রাজধানীর বংশালের আগা সাদেক রোডে হরিজন সম্প্রদায়ের বসতি মিরনজিল্লা কলোনি ছেড়ে যেতে নতুন করে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
বুধবার (১২ জুন) রাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে হরিজন সম্প্রদায়ের একটি প্রতিনিধি দলের অনলাইন বৈঠক হয়েছে।
এতে দক্ষিণ সিটির উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। বৃহস্পতিবার ৪৮ ঘণ্টার সময় দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হরিজন সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে ৪০০ বছরের বসতি মিরনজিল্লায় কেটে দেওয়া হয়েছে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন। এতে দুর্ভোগে পড়েছে প্রায় হাজার মানুষ। এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন কলোনির বাসিন্দারা।
তারা বলছেন, স্থানীয় ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনারের সহযোগিতায় তাদের পরিকল্পিতভাবে উচ্ছেদ করে দেওয়া হচ্ছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সকল প্রকার নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের।
তারা জানান, এখানে বসবাস করা পাঁচ শতাধিক পরিবারের মধ্যে ৬৬ জনকে পুনর্বাসন করা হবে। কারণ এই ৬৬ জন বর্তমানে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কাজে নিয়োজিত। বাদবাকি পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করে জমিতে বহুতল ভবন বাণিজ্যিক ও কাঁচাবাজার নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অথচ সকল পরিবারের সদস্যই কোনো না কোনো সময় সিটি করপোরেশনের কর্মী ছিল। তাদের অনেকেই ছাঁটাই হয়েছে। কারও মৃত্যু হয়েছে। তাছাড়া এখানে বসবাস করা সবার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা এই কলোনি।
গত ৩ ও ৪ জুন বস্তি উচ্ছেদে চার প্লাটুন পুলিশ চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবর প্রথম চিঠি দেওয়া হয় সিটি করপোরেশন থেকে। এর প্রতিবাদে হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ বিক্ষোভ করলে মেয়র তাদের উচ্ছেদ না করার আশ্বাস দেন। গত রোববার আবারও বস্তি খালি করে দিতে ১২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। সোমবার চালানো হয় অভিযান। মঙ্গলবার দিনভর হাজারো মানুষের প্রতিবাদের মুখে প্রস্তুতি নিয়েও অভিযান পরিচালনা করতে পারেনি। সর্বশেষ জায়গা ছাড়তে সময় দেওয়া হলো ৪৮ ঘণ্টা। এই হিসাবে শুক্রবার রাত অথবা শনিবার আবারও কলোনিতে উচ্ছেদ অভিযান হতে পারে।
বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের সভাপতি কৃষ্ণলাল জানান, সিটি করপোরেশন থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জায়গা খালি করে দিতে বলা হয়েছে। এরপর অভিযান চালানো হবে। আমরা এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াব। গত সোমবার উচ্ছেদ অভিযানে ৮০টি ঘর ভেঙে দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, উচ্ছেদ হওয়া লোকজন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
হরিজন সেবক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পাভেল দাস বলেন, আমাদের সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে অবিলম্বে উচ্ছেদ হওয়া হরিজন কলোনির বাসিন্দাদের বর্তমান কলোনিতেই পুনর্বাসনের ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানান সংগঠনের নেতারা।
কলোনির বাসিন্দাদের অভিযোগ স্থানীয় কমিশনার আওয়াল হোসেনের লোকজন তাদের অব্যাহতভাবে হুমকি দিচ্ছেন। রাতদিন কলোনির আশপাশজুড়ে চলছে স্থানীয় মাস্তানদের মহড়া। এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে তাদের।
সোমবার কলোনি উচ্ছেদের প্রথম দিনে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়া লক্ষি রানীর পরিবারে এখনো চলছে শোকের মাতম। অন্যদিকে ঘর উচ্ছেদ করায় মনের কষ্টে মঙ্গলবার প্রকাশ্যে নিম গাছে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় শাম্মী দাস। তিনি এখনো ঢাকা মেডিকেলের ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি এখনো শঙ্কামুক্ত নন।
মন্তব্য করুন