ্গোজ বাসমোর, গোপীবাগ হরিজন সম্প্রদায়ের সাধারণ সম্পাদক লিটন দাস, বাংলাদেশ হরিজন ছাত্র ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হৃদয় দাস, হরিজন নেতা অর্জুন ভৌমিক, রাজেন লাল প্রমুখ।
কৃষ্ণ লাল বলেন, রাজধানীর কমলাপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় গোপীবাগ (টিটিপাড়া) রেলক্রসিং সংলগ্ন হরিজন কলোনির বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
২০১৯ সালে ওই কলোনির ১১২টি পরিবারকে প্রথম দফায় উচ্ছেদ করা হয়। সে সময় রেল মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় থেকে উচ্ছেদকৃত ১১২ পরিবারকে পুর্নবাসন করা হয়নি। বরং পরবর্তীতে আরও ২৭টি পরিবারকে তালিকা প্রণয়ন ছাড়াই উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদকৃত হরিজন সম্প্রদায়ের পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
পারদ লাল বলেন, আমরা হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের অনতিবিলম্বে পুনর্বাসন না করা হলে কঠোর আন্দোলন করা হবে। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তাদের পুর্নবাসনের ন্যায়সঙ্গত দাবি জানান।
মন্তব্য করুন