ছুটেছে ঘোড়া, উড়েছে বালি, জীবন-স্রোত আকাশে ঢালি হৃদয়-তলে বহ্নি জ্বালি চলেছি নিশিদিন— রবিঠাকুর তার কবিতায় আরব বেদুঈন হইয়ে ঘোড়ায় চড়ে মরু জয় করতে চেয়েছিলেন। এতোদিন সুযোগ না থাকলেও এখন সে সুযোগ চলে এসেছে ঘরের পাশে। ঢাকার পূর্বাচলে আছে বিনোদনের নানা সমারোহ। এর ভেতর রাজকীয় কায়দার এক নতুন বিনোদনের মাধ্যম যুক্ত হল কিছুদিন আগেই। সেটি হল ঘোড়ায় চড়া আর ঘোড়দৌড় প্রশিক্ষণ।
বাইরের দেশে ঘোড়ায় চড়া শেখাটা বনেদী শখ বলেই বিবেচনা করা হয়। দেশের চিড়িয়াখানা, কক্সবাজার, আর আরও কিছু ট্যুরিস্ট স্পটে গেলে সবাই চড়তে পারেন ঘোড়ায়। ঘুরে আসতে পারেন বেশ খানিকটা। কিন্তু ঘোড়ার লাগামটা ধরা থাকে ঘোড়ার মালিকের হাতেই। তাতে করে নিজের মনের মতো ঘোড়ায় চড়া বা দৌড়ানোর কোন সুযোগ থাকে না। আর তাছাড়া সঠিক বর্ম বা প্রশিক্ষণ ছাড়া ঘোড়া নিয়ে দৌড় দেয়াটাও ঝুঁকিপূর্ণ বটে।
বর্তমানে নেটফ্লিক্স আর ইউটিউবের কল্যাণে অনেকেই ঝুঁকে পড়ছেন নতুন এই ট্রেন্ডের দিকে, কিন্তু সঠিক পরিমাণ সময় না দিলে ঘোড়া নিয়ে দৌড়ানোটা আসলেই ঝামেলার। এ কারণে সময় আর ধৈর্য নিয়ে শিখতে হয় ঘোড়ায় চড়াটা - বলছিলেন ঢাকার হর্স রাইডিং ট্রেনিং সেন্টারের প্রধান কর্ণধার মোঃ জাহেদুল ইসলাম রাজীব।
ভারত ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দেয়া আর ঘোড়ায় চড়ার ওপর প্রশিক্ষণ নেয়ার পর সবচাইতে বুনো ঘোড়াকেও বাগ মানাতে বেগ পেতে হয় না তার।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়ায় চড়ে বাউন্ডারির ভেতর ৪০-৫০ মাইল বেগে আপনি হর্স রাইডিং ট্রেনিং সেন্টারে রাইড করতে পারবেন। কিন্তু জয়রাইড বা নতুন প্রশিক্ষণের সময় লাগাম থাকতে হবে ট্রেনারের হাতে। ঘোড়ায় চড়া থেকে শুরু করে নিয়ে গ্যালোপিং, ঘোড়ার যত্ন নেয়া, গ্রুমিং, ট্রিটমেন্ট সবকিছু নিয়েই পূর্ণ প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এখানে।
প্রতিটা ঘোড়ায় চড়বার জন্যে যা যা বর্ম বা বুট দরকার, তা সরবরাহ করা হয় অফিস থেকে। তাই প্রথমে চড়তে হয়তো কিছুটা ভয় লাগলেও আসলে শেখার ইচ্ছা থাকলে কয়দিন পরেই আপনি ছোটবেলায় সিনেমাতে দেখা রবিনহুডের মত দৌড়ে উঠতে পারবেন আশা করা যায়।
ইনফ্লুয়েন্সাররা প্রায় অনেকেই প্রতিদিন কমবেশি ঢুঁ মেরে যায় হর্স রাইডিং ট্রেনিং সেন্টারে। যদিওবা সকলের অভিজ্ঞতা একরকম নয়।
“অন্য যেকোন প্রাণীর মত ঘোড়াকেও আদর করে তাঁর সাথে বন্ডিং করে নেয়া দরকার। সেটা এমনকি স্যাডলে পা দেয়ার আগেই। এছাড়া তাঁকে নিয়ে আনন্দভ্রমণ করতে গেলে সে বেঁকে বসতে পারে” - বলছিলেন রাজীব। তিনি এবং তাঁর আরও দুজন পার্টনার আর এসিসটেন্ট মিলে আপাতত প্রশিক্ষণ আর ঘোড়া দেখাশোনার ব্যাপারে সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান করছেন।
আসছে ঈদ উল ফিতরের পর থেকেই পুরোদমে শুরু হবে নতুন ব্যাচের প্রশিক্ষণের কাজ। এমন আলাদা ধরনের শখ মেটানোর সুযোগ পেয়ে দেশের সৌখিন সমাজ ইতোমধ্যেই হর্স এরিনাতে পা রাখা শুরু করে দিয়েছে। কিছুদিনের ভেতরেই আশা করা যায় নতুন এই শখ যুবক-যুবতীদের ভেতর আরও সাড়া ফেলতে যাচ্ছে। কারণ রোমাঞ্চের তৃষ্ণা মেটানোর মত এমন সুস্থ বিনোদন যে কাউকেই করবে উদ্বেলিত।
লেখকঃ মোঃ মুহতাশিমুর রহমান ছবিঃ রাজীব, নাজিয়া ছবি কৃতজ্ঞতাঃ হর্স রাইডিং ট্রেনিং সেন্টার, ঢাকা
মন্তব্য করুন