বন্যার্তদের সহায়তায় সারা দেশে গণসংগ্রহের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকার বেশি উত্তোলন করেছেন গ্রিন ভয়েসের স্বেচ্ছাসেবকরা। এই তহবিলে জয়পুরহাট বালিকা বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী মালিহার বৃত্তির ৪ হাজার টাকা যেমন আছে, তেমনি ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, রিকশা-ভ্যানচালক, দিনমজুর, কৃষকসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষরা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
বন্যা পরিস্থিতি অবনতি শুরু হওয়ার প্রাক্কালে পরিবেশবাদী যুবসংগঠন গ্রিন ভয়েস কেন্দ্রীয় পরিষদ থেকে সব ইউনিটকে বন্যার্তদের জন্য অর্থ সংগ্রহের আহ্বান জানানো হয়। গত ২১ আগস্ট থেকে বন্যার্তদের সহায়তায় অর্থ সংগ্রহ শুরু হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং এবং ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সহায়তা পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়।
২২ আগস্ট থেকে গ্রিন ভয়েসের স্বেচ্ছাসেবকরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তরুণ যুবকদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বন্যার্তদের জন্য অর্থ সংগ্রহে নেমে পড়েন। গ্রিন ভয়েসের পক্ষ থেকে অফিস-আদালত, বাজার-শপিংমল, বাস এবং রেলস্টেশনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট টিমে বিভক্ত হয়ে নগদ অর্থ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, শুকনো খাবার, স্যানিটারি ন্যাপকিন এবং খাবার স্যালাইন সংগ্রহ করা শুরু হয়। ঢাকাসহ প্রায় ১৫টি জেলায় গ্রিন ভয়েস ইউনিটগুলো রাস্তা, অফিস, বাজার, বাস, ট্রেন এবং মসজিদসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অর্থ সংগ্রহ করছে। দেশ-বিদেশের অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী অর্থ সহায়তা পাঠাচ্ছেন। দেশের চলমান বন্যায় এরকম অসংখ্য মানবিক সাড়া গভীরভাবে স্পর্শ করেছে।
সহায়তা সংগ্রহের অভিজ্ঞতায় দিনাজপুর সরকারি কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি ফারহানা রহমান তার অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে বলেন, সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে আমরা ৪টি টিম হয়ে বাহাদুর বাজারে যাই। সেখান থেকে একটি টিম পঞ্চগড় এক্সপ্রেসে করে দিনাজপুর থেকে পঞ্চগড় যায় এবং বিকেলে দিনাজপুর ফিরে আসে। এই যাত্রাপথে অনেক ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে। দেশের এই সংকটময় সময়ে মানুষ এগিয়ে আসছে, আমাদের কাজগুলো দেখে প্রশংসা করছে এবং অনুপ্রেরণা দিচ্ছে, যা আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি।
গ্রিন ভয়েসের সংগঠকরা জানান, এখন পর্যন্ত তহবিল সংগ্রহ হয়েছে ১০ লাখ ২৪ হাজার ৮১৯ টাকা। এর মধ্যে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৪৭০ টাকা ত্রাণ বিতরণে খরচ হয়েছে। এই মুহূর্তে প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহের পাশাপাশি বন্যার্তদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, পুনর্বাসন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে কমিউনিটিকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে গ্রিন ভয়েসের অর্থ সংগ্রহ কার্যক্রম এখনো চলমান রয়েছে এবং আরও আর্থিক সহায়তার জন্য দেশবাসীর নিকট আহ্বান জানানো হয়েছে।
গ্রিন ভয়েসের প্রধান সমন্বয়ক আলমগীর কবির বলেন, দেশের যে কোনো সংকটময় মুহূর্তে ছাত্র সমাজ এগিয়ে এসেছে, এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গ্রিন ভয়েসের বন্ধুরা নিজ নিজ দায়িত্ব থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করছে। বর্তমানে আমরা দুর্যোগ পরবর্তী সাড়া দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ভবিষ্যতে দুর্যোগ মোকাবিলায় কমিউনিটির সক্ষমতা বৃদ্ধি করা আমাদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
মন্তব্য করুন