সাভারের বিরুলিয়ার কৃষিবিদ এলাকার একটি বাড়িতে জানালার গ্রিল কেটে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (১০ জুলাই) রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ডাকাতদল নগদ তিন লাখ ত্রিশ হাজার টাকা এবং ১১ ভরি সোনার অলংকার লুট করেছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, বিরুলিয়া ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামে ডাকাতি হওয়া ওই দ্বিতীয় তলা বাড়িটির চারপাশ ঘিরে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সাভার থানাধীন বিরুলিয়া ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের ওই বাড়ির ২য় তলায় উঠতেই চোখে পড়ে বাথরুমের পাশের একটি কক্ষের জানালার গ্রিল কাটা অবস্থায় পড়ে আছে। কক্ষটির জানালা বরাবর নিচেই দেয়ালে লাগানো রয়েছে একটি কাঠের মই। বাড়ির ২য় তলার পূর্ব পাশের অপর একটি শোবার ঘরের দরজার তালা ভাঙা অবস্থায়- কক্ষের মেঝেতে এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে জামা-কাপড় এবং অন্যান্য জিনিসপত্র। পাশের অন্য রুমেরও প্রায় একই অবস্থা।
বাড়ির বাসিন্দারা জানান, গভীর রাতে মুখোশ পরা অবস্থায় ৬/৭ জনের ডাকাতদলের একটি বাহিনী মিলে অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে লুটপাট চালায়। এ সময় বাড়ির দুই পুরুষ সদস্যকে হাত বেঁধে এবং চোখ-মুখ পেঁচিয়ে রাখে।
ডাকাতি হওয়া বাড়ির চল্লিশোর্ধ্ব নারী কল্পনা বেগম জানান, কিছু একটার শব্দ পেয়ে ঘুম থেকে চোখ মেলতেই দেখি আমার মুখের ওপর কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে চিৎকার দিতে চাইলে তারা আমাকে পিস্তল দেখিয়ে বলে, ‘কোন জায়গায় কী আছে বাইর কর, নইলে মাইরা ফালামু’। এ কথা শুনে আমি ভয়ে আমার গলার, কানের সোনার জিনিসপত্র খুলে দিই। হাতে থাকা সোনার বালা খুলছিল না, তখন ওরা আমার হাত টানাটানি করছিল। পরে, আমার হাতে সাবান লাগিয়ে ওরা বালা খুলে নেয়। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, ডাকাতরা আমাকে পাশের রুমে থাকা আমার মেয়ে আর মেয়ের জামাইকে ডাকার জন্য বলে। দরজা না খোলায় ডাকাতদের দুজন মিলে লোহার রড ঢুকিয়ে দরজার তালা ভেঙে ফেলে।
ডাকাতির শিকার ওই বাড়ির মালিকের মেয়ের জামাই হামিদুর রহমান জানান, রাত আনুমানিক ২টা ৫০ থেকে ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে আমার রুমের দরজায় জোরে জোরে নক করছিল। কিছু বুঝতে না বুঝতেই দেখলাম দরজা ভেঙে ওরা রুমে ঢুকেই আমাকে চড়-থাপ্পড় দেওয়া শুরু করল। ওদের দুই-তিনজনের হাতে ছিল লোহার রড, আর একজনের হাতে ছিল পিস্তল। তখন ডাকাতদের একজন এসে আমাকে পিস্তল ঠেকিয়ে আর একজন আমার চোখ-হাত বেঁধে ফেলে।
ভুক্তভোগী হামিদুর বলেন, এ সময়ের ভেতরেই ডাকাতরা আমার স্ত্রীর হাতে-কানে সোনার অলংকার ছিল, সেগুলো ওরা খুলে নেয়। আর বলছিল, ‘কোন জায়গায় কী আছে তাড়াতাড়ি বাইর কইরা দে, নইলে একটাও বাঁচবি না’। এই বলে ওরা সবাই ছয়-সাতজন মিলে আলমারি, শো-কেস থেকে জামা-কাপড় বের করে শুধু সোনা আর টাকা খুঁজছিল। হামিদুর আরও বলেন, নগদ টাকা আর সোনা লুট করে ডাকাতরা চলে যাওয়ার সময় বাড়ির গেটের চাবি কোথায় জানতে চাইলে আমার শাশুড়ি চাবির কথা জানান। এরপর ওরা কয়েক মিনিটের মধ্যে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার সময় আমরা চিৎকার দিই। পরে আশপাশের মানুষজন এসে আমাদের উদ্ধার করে।
গভীর রাতে ডাকাতির শিকার ভুক্তভোগী বাড়ির মালিক আবুল কালাম বাবুল বলেন, ডাকাতরা ছিল ৬-৭ জন। আমার চোখ-মুখ বেঁধে ফেলার পর আমি আর কিছুই জানি না। শুধু আওয়াজের শব্দ শুনছিলাম। ওরা চলে যাওয়ার পর আমরা ৯৯৯-এ ফোন দিলে ভোর ৬টার দিকে পুলিশ আসে।
এদিকে, গভীর রাতে ওই বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির সত্যতা নিশ্চিত করে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শহীদুল ইসলাম বলেন, কৃষিবিদের ওদিকে একটি বাড়িতে এ রকম (ডাকাতি) একটি ঘটনা ঘটেছে। আমরা আসলে সবাই কোটা আন্দোলনের ইস্যুতে রাস্তায় আছি। ওখানে (ডাকাতির স্থানে) আমাদের বিকল্প একটি টিম আছে।
মন্তব্য করুন