বান্দরবানের থানচি উপজেলা হঠাৎ ম্যালেরিয়া আক্রান্ত সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুই চিকিৎসকের মধ্যে একজন ট্রেনিংয়ে থাকায় অপর একজন চিকিৎসক দিয়ে রীতিমতো চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। এ সময়ের পর্যাপ্ত চিকিৎসক দরকার বলে দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে জুন ও জুলাই দেড় মাসের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মোট ৬৪ জন ম্যালেরিয়া রোগীকে ভর্তি করে সুস্থ করেছেন। একই মাসের এনজিও সংস্থা ব্র্যাক কর্মীদের পাড়া পাড়ায় চিকিৎসাসেবা দিয়েছে ২২২ জন ম্যালেরিয়া রোগীকে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে সেবা দিতে না পেরে ইতোমধ্যে তিনজনকে বান্দরবান জেলা ও একজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে রেফার করেছে।
প্রতি বছর বর্ষাকাল শুরুতে জুন-অক্টোবর ৪ মাস বান্দরবানের থানচির দুর্গম এলাকায় দেখা দেয় ম্যালেরিয়া প্রাদুর্ভাব। নানা প্রতিকূলতায় রোগীরা পাচ্ছেন না জরুরি চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ। দুর্গম এলাকায় যাতায়াতব্যবস্থা সহজ না হওয়ায় ও মোবাইলের নেটওয়ার্ক না থাকায় প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এই এলাকাগুলো। তবে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন রোগী স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভর্তি করা হয়েছেন।
চিকিৎসকদের মতে, বর্ষায় মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে পারে । এদিকে থানচি উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের মোট ২৭৭টি গ্রামের মধ্যে ৬৬টি গ্রামকে ম্যালেরিয়া রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে।
রোববার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ ও নারী দুটি ওয়ার্ডে অন্যান্য রোগীদের সঙ্গে ম্যালেরিয়া রোগী ৯ জন দেখা মিলছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিনিয়র নার্স লালসাংপার বম বলেন,পাহাড়ে বেশিরভাগ মানুষ ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে সাধারণ ভাইরাস জ্বর ভেবে অনেকে বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছে। আবার কেউ কেউ দেবতা পূজা পর্যন্ত দিয়ে থাকে। তবে এ বছরে কোনো রোগীকে চিকিৎসা অভাবে মরতে হয়নি। যারা হাসপাতালের ভর্তি হয়েছে তাদের সুস্থ করে তোলার আমাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব।
আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ২০২৩ সাল থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ছাড়াও আবাসিক চিকিৎসক ডা. মেহনাজ ফাতেমা তুলি ও আমি দুজন দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। চলতি মাসে ডা. তুলিকে ও ট্রেনিংয়ে নিয়ে গেছে, এখন আমাকে একাই ২৪ ঘণ্টা ডিউটি দিতে হয়।
কি করে সম্ভব প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া আমাদের কিছু করার নেই। আগামী অক্টোবর মাস পর্যন্ত বোধ হয় একা সামলাইতে হবে।
যোগাযোগ করা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, আমি বর্তমানে চট্টগ্রামে ট্রেনিংয়ে আছি এক সপ্তাহ সময় লাগবে। গত জুন হতে উপজেলা গ্রামে গ্রামে ম্যালেরিয়া প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আবাসিক চিকিৎসক মাত্র দুজন তার মধ্যে একজন ট্রেনিংয়ে। চিকিৎসক সংকটের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বার বার জানিয়ে দেওয়ার পর ও আমাদেরকে চিকিৎসক পোস্টিং দিচ্ছে না। চিকিৎসক সমস্যা কারণে কোনো একজন ম্যালেরিয়া রোগী যদি মারা যায় তাহলে আমরা দায়ী থাকব না।
তিনি বলেন, আমি রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে ভ্যাকসিন টিকা পর্যাপ্ত পরিমাণ চাহিদাপত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠালেও এখনো ভ্যাকসিন টিকা দিচ্ছে না। আমাদের কর্মীরা পাহাড়ে হেঁটে চিকিৎসা দিতে গেলে সাপের কামড় দিতে পারে পাহাড়ে প্রচুর সাপ রয়েছে জরুরিভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োজন। এ ছাড়াও বান্দরবান জেলা হাসপাতালে আমাদের একজন চিকিৎসক প্রেষণে রয়েছে তাকে পুনরায় পাঠানো জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট এ সময়ের দাবি জানাচ্ছি।
যোগাযোগ করা হলে বান্দরবানের সিভিল সার্জেন্ট ডা. মো. মোহাবুবুর রহমান বলেন, থানচি উপজেলার চিকিৎসক সংকট কথা জেলার আইনশৃঙ্খলা সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে কিন্তু এখনো পর্যন্ত চিকিৎসক পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। থানচি থেকে প্রেষণে একজন চিকিৎসক রয়েছে তিনি বদলি হয়ে গেছে। প্রেষণে অপর একজনের আছে সেটি আমার জানা নেই খোঁজ নিয়ে জেলা সদরে প্রেষণে থাকলে শিগগিরই থানচি উপজেলা পাঠানো হবে। সাপের কামড়ে ভ্যাকসিন ও শিগগিরই পাঠানো হবে।
উল্লেখ্য, গত বছরে ১১ জুলাই থানচিতে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসক সংকটের কারণে তিনজন শিশু প্রাণ হারায়।
মন্তব্য করুন