ঝড়, বন্যা, মহামারি কিংবা যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ- দেশের যে কোনো প্রান্তে মানবিক পরিস্থিতির বিপর্যয় যেখানেই ঘটেছে, সেখানেই ছুটে চলে গিয়েছে প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন। এবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ বন্যার পর বরাবরের মতোই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন এ সংগঠনের সদস্যরা।
ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার পর থেকেই আটকে পড়াদের উদ্ধার, ত্রাণ সহায়তা, পুনর্বাসন ও চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন। গত ২১ আগস্ট থেকে টানা ১৫ দিন ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়াসহ ফেনী সদরের বিভিন্ন জায়গায় এই কার্যক্রম চালানো হয়।
প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্টরা জানান, বন্যা পরিস্থিতি অবনতির পর মানুষজন যখন ঘরবন্দি জীবন নিয়ে শঙ্কায়, তখন ফেনীর দুর্গম এলাকাগুলোর ২ হাজারেরও বেশি মানুষকে স্পিডবোট দিয়ে উদ্ধার করে প্রচেষ্টার স্বেচ্ছাসেবকরা। এ ছাড়া বিশুদ্ধ পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, স্যালাইনসহ রান্না করা ও শুকনো খাবার পৌঁছে দেয় বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের মাঝে। শুধু ফেনীই নয়, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়িতে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার মানুষের কাছে রান্না করা খাবার, ১২ হাজার পরিবারের কাছে শুকনো খাবার ও ৮ হাজার পরিবারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে দেয় এই সংগঠনটি। এ ছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে ৮টা পরিবারকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া হিসেবে ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর ওইসব এলাকায় পানিবাহিত নানান রোগের উপদ্রব শুরু হয়েছে। নারী, শিশুসহ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে বন্যাকবলিত এলাকায় কাজ শুরু করেছে প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন। ফেনীতে দিনব্যাপী চলছে মেডিকেল ক্যাম্পেইন। এ ছাড়া ইতোমধ্যে প্রায় ৪০০ নারী ও কিশোরীর মাঝে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করা হয়েছে।
প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশনের সভাপতি এবং কো-ফাউন্ডার পাভেল বাবু বলেন, বন্যার পর প্রচেষ্টা থেকে আমরা যখন ফেনীতে যাই, তখন কারো কোনো প্রস্তুতি ছিল না। তখন সবারই দিশেহারা অবস্থা ছিল, কী থেকে কী করব কিছুই মূলত বুঝতে পারছিলাম না। এরপর ফেসবুকে ঘোষণা দেওয়ার পর বিভিন্ন মানুষ আমাদের কাছে ত্রাণ এবং টাকা পাঠানো শুরু করে। এরপর আমরা স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে নিয়ে পুরোদমে কাজ শুরু করি। প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন সবসময়ই দেশের যেকোনো দুর্যোগে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত থাকার চেষ্টা করে। আর এই সবকিছু সম্ভব করেন কিছু মহৎ মানুষরা।
প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক ইকরাম উদ্দিন আবির বলেন, বন্যা পরিস্থিতির শুরু থেকেই কাজ করে যাচ্ছে প্রচেষ্টা। আগামীতেও আমরা এই কাজ চলমান রাখব। আমাদের সঙ্গে আরও যেসব সংগঠন যুক্ত হয়ে কাজ করছে তারাসহ আমাদের সব স্বেচ্ছাসেবকদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা দিনরাত এক করে গেল ২ সপ্তাহ টানা কাজ করেছে। এখনো কাজ করে যাচ্ছে।
সংগঠনের প্রমোশনাল হেড ফাতিমা তাহ্সিন নিশাত জানান, ফেনীর পরিস্থিতি এবার এত বেশি খারাপ ছিল যে, উদ্ধারের জন্য স্বজনদের শতশত ফোন পাচ্ছিলাম আমরা। তবে এই সংকটে সবাই যেভাবে এগিয়ে এসেছে সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। পুরো কার্যক্রমে প্রচেষ্টার সাথে কাজ করেছে গিভ বাংলাদেশ, আজিমুর রোকিয়া রহমান ট্রাস্ট, ইয়ুথনেট গ্লোবাল, ফেনী সেন্ট্রাল লিও ক্লাব, প্রয়াস, আমরাই আগামী, ইকো রেভ্যুলেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা।
মন্তব্য করুন