

অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ (১৯৩১-২০১২) এর ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় এডাস্ট অডিটোরিয়ামে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেন খান। প্রধান অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান শামসুল আলম লিটন (ভার্চুয়ালি), বিশেষ অতিথি হিসেবে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ইমতিয়াজ আহম্মেদ (ভার্চুয়ালি), জনাব মোসা. কমরুন নেহার, জনাব সেলিনা বেগম, অধ্যাপক ড. সিরাজুল হক চৌধুরীর সহধর্মিণী অধ্যাপক ডা. মাসুমা আক্তার উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম।
এ ছাড়াও বক্তব্য প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. আব্দুল কাইউম সরদার, ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান ফাহমিদা কাসেম, এগ্রিবিজনেস বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. মোশাররফ হোসেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।
দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. জাবের আহমদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান আশরাফ উদ্দিন আহমেদ।
প্রধান অতিথি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান শামসুল আলম লিটন বলেন, অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ একটি বিশ্ববিদ্যালয় অথবা মুন্সীগঞ্জে যে একটি অসাধারণ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন তেমনিভাবে তিনি দেশের শত শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। জ্ঞান বিতরণে সাহায্য করেছেন। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে হাজার হাজার মেধাবীকে প্রশাসনে সুষ্ঠুভাবে জ্ঞানভিত্তিক, মেধা ভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্র গঠনে অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এর চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সুষমভাবে উন্নয়ন এবং পরিচালনায় অবদান রেখেছেন। ভবিষ্যতে আমরা হয়তো মধ্যম আয়ের বা উন্নতদেশে উন্নীত হতে পারব। কিন্তু যেটা অর্জন না করলে এই সব অর্জন বৃথা যাবে সেটা হলো সকল মানুষের প্রতি বা ভিন্ন মতের মানুষের প্রতি সম্মানবোধ।
মুখ্য আলোচক অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেন খান তার বক্তব্যে শুরুতেই সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ এর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন- অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ আমার প্রত্যক্ষ শিক্ষক ছিলেন। তিনি শিক্ষাদানের সময় চমৎকারভাবে পুরো ব্লাকবোর্ড জুড়ে লেখতেন। তিনি গুটি ইউরিয়া সার নিয়ে গবেষণা করেছেন। সেই গবেষণা সমগ্র বিশ্বব্যাপী প্রসংশা পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ একজন অমায়িক মানুষ ছিলেন, তাকে ভালো মানুষ বল্লে কম বলা হবে। ড. ইয়াজউদ্দিন মানুষকে এতো বেশী ভালোবাসতেন যে আমি তার মুখে কারও বিরুদ্ধে বলতে দেখিনি। ছাত্রদের প্রতি তার ভালোবাসা যে কতো তা বলতে গিয়ে বলেন- ছাত্ররা কোন প্রয়োজনে তার কাছে গেলে নিরাশ হয়ে ফিরে আসতে হতো না। তিনি কোনো না কোনোভাবে তাদের সমস্যা সমাধান করে দিতেন। তার এই ভালো গুণগুলো আমরা আয়ত্ত করতে পারলেই দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ইমতিয়াজ আহম্মেদ বাবু বলেন- আমার শ্রদ্ধেয় পিতা প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ এর মৃত্যুবার্ষিকীর এ আয়োজনে আপনাদের উপস্থিতির জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। পিতাকে স্মরণ করা আমার জন্য যেমন গর্বের, তেমনি গভীর বেদনারও। তিনি শুধু আমাদের পরিবারের অভিভাবক ছিলেন না—ছিলেন, একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক, গবেষক, প্রশাসক এবং দেশের প্রতি দায়িত্বশীল একজন মানুষ। পিতার কাছ থেকে আমি শিখেছি সততা, নৈতিকতা, দায়িত্ববোধ এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করার প্রত্যয়। তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় সবাই দোয়া করবেন। মহান আল্লাহ তার কবরকে প্রশস্ত করুন এবং জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।
বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সেলিনা বেগম তার রুহের মাগফিরাত কামনা করে বলেন- অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ একজন পরোপকারী মানুষ ছিলেন। তিনি জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন। দেশের মানুষ যাতে জ্ঞানী ও শিক্ষিত হতে পারে তার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করেছেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে মূল্যবান বক্তব্য প্রদানের জন্য অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন- অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ দেশ ও জাতীয় জন্য এক অমূল্য সম্পদ ছিলেন। শিক্ষিত জাতি ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নতি ও সমৃদ্ধ দেশ গড়া সম্ভব নয়। তাই তিনি শিক্ষত জাতি গড়তে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তার সহধর্মিণী অধ্যাপক ড. আনোয়ারা বেগম যিনি প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে অত্র শ্বিবিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। তার দক্ষ পরিচালনায় অত্র বিশ্ববিদ্যালয় একটি প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে উপনিত হয়েছিল। আমরা তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। মহান আল্লাহ যেন তাদেরকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।
মন্তব্য করুন