ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়ার রহমান বিশ্বাসকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে আহত ওই নেতা ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তার অভিযোগ, হত্যার উদ্দেশ্যে দলের কয়েকজন নেতার নির্দেশে তাদের অনুসারীরা এই হামলা করেছে। পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে একজন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে চান। আরেকজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার দাবি করেছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
স্থানীয়রা জানান, লাঙ্গলবাঁধ পুলিশ ক্যাম্প থেকে গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মোটরসাইকেলে ফিরছিলেন মতিয়ার রহমান। পথে বন্দেখালী বাজার মোড়ে ওত পেতে থাকা দলীয় প্রতিপক্ষরা গাছ ফেলে তার মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। এরপর তাকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর জখম করে ফেলে রাখে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে প্রথমে ঝিনাইদহ সদর পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি ঢাকার শ্যামলীতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় তার মোটরসাইকেল চালক জাহাঙ্গীর ও আরেক মোটরসাইকেলে থাকা একটি স্কুলের অফিস সহকারী মাহফুজ এবং চৌকিদার ইমরান আহত হন। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আহত মতিয়ারকে দেখতে ও চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে গতকাল মঙ্গলবার হাসপাতালে যান ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নজরুল ইসলাম দুলাল বিশ্বাস ও সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি পারভীন জামান কল্পনা।
মতিয়ারের ছেলে ও শৈলকুপা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দিনার বিশ্বাস বলেন, আমি জানতে পেরেছি ঝিনাইদহ-১ আসনের এমপি নায়েব আলী জোয়ার্দার, শৈলকুপা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা আরিফ রেজা মন্নু, পৌর মেয়র কাজী আশরাফুল আজম ও ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক শিকদার বৈঠক করে তাদের অনুসারীদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছে। হামলার পর আবার বৈঠক করে তারা হামলাকারীদের বলেছে মেরে ফেলতে পারেনি কেন, বেঁচে গেল কীভাবে। মতিয়ার না থাকলে ইউপি চেয়ারম্যান হবেন মোস্তাক শিকদার। আর শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হবেন কাজী আশরাফুল আজম।
তিনি বলেন, হুসাইন শিকদার, চাঁদ আলী মেম্বর, সোহান, বাবুল, সাইফুল, আল আমিন, লাল্টু, মিনার, ইবাদত খান, তুষার খান, জাকির খান, আবু সাঈদ, মোমরেজ খান, শরিফুল চান, সাইদুল, হাজ্জাজ শিকদার, গফুর মণ্ডল, জিকুসহ অন্তত ৫০ জন এ হামলায় অংশ নিয়েছে।
শৈলকুপা উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি আসাদুজ্জামান ভূট্টো বলেন, হামলাকারীরা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের ধরতে প্রশাসনের তৎপরতা নেই। আওয়ামী লীগের শাসনামলে দলের উপজেলা কমিটির সভাপতিকে হত্যার চেষ্টা কষ্টদায়ক। এ হামলার পরিকল্পনাকারীরা কিছুদিন আগে শৈলকুপা থানায় হামলা চালায়।
শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এম আব্দুল হাকিম বলেন, সারা শৈলকুপায় গত সংসদ নির্বাচনের পর থেকে একের পর এক ত্যাগী আওয়ামী লীগের কর্মীদের ওপর হামলা হচ্ছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করছি। ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি সফিকুল ইসলাম অপু কালবেলাকে বলেন, হামলার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একজন জনপ্রতিনিধিকে হত্যার উদ্দেশ্যে মেরে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। উপনির্বাচনে নতুন এমপি শপথ নেওয়ার পর থেকে শৈলকুপার রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুবই খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে। যখন দেশে সংকটসময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে সেসময় স্থানীয় নেতারা সংকট নিরসনে মাঠে না নেমে নিজ দলের নেতার ওপর অমানবিক হামলা করে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে তুলছে। এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেন তিনি।
জানতে চাইলে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, দলীয় প্রতিপক্ষের হামলায় আওয়ামী লীগ নেতা মতিয়ার রহমান গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকায় এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
মন্তব্য করুন