

খুলনার কয়রা উপজেলা সদরের মদিনাবাদ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মোড় থেকে ৪ নম্বর কয়রা লঞ্চঘাট অভিমুখে সড়কটির সংস্কারের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। তবে সড়ক খোঁড়ার পর ইটের খোয়া ফেলে তিন বছরের বেশি সময় ধরে লাপাত্তা হয়ে আছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, কয়রা সদর ইউনিয়নের সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াই কিলোমিটার। ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের কারণে এ সড়কে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতিতে সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। খানাখন্দ সংস্কার করে সড়কটি নতুন করে কার্পেটিং করার জন্য বরাদ্দ হয় ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। কাজের দরপত্র পায় মেসার্স রাকা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে তারা কাজ শুরু করে। কয়েক মাস ধরে সড়কে খুঁড়ে ইটের খোয়া ফেলার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কাজ ফেলে চলে যান। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও বাকি কাজ শেষ করার উদ্যোগ নেই ঠিকাদারের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংস্কারের নামে পুরোনো সড়কটি খুঁড়ে কেবল খোয়া ফেলে রেখে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ থাকার কারণে সেসব খোয়াও সরে গিয়ে সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে সেসব গর্তে পানি জমে আছে। বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ঝুঁকি নিয়েই এ রাস্তা দিয়ে চলছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আ.লতিফ বলেন, এ সড়ক দিয়ে বর্ষার সময় চলতে যেমন দুর্ভোগ, তার চেয়ে শুকনো মৌসুমে ধুলায় চলাচল করা বেশি কষ্টকর। দীর্ঘদিন কাজ না করে ফেলে রাখা সড়ক দ্রুত সংষ্কারে দাবি জানাই।
৬ নম্বর কয়রা গ্রামের ইসমাইল হোসেন বলেন, সড়কটি দিয়ে উত্তর বেদকাশী, দক্ষিণ বেদকাশী ও কয়রা সদর ইউনিয়নের বাসিন্দারা দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করছেন। এ ছাড়া সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, উপজেলা হাসপাতাল ও উপজেলা সদরে আসা লোকজনকে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। জরুরি রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার পথে দুর্ভোগের সীমা থাকে না।
ভ্যানচালক সুলাইমান হোসেন বলেন, সড়কটি সংস্কার না করার কারণে আমাদের ভ্যান গাড়িতে প্রতিনিয়নত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিদিন গাড়ি চালিয়ে যা উপার্জন হয় তার থেকে বেশি চলে যায় মেরামতের কাজে।
স্থানীয় বাসিন্দা মেসবাহ উদ্দীন বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ায় এলাকাবাসী অনেক খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু দীর্ঘদিন সড়ক মেরামতের কাজটি বন্ধ থাকায় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও গ্রামের লোকজনের চলাচলের অনেক অসুবিধা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সংস্কারকাজ শুরুর আগে সড়ক দিয়ে চলাচল করতে পারতাম। এখন তো চলাই যায় না। কাজ বন্ধ করে ঠিকাদার উধাও। আমরা জরুরি ভিত্তিতে সড়কটি মেরামতের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য একাধিকবার কল করা হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রাকা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী তপন চক্রবর্তীর মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
কয়রা উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবুল ফজেল বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এ সড়কের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদারের কোনো খোঁজ নেই। মোবাইল ফোনেও যোগাযোগের চেষ্টা করে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, সড়কটি গত অর্থবছরে পুনরায় দরপত্র আহ্বানের জন্য পাঠানো হয়েছিল কিন্তু অনুমোদন পাস না হওয়ায় এ অর্থবছরে আবার ইস্টিমেট করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু হবে।
মন্তব্য করুন