ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে সোমবার (২৩ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এতে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। সকাল থেকে লাগাতার বৃষ্টিতে রাস্তা-ঘাটে মানুষের চলাচল তুলনামূলক কম দেখা গেছে। ঘূর্ণিঝড় হামুনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জরুরি সভা করা হয়েছে।
সভায় উপজেলার সব দপ্তরের কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, রেড ক্রিসেন্টের কর্মকর্তা ও সিপিপি টিম লিডারকে মানুষকে সচেতন করতে ও নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত করা হয়েছে ৫৮টি সাইক্লোন শেল্টার এবং গঠন করা হয়েছে ৫টি মেডিকেল টিম।
জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হামুনে রূপ নিয়েছে। হামুনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে মাইকিং করা হয়েছে। সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে সাত নম্বর এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ছয় নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
মিরসরাই উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল হায়দার চৌধুরী বলেন, আমার ইউনিয়নের সকাল থেকে মাইকিং করা হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছে যাওয়ার জন্য। এ ছাড়াও সাগরে সব ইঞ্জিনচালিত বোট ও নৌকা মাছ ধরা বন্ধ থাকায় আগে থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে।
মঘাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন মাস্টার বলেন, আমার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে মাইকিং করা হচ্ছে। আমি সশরীরে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মানুষদের সচেতন করছি। এ ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক টিম ও ছাত্রলীগের কর্মীরা দুর্যোগ মোকাবিলায় কাজ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
মিরসরাই উপজেলা সিপিপি টিম লিডার এম সাইফুল্লাহ দিদার কালবেলাকে বলেন, ১০ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভায় আমাদের ৮০ টিম মাঠে থাকবে। ৮০ টিমে এক হাজার ছয়শ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। যারা নিজ নিজ ইউনিটে প্রচারের কাজ করছে। একটি টিমে ১০ জন পুরুষ ও ১০ জন মহিলা সদস্য রয়েছে।
মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা ইমাম হোসেন পাটোয়ারী বলেন, প্রয়োজনীয় ইকুয়েপমেন্টসহ আমাদের ৩টি টিম গঠন করা হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের টিম প্রস্তুত রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, এই বৃষ্টিতে আমন রোপা ও শীতকালীন সবজির তেমন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে ভারী বর্ষণ ও দমকা বাতাস হলে কিছুটা ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের সব উপসহকারী ও কৃষকদের সচেতন থাকার জন্য বলা হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম ফজলুল হক বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ইউনিয়নগুলোর জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলার ১৯১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির খান বলেন, ৩৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিন জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্যোগে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলার ১৬ ইউনিয়নে ১৬টি, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগে ৫টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার স্যালাইন, ৬ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ সব অসুস্থদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’র ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে সব দপ্তরের কর্মকর্তা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের সঙ্গে সভা করে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার উপকূলীয় ইছাখালী, সাহেরখালী ও মঘাদিয়া ইউনিয়নে মাইকিং ও লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে শুকনো খাবার, স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন