একই ছাদ, একই হল, আবার সেই পুরোনো আড্ডার গন্ধ— কিছুক্ষণের জন্য যেন সময় থমকে গেল। কারও চোখে উজ্জ্বল উচ্ছ্বাস, কারও মুখে হাসি, আর মন যেন ভরে উঠেছিল পুরোনো দিনের স্মৃতিতে। প্রবীণ ও তরুণ প্রাক্তন— সবাইকে একসঙ্গে দেখে মনে হচ্ছিল, বছরের ব্যবধান কেবল সংখ্যা মাত্র।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) নগরের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে মিলিত হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চার হাজারের মতো প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
শুরু বিকেল ৩টায়, শেষ রাত সাড়ে ১১টায়— ঘণ্টার পর ঘণ্টাজুড়ে চলা পুনর্মিলনী যেন হয়ে উঠেছিল অতীত আর বর্তমানের এক অদ্ভুত মেলবন্ধন। বিকাল ৩টায় বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে উদ্বোধন করেন অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ আসলাম চৌধুরী, পুনর্মিলনী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ একরামুল করিম, সদস্য মাহবুবের রহমান শামীম, এমএ হালিম ও সদস্য সচিব কামরুল হাসান হারুন।
উপস্থিত ছিলেন এমডি ফখরুল ইসলাম, শাহ মোহাম্মদ, সেলিম, ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিন, কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু, আমজাদ হোসেন চৌধুরী, সোহরাব হোসেন সোহেল, আবুল বাশার, হাফিজ আল আসাদ, কামরুল মেহেদী, দাউদ আব্দুল্লাহ হারুন, মজুমদার শাহীন, মোর্শেদুল আলম, আতিকউল্ল্যাহ, আবু সাঈদ, রেজোয়ান সিদ্দিকী মামুনুর রশীদ, শাহেদুল ইসলাম প্রমুখ।
মঞ্চে উঠে আসা প্রাক্তনদের কণ্ঠে ধ্বনিত হলো স্মৃতির আবহ। কেউ বললেন আন্দোলন-সংগ্রামের দিনের কথা, কেউ স্মরণ করলেন বন্ধুত্বের প্রথম সকাল। আবার কেউ ঝুপড়িতে পাওয়া প্রেম কিংবা বন্ধুর সঙ্গে কাটানো বিকেল স্মরণ করে আবেগতাড়িত হয়ে পড়লেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ সম্মাননা জানানো হয় জুলাই আন্দোলনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ও ফরহাদ হোসেনের পরিবারের সদস্যদের। চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ ওয়াসিমসহ সব শহীদকে স্মরণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ সেই মুহূর্তে হলে যেন নীরবতা ভেঙে ভেসে উঠল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দিনগুলোর প্রতিধ্বনি। সংগীত, আবৃত্তি, নৃত্য আর নানা আড্ডায় পুরো আয়োজন হয়ে উঠেছিল প্রাণবন্ত। ভোজনপর্বে ভেসে বেড়িয়েছে উচ্ছ্বাস, হাসি আর স্মৃতিচারণের ঝলক।
পুনর্মিলনীতে অংশ নিতে ফেনী থেকে এসেছেন পরিসংখ্যান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ফখরুল ইসলাম পারভেজ। তিনি বলেন, আমি অ্যালামনাইয়ের কোনো অনুষ্ঠানই মিস করি না। এটা আমাদের প্রাণের মিলনমেলা।
৪০তম ব্যাচের রিনাত জাহান বলেন, আমার স্বামী আর আমি একই ব্যাচের। আমরা অনুষ্ঠান ভালোই উপভোগ করছি।
অ্যালামনাই নেতারা জানান, এই পুনর্মিলনী শুধু স্মৃতিচারণ নয়, বরং প্রাক্তনদের ভ্রাতৃত্ববোধ ও পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে সকলে মিলে অবদান রাখার অঙ্গীকারও করেন তারা।
রাত বাড়ছিল, কিন্তু বিদায়ের সময় কেউই যেন চাইছিলেন না। কনভেনশন হলজুড়ে তখনো সেলফির ঝলকানি, আড্ডার শব্দ আর বিদায়ের প্রতিশ্রুতি। যেন সবাই মনে মনে বলে উঠলেন— চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়, এটি আজীবনের সম্পর্কের বন্ধন।
মন্তব্য করুন