সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:৪৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

যানজট সরিয়ে ভোগান্তি দূর করেন নবরু

যানজট সরিয়ে ভোগান্তি দূর করা নবরু। ছবি : কালবেলা
যানজট সরিয়ে ভোগান্তি দূর করা নবরু। ছবি : কালবেলা

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মীরগঞ্জের বাসিন্দা রিকশাচালক বাবা চান মিয়ার এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে নবরু বড়। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন সেই কবে কিন্তু নবরুকে বিয়ে দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন চান মিয়া। ছেলে প্রতিবন্ধী হলেও বংশ রক্ষা করতে হবে বলে তাই হয়তো এত তোড়জোড়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ছেলের বউ হিসেবে জুটিয়েছিলেন এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীকে।

কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না নবরুর। ভেঙে যায় সংসার। তাই ভবিষ্যতে কী হবে- এই ভেবে চিন্তার যেন কোনো অন্ত নেই তার বাবা-মার।

একে তো বউ নেই, তার উপর শহর বাড়ি থেকে কিল দু-এক দূরে। বাড়িতে থাকতে বললেও বাপ-মার কোনো বারণ মানেন না নবরু। সেই সাতসকালে ঘুম থেকে ওঠেন। কোনো কিছু মুখে না দিয়েই পোশাক পরা শুরু করেন। কোনো দিন পুলিশ, আবার কোনো দিন আনসার সদস্যের পোশাক পরেন নবরু। ভুলে যান না মাথায় ক্যাপ এবং পকেটে নেমপ্লেট লাগাতেও। মুখে ফুঁ দেওয়ার বাঁশি ও দেড় ফুট সাইজের একটা লাঠি হাতে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন তিনি। যেন মহাব্যস্ত এক মানুষ।

এবার শহরে যাবে বলে বাড়ির পাশের সরু পুলের ওপর দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। মোটরসাইকেল, ভ্যান কিংবা অটোরিকশা পথ দিয়ে যেটাই যাক তাদের দাঁড়াতে হাত তুলে ইশারা দেন। প্রতিবন্ধী বলে অবজ্ঞা করে না কেউ। তুলে নেয় তাতে। নামিয়ে দেয় পৌর শহরের মীরগঞ্জ বাজারে। নামার পরে সোজা চলে যায় এ্যানি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে। দুটি পরোটার সঙ্গে ডাল ও ডিমের মামলেট দিয়ে সকালের নাশতাটা সেরে নেন নবরু। বিলের চিন্তা করে না সে। কারণ হোটেল মালিক এরশাদ প্রামাণিক আছে তো! তিনি জানেন হোটেল মালিক তার প্রতি বড়ই সদয়।

নাশতা সেরে আবার পরনের সবকিছু ঠিকঠাক করে নেন নবরু। এরপর হোটেলের সামনে থাকা মোটরসাইকেলের গ্লাসে নিজেকে বারবার পরখ করে নেন সে। চোখের সানগ্লাস আর মাথার ক্যাপটা ঠিক আছে কি না দেখে নেন বারবার। এভাবে আয়নায় নিজের চেহেরাটা বেশ কয়েকবার দেখে নিয়ে ছোটে গন্তব্যের দিকে। উপজেলা সদরের এ অফিস- ও অফিস, এ দোকান- সে দোকান ঘোরাঘুরি করতে করতে দুপুর গড়িয়ে হয় বিকেল। এরপর বাড়ির পথ ধরেন তিনি।

পথে বাহিরগোলা এবং মীরগঞ্জ বাজারের প্রধান রাস্তায় এলোপাতাড়িভাবে রাখা পরিবহনে সৃষ্ট যানজটে নাকাল শহরবাসির কষ্ট দেখে মন মানে না নবরুর। তাইতো এ যানজট দূর করতে নেমে পড়েন তিনি। হাতে থাকা লাঠি ও মুখে বাঁশি বাজিয়ে সরিয়ে দেয় রিকশা, অটোরিকশাসহ নানা পরিবহন। ঠিক যেন অনেকটা ট্রাফিক পুলিশের মতো দায়িত্ব পালন করেন নবরু। এতে সাড়াও দেয় কেউ কেউ। কেউবা আবার শুনিয়ে দেয় তুলে আছাড় দেওয়ার মতো কথাও। চালকদের মুখে এমন অপ্রত্যাশিত কথা শুনে কখনও খানিকটা চুপসে যান নবরু। পরক্ষণে নিজেকে সামলে নেন তিনি। পরে আবার মন দেয় যানবাহন সরানোর কাজে। দায়িত্ব পালনকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি দেখলেই দেয় লম্বা স্যালুট।

আবার কখনো কালো স্যুট ও সাদা শার্টের সঙ্গে লাল টাইও পরে নবরু। তবে এ পোশাকে যেদিন বের হয়, সেদিন আর যানবাহন সরানোর কাজ করে না সে। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ঘুরে ঘুরে কাটিয়ে দেন দিন। পায় দুই-চার-পাঁচ টাকা করে। প্যান্টের পকেটে থাকা মানিব্যাগে ভরে নেন ওই টাকা। বেলা শেষে ফেরে মীরগঞ্জে। বাজারে ঘুরতে ঘুরতে রাত বাজে নয়টা। হঠাৎ মোবাইল ফোন বেজে ওঠে নবরুর। রিসিভ করেন ফোন। ওপাশ থেকে শোনা যায়, নবরু তুই কই? নবরু জবাব দেন, ‘আব্বা, মুই মীরগঞ্জত। মোক আসি নিয়া যা’।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চুলা তৈরির সময় মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেল ৭১ রাউন্ড গুলি

বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনা

যমুনা ব্যাংকে চাকরি, বয়স ৪৫ হলেও আবেদন

রাকসু নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু

অবশেষে সুলাইমানিয়ার আকাশপথ খুলে দিল তুরস্ক 

বাস কাউন্টারে আধিপত্য নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১৬

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

আজ যেমন থাকবে ঢাকার আবহাওয়া

ঐতিহাসিক আল-রাবিয়া মসজিদ আবার খুলে দেওয়া হয়েছে

চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুগ্রুপের সংঘর্ষে প্রাণ গেল ২ ভাইয়ের

১০

চবির দুই হল সংসদের ফল পুনর্গণনার ঘোষণা

১১

টিভিতে আজকের খেলা

১২

ঢাকার যেসব এলাকায় আজ মার্কেট বন্ধ 

১৩

চট্টগ্রামে ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণে ভবনে আগুন

১৪

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল আজ, জানা যাবে যেভাবে

১৫

১৬ অক্টোবর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৬

ঢাবির শোক দিবসে জগন্নাথ হল স্মৃতিসৌধে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বালন

১৭

চাকসুতে হল সংসদে বিজয়ী সাদিক কায়েমের ভাই আবু আয়াজ

১৮

চাকসুতে ২৬ পদের ২৪টিতেই শিবিরের জয়

১৯

চাকসুতে ভিপি ও জিএস পদে শিবির, এজিএস পদে ছাত্রদল জয়ী

২০
X