কুমিল্লার চান্দিনায় এক প্রসূতি মায়ের জীবিত নবজাতক বদলে অন্যের মৃত বাচ্চা প্রদানের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা সদরের ‘মা ও শিশু হাসপাতাল’-এর মালিকসহ নার্সদের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় আদালতের নির্দেশে মৃত শিশুর মরদেহ কবর থেকে দুই মাস পর উত্তোলন করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
রোববার (১৪ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় উপজেলা সদরের মোকাববাড়ি কবরস্থান থেকে শিশুর মরদেহ উত্তোলন করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর বিকেলে আবারও একই কবরে সমাধিত করা হয় শিশুর মরদেহ। এসময় বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চান্দিনা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উম্মে হাবিবা মজুমদার।
জানা যায়, গত বছরের ১৫ নভেম্বর চান্দিনা উপজেলার কেরণখাল ইউনিয়নের থানগাঁও গ্রামের প্রবাসীর স্ত্রী পারভীন আক্তারের প্রসব ব্যথা অনুভব হলে রাত ১টায় চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন ‘মা ও শিশু হাসপাতাল’ নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। রাত ৩টায় অস্ত্রোপচারে ওই প্রসূতির পুত্র সন্তান জন্ম হয়। বেশ কিছুক্ষণ পর পরিবারের লোকজন নবজাতককে দেখতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই নবজাতক মৃত বলে জানায়। কিন্তু বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি প্রসূতির পরিবার।
ওই ঘটনায় প্রসূতির ভাই মো. কাউসার বাদী হয়ে গত ২০ নভেম্বর কুমিল্লা আদালতের মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ‘চান্দিনা মা ও শিশু হাসপাতালের’ মালিক ও পরিচালক মাহাবুব মিয়াসহ পাঁচজন নার্সকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন- ঘটনার দিন রাতে ওই হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর গভীর রাতে সিজার করা সম্ভব হবে না বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রাত ৩টার দিকে রোগীর পরিবারের কারও কোনো অনুমতি ছাড়া এবং কোনো বিশেষজ্ঞ গাইনি ডাক্তারের উপস্থিতি ছাড়াই পারভীন আক্তারকে সিজার করানো হয়। অপারেশনের পর জীবিত পুত্র সন্তানকে দেখিয়ে ওই নবজাতক শিশুকে হাসপাতালের ভেতরের কক্ষে নিয়ে যায়। বেশ কিছুক্ষণ পর রোগীর স্বজনরা নবজাতককে দেখতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় প্রসূতি মৃত সন্তান জন্ম দিয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই প্রসূতির নবজাতক পুত্র সন্তান অন্যত্র পাচার করে অন্যকোনো প্রসূতির মৃত বাচ্চা প্রদান করেন।
এ ঘটনায় বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য কুমিল্লা পিবিআই-এ পাঠান। পুলিশ মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ডিএনএ টেস্ট জরুরি মনে করে মরদেহ কবর থেকে উত্তোলনের জন্য আদালতের অনুমতি চান। গত ১৬ ডিসেম্বর ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগসহ মরদেহ উত্তোলন করার অনুমতি দেয় আদালত।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কুমিল্লা পিবিআই-এর উপপরিদর্শক মো. ইব্রাহিম জানান, রোববার চান্দিনা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উম্মে হাবিবা মজুমদার স্যারের উপস্থিতিতে মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে আবারও একই স্থানে দাফন করি। মামলাটি আমরা খুব গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। তবে আমাদের তদন্তের শুরুতে সুস্পষ্ট হয়েছি, চান্দিনার মা ও শিশু হাসপাতালটির কোনো অনুমোদন নেই।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে চান্দিনা মা ও শিশু হাসপাতালের মালিক মাহবুব মিয়া বলেন, আমরা কারও বাচ্চা পরিবর্তন করিনি। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট আছে। তারা যেহেতু মামলা করেছে, তাই আমরা পিবিআইয়ের মাধ্যমে আবেদন করেছি ডিএনএ টেস্ট করার জন্য। ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, আমরাও চাই বিষয়টি পরিষ্কার হোক। তবে আমরা কোনো ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নেইনি।
মন্তব্য করুন