কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৫৮ পিএম
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:২২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ঘূর্ণিঝড় হামুনে লন্ডভন্ড কক্সবাজার

ঘূর্ণিঝড় হামুনে গাছ ভেঙে পড়েছে বাড়িঘরের ওপর। ছবি : কালবেলা
ঘূর্ণিঝড় হামুনে গাছ ভেঙে পড়েছে বাড়িঘরের ওপর। ছবি : কালবেলা

ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে পুরো কক্সবাজার লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে। বাতাসের তীব্রতায় কক্সবাজার পৌরসভাসহ উপকূলীয় উপজেলা মহেশখালী, কুতুবদিয়া, উখিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া এবং টেকনাফসহ ৭১টি ইউনিয়নে বিধ্বস্ত ও আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৭ হাজার ৮৫৪টি বসতবাড়ি। যেখানে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৫৪৯ বাসিন্দা। দেয়ালচাপায় নিহত হয়েছেন তিনজন। এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ সংযোগ। বলতে গেলে এক প্রকার অচল হয়ে পড়েছে প্রশাসনিকসহ সব কার্যক্রম।

বুধবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে জেলার ৭১টি ইউনিয়ন ও কক্সবাজার এবং মহেশখালীসহ ২টি পৌরসভাসহ সব ইউনিয়নে ৩৭ হাজার ৮৫৪ পরিবারের ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৫৪৯ জন বাসিন্দা ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছেন। ভেঙে পড়েছে পল্লীবিদ্যুতের ৩৫৪টি বৈদ্যুতিক খুঁটি। বিকল হয়েছে ২৩টি ট্রান্সফরমার। ৪৯৬ স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেছে। ৮০০ স্থানে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সন্ধ্যায় পৌরসভার দেড়শ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে ১ বান ঢেউটিন ও নগদ ১ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ে নিহতরা হলেন, কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকার আবদুল খালেক (৪২), মহেশখালীর উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের গোরস্তানপাড়ার হারাধন দে (৪৫) ও চকরিয়া উপজেলার বদরখালী গ্রামের আশকার আলী (৪৫)।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে আজ বুধবার রাত ৮টা পর্যন্ত শহরের বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ আছে। বিদ্যুৎ না থাকায় শহর থেকে প্রকাশিত ২০টি দৈনিক পত্রিকার কোনোটিই প্রকাশিত হয়নি। আদালতের বিচারিক কার্যক্রমেও পড়েছে প্রভাব। বিদ্যুৎ না থাকায় পানি সংকট দেখা দিয়েছে শহরজুড়ে। তবে সকাল থেকে উপড়ে পড়া গাছ কেটে শহরের প্রধান সড়ক, সৈকত সড়ক ও কলাতলী সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এবারে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসন উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে নিরাপদে সরে আসার আগ্রহ দেখা যায়নি। ফলে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে।

জেলা প্রশাসন কার্যালয় এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী রানা বলেন, শতবর্ষী বট গাছ পড়ে আমার কম্পিউটার, ফটোস্ট্যাট মেশিনসহ ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সতর্কতা সংকেত জানলে এ ক্ষতি থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যেত।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে কক্সবাজার শহর লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় দুপুর পর্যন্ত মুঠোফোন নেটওয়ার্ক সমস্যা ছিল। এখনো ইন্টারনেট সেবা বন্ধ আছে। এ কারণে জেলা কার্যালয় থেকে মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুন গতকাল মধ্যরাতের দিকে আঘাত হানবে বলে বলা হয়েছিল। কিন্তু রাত সাড়ে ৭টার দিকে প্রবল গতিবেগে ঘূর্ণিঝড়টি শহরে আঘাত হানতে শুরু করে। মাত্র দুই ঘণ্টার তাণ্ডবে পুরো শহর লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড়ে এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, কয়েক ঘণ্টার তাণ্ডবে পৌরশহরে কয়েক শতাধিক ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে আরও সহস্রাধিক ঘর। আমরা উপড়ে পড়া গাছ কাটার নির্দেশ দিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্তদের ঢেউটিন এবং ত্রিপল দিয়ে সহযোগিতা করছি।

পৌরসভার নারী কাউন্সিলর শাহেনা আকতার পাখি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে তার তিনটি ওয়ার্ডে অন্তত দেড় হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে বিলীন হয়েছে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের শুঁটকি উৎপাদনের প্রায় ৭০০ মহাল।

এদিকে জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে বলা হয়, রাতে রাতেই ৯৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৪০ হাজারের অধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। মানবিক সহায়তা হিসেবে কক্সবাজার সদর, রামু, ঈদগাঁও, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও মহেশখালীতে ৫০ হাজার টাকা করে সর্বমোট সাড়ে ৪ লাখ টাকা ও ১৪ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও পাঁচ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ করা হবে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল গণি বলেন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অভ্যন্তরে বেশকিছু গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। শহরের বিভিন্ন সড়কে বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সংস্কার ও ঠিক করতে দু-তিন দিন সময় লেগে যেতে পারে।

তিনি বলেন, রাত থেকে বিদ্যুৎ বোর্ডের লোকজন মাঠে নেমেছে। যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুতের লাইন ঠিক করার চেষ্টা চলছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। মানবিক সহায়তা হিসেবে কক্সবাজার সদর, রামু, ঈদগাঁও, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও মহেশখালীতে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ও ১৪ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পাঁচ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড় হামুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ক্লাসের ফাঁকে ‘চা খেতে’ গিয়ে ধরা ইবি ছাত্রলীগ নেতা

টেরিটরি ম্যানেজার পদে নিয়োগ দিচ্ছে নিটল-নিলয় গ্রুপ

১৩ অক্টোবর : আজকের নামাজের সময়সূচি

ওজন কমাতে সকালের শুরুটা হোক সঠিক খাবার দিয়ে

১৩ অক্টোবর : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

অ্যাপ্লায়েন্স বিভাগে নিয়োগ দিচ্ছে ওয়ালটন

সুলতান’স ডাইনে চাকরির সুযোগ, আজই আবেদন করুন

সোমবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে কওমি মাদ্রাসা প্রধানকে আটকে মারধর

মধ্যরাতে ঢাবি ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

১০

সৌদির সঙ্গে ঘেঁষতে চায় লেবাননের ইরানপন্থি গোষ্ঠী

১১

মদ পানে মহাসর্বনাশ, ৬ জনের মৃত্যু

১২

বড় ভাই মির্জা ফখরুলের মতোই কবিতা দিয়ে শুরু করলেন মির্জা ফয়সল

১৩

সোনারগাঁয়ে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন

১৪

মা ইলিশ রক্ষায় বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার টহল

১৫

ন্যাশনাল পিপলস যুব পার্টির মাদকবিরোধী আলোচনাসভা

১৬

নিউমার্কেটে চুরির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম, নগদ টাকাসহ গ্রেপ্তার ১

১৭

আন্দোলনরত শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করায় ছাত্রশিবিরের নিন্দা

১৮

শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংকের বিবৃতি

১৯

কক্সবাজার আদালতে বিচারকের মোবাইল-মানিব্যাগ চুরি

২০
X