তিন দফা সময় ও বরাদ্ধ বাড়ানোর পর ফের বরাদ্দ বাড়াতে চট্টগ্রামের আনোয়ারা পারকি সমুদ্র সৈকতে আধুনিক পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ বন্ধ রেখেছেন ঠিকাদার।
৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া এই কাজ ২০২০ সালের নভেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তিন দফা কাজের সময় ও একবার বরাদ্দ বাড়িয়ে ৭১ কোটি ২৫ লাখ টাকা করেও অর্ধেক কাজও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এখন ফের বরাদ্দ বাড়াতে গত সেপ্টেম্বর থেকে প্রায় তিন মাস ধরে বন্ধ রেখেছে নির্মাণকাজ। এতে নির্মাণসামগ্রী নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি নির্মাণাধীন বিভিন্ন অবকাঠামোগুলোতে ফাটল দেখা দিয়েছে। এসব কারণে স্থানীয়দের মাঝে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পের প্রধান গেট বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এবড়োথেবড়ো অবস্থায় পড়ে থাকা রডে মরিচা ধরেছে। কটেজের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা যাচ্ছে, রাস্তার অনেক স্থানে ফেটে গেছে এবং উত্তর পাশে সীমানা প্রাচীর বেঁকে গেছে। এসময় দুইজন পাহারাদার প্রকল্প এলাকা পাহারা দিলেও কোনো কাজ করতে দেখা যায়নি শ্রমিকদের।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন সূত্রে, ২০১৮ সালের নভেম্বরে পারকি সৈকত সংলগ্ন এলাকায় ১৩ দশমিক ৩৩ একর জায়গায় ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয় আধুনিক পর্যটন কমপ্লেক্স প্রকল্পের কাজ। ২০২০ সালের নভেম্বরে এ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এসময় করোনা মহামারির বাহানায় কাজের ২০ শতাংশও করেনি ঠিকাদার। পরে আবারও মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এসময় প্রকল্পের বরাদ্দ বাড়িয়ে ৭১ কোটি ২৫ লাখ টাকা করা হয়। কিন্তু এসময়েও ঠিকাদার অর্ধেক কাজও করতে না পারায় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
নির্মাণাধীন প্রকল্পে রয়েছে ৮০০ বর্গফুট করে ১০টি সিঙ্গেল কটেজ, ১৩৫০ বর্গফুটের চারটি ডুপ্লেক্স কটেজ, তিনতলা বিশিষ্ট একটি মাল্টিপারপাস ভবন যে ভবনে থাকবে অফিস কক্ষ, রেস্তোরাঁ ও বার এবং তিনতলা বিশিষ্ট একটি সার্ভিসব্লক। সার্ভিস ব্লকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার ব্যবস্থাসহ অতিথিদের জন্য ২২টি কক্ষের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে ১০৫০ বর্গফুটের একটি সাবস্টেশন ভবন, অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ, সিকিউরিটি রুম, ১৭০৮ বর্গফুটের দুইটি পিকনিক শেড নির্মাণসহ হ্রদ ও শিশুদের খেলাধুলার মাঠ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পের কাজগুলো ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তিন ভাগে বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের বালুভরাট, হ্রদ, ভেতরের রাস্তা ও নালার কাজ করছে নিয়াজ ট্রেডার্স, সীমানা প্রাচীর ও গেট পোস্টের কাজ করছে রাজ করপোরেশন এবং অবকাঠামোগত অন্যান্য কাজ করছে দেশলিংক লিমিটেড। তার মধ্যে সীমানা প্রাচীর ও গেটের কাজ শেষের পথে হলেও দেশলিংক লিমিটেডের অধিকাংশ কাজই থমকে আছে।
এদিকে গত তিন মাস ধরে প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকায় নির্মাণসামগ্রী নষ্ট হচ্ছে। বিভিন্ন ভবনেও ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি জানান, ঠিকাদারের ইচ্ছার বাইরে কেউ কিছু করতে পারে না। এখন সবাই মিলে বরাদ্দ বাড়াতে কাজ বন্ধ রেখেছে।
স্থানীয় বারশত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ বলেন, নিম্নমানের ইট, বালু আর লবণাক্ত পানি দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। প্রকল্পের কাজটি খুব নিম্নমানের। ঠিকাদারের স্বেচ্ছাচারিতায় সরকারের বৃহৎ এই উন্নয়ন প্রকল্পটি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
এবিষয়ে জানতে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান দেশলিংক লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মাসুদুল আলমের মোবাইলে একাধিকবার কল করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রকল্প প্রকৌশলী অসীম কুমার বলেন, কাজ কিছুদিন বন্ধ থাকলেও এখন শুরু হয়েছে, তবে জনবল সংকটে একটু ধীর গতিতে চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সরওয়ার উদ্দিন বলেন, সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার দ্রব্যসামগ্রীর দাম বাড়ানোর কথা বলে কাজ বন্ধ রেখে প্রকল্পের বরাদ্দ বাড়াতে পর্যটন কর্তৃপক্ষের বরাবর আবেদন করেছেন। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে পর্যটন করপোরেশনের একটি টিম দুইদিন আগে প্রকল্প স্থান পরিদর্শন করে এসেছে।
মন্তব্য করুন