ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। যুদ্ধবিরতির পরও দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত হয়নি। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা আরও কৌশলী রূপ নিচ্ছে।
প্রেক্ষাপট যখন এই তখন দক্ষিণ এশিয়ায় কূটনৈতিক মিত্রতা জোরদারের মাধ্যমে পাকিস্তানকে চাপে রাখার চেষ্টা করছে ভারত। এরই অংশ হিসেবে, বহুদিন পর তালেবান-শাসিত আফগানিস্তানের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের সরাসরি যোগাযোগ করেছে নয়াদিল্লি।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৫ মে) ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন।
শুক্রবার (১৫ মে) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমস তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এই আলোচনার বিষয়টি জানা যায়। উল্লেখ্য, এটি তালেবান সরকারের সঙ্গে ভারতের প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক সংলাপ।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ফোনালাপ নিছক সৌজন্য নয়- বরং পাকিস্তানের উপর কূটনৈতিক চাপ তৈরির একটি কৌশল। বিশেষ করে এমন সময় এই সংলাপ হলো, যখন তালেবান কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছে। এই নিন্দা পাকিস্তানের জন্য একধরনের বার্তা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
ফোনালাপের পর জয়শঙ্কর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করে জানান, আজ সন্ধ্যায় আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকির সঙ্গে ভালো আলোচনা হয়েছে। পেহেলগাম হামলার নিন্দার জন্য আমি তাকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি কিছু ভিত্তিহীন প্রতিবেদন ভারত-আফগান সম্পর্কের মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি করতে চেয়েছে, যেগুলো মুত্তাকি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
অন্যদিকে তালেবানের যোগাযোগবিষয়ক পরিচালক হাফিজ জিয়া আহমেদ বলেন, এই ফোনালাপে আফগান নাগরিকদের জন্য চিকিৎসা ভিসা সহজীকরণ, আফগান বন্দিদের মুক্তি, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও চাবাহার বন্দর উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটি শুধু কৌশলগত বার্তা নয়, বাস্তবিকভাবেও দুই দেশের সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় সূচিত করছে।
এর আগে ২৭ এপ্রিল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও বিশেষ প্রতিনিধি আনন্দ প্রকাশ কাবুল সফরে গিয়ে তালেবান সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তখনো ভারতের পক্ষ থেকে যোগাযোগ জোরদারের বার্তা দেওয়া হয়।
যদিও এখনো ভারত তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি, কিন্তু ধারাবাহিক এই সংলাপ ও যোগাযোগ স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, নয়াদিল্লি দক্ষিণ এশিয়ায় তার প্রভাব পুনর্গঠনের পথে রয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে দেশটিকে কৌশলগতভাবে ঘিরে রাখার চেষ্টার এটি অন্যতম ধাপ।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত-আফগানিস্তান ঘনিষ্ঠতা কেবল দু’দেশের স্বার্থে নয়, এটি দক্ষিণ এশিয়ায় ভারসাম্য রক্ষার ভূ-রাজনৈতিক খেলায়ও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে উঠছে- যেখানে পাকিস্তান ক্রমেই চাপে পড়ছে।
মন্তব্য করুন