নূর হোসেন মামুন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২৪, ১১:০১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

চট্টগ্রামে তারকা হোটেল ব্যবসায় কয়েক কোটি টাকার লোকসান!

রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউ। ছবি : কালবেলা
রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউ। ছবি : কালবেলা

কোটা সংস্কার আন্দোলন ও সরকারের জারি করা কারফিউর কারণে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে দেশের বিলাসবহুল পাঁচতারকা হোটেল ও তারকা মানের হোটেল শিল্পেও। প্রায় অতিথিশূন্য হয়ে পড়েছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। তারকা হোটেলে আসছেন না বিদেশি ক্রেতারা, কমে গেছে দেশি পর্যটক আসার পরিমাণও। একের পর এক বাতিল হচ্ছে বিদেশি অতিথিদের বুকিং। পাশাপাশি হচ্ছে না দেশীয় বিভিন্ন ইভেন্ট ও অনুষ্ঠান; বরং বাতিল হচ্ছে আগে করা বুকিং।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রামে এই খাতে ক্ষতি ছাড়িয়েছে কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা। ব্যবসা প্রায় বন্ধ থাকায় সরকারও হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। উদ্ভূত পরিস্থিতি যত দীর্ঘায়িত হবে, এ খাতের অবস্থাও ততই বেহাল হবে। সব মিলিয়ে উদ্বিগ্ন এ খাতের উদ্যোক্তারা।

বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএইচএ) তথ্য বলছে, তারকা হোটেলগুলোতে অতিথি কমেছে প্রায় ৯০ শতাংশ। আর রুম বুকিং নেমে এসেছে ১০ শতাংশে। চট্টগ্রামসহ সারা দেশে বিলাসবহুল হোটেলগুলোর চলতি জুলাই মাসের বাকি দিনগুলো ও আগস্টের কিছু দিনের জন্য রুম বুকিং বাতিল করেছেন অতিথিরা। এমনকি এসব হোটেলে সেমিনার ও ওয়ার্কশপের মতো করপোরেট ইভেন্টগুলোও এখন বন্ধ আছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইন্টারনেট বন্ধের কারণে প্রায় এক সপ্তাহ বিদেশি অতিথিরা যোগাযোগ করতে পারেননি। এমনকি তারা হোটেল বুকিং, বাতিল কিছুই করতে পারেননি। এ ছাড়া বেশ কিছু দেশ বাংলাদেশে ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে। পাশাপাশি ব্যবসায়িক সফরও স্থগিত করে। এতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছে হোটেল কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশে পর্যটন করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় পাঁচতারকা হোটেল রয়েছে ২০টি। চার তারকা মানের হোটেল রয়েছে চারটি ও তিনতারকা হোটেল রয়েছে ২২টি। এ ছাড়া প্রায় দুই হাজার বিলাসবহুল হোটেল রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন প্রায় এক লাখ মানুষ।

বিআইএইচএর সভাপতি এবং চট্টগ্রামের হোটেল আগ্রাবাদের মালিক হাকিম আলী জানান, করোনাকালের মতো ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের তারকা হোটেল শিল্প। বর্তমানে তারকা হোটেলগুলো প্রায় অতিথিশূন্য হয়ে পড়েছে। রুম বুকিং ১০-১৫ শতাংশে নেমে গেছে। অথচ স্বাভাবিক অবস্থায় এ সময়ে হোটেলগুলোর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ অতিথি পূর্ণ থাকে। বিভিন্ন তারকা হোটেলে বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশি কিছু অতিথি দীর্ঘ মেয়াদে অবস্থান করেন। তারাও আতঙ্কে আছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে হোটেলগুলো একেবারে অতিথিশূন্য হয়ে পড়বে। তার হোটেলে রুম ভাড়া ও বুকিং বাতিলের কারণে প্রায় একা। কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এটি আরও বাড়বে।

তিনি বলেন, সাধারণত এ সময়ে হোটেল বুকিং সন্তোষজনক থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতি করোনাকালকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। আমরা এখনো ব্যবসায়িক ক্ষতির হিসাব করতে পারিনি। তবে এতদিনে এই ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে আশঙ্কা করছি।

বন্দর নগরী চট্টগ্রামের একমাত্র পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউ। প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের ব্যবস্থাপক ফয়সাল কবির কালবেলাকে বলেন, বর্তমানে আমাদেরও বুকিং হচ্ছে মাত্র ১০ শতাংশ। ৯০ শতাংশ অতিথি আসা আমাদের কমে গেছে। এই মাসে ব্যাংকের আন্তর্জাতিক একটি অনুষ্ঠান, কর্পোরেট প্রোগ্রামসহ বড় বড় বেশ কিছু ইভেন্টের বুকিং ছিল। তার মধ্যে ৯৮ শতাংশ বুকিংই বাতিল হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রতিমাসে আমাদের ১২ কোটি টাকার মত লেনদেন হয়। কিন্তু এই মাসে তা হয়েছে মাত্র ৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ আমাদের লোকসান হয়েছে প্রায় ৭ কোটি টাকার মত।

চট্টগ্রামের চার তারকা হোটেল ওয়েল পার্ক রেসিডেন্সের মালিক সৈয়দ নজরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, শুধু হোটেল মালিকরাই নয়, কোটা সংস্কারের এই আন্দোলনে সবাই আক্রান্ত হয়েছে। আমাদের হোটেলের বুকিং এই পর্যন্ত প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে। আর বিদেশি অতিথির আসার পরিমাণ প্রায় ৯০ শতাংশ কমে গেছে।

চট্টগ্রামের চার তারকা হোটেল দ্য পেনিনসুলা চিটাগং ও কক্সবাজারের সায়মন বিচ রিসোর্টের মালিক এবং সংসদ সদস্য মাহবুব রহমান রুহেল কালবেলাকে বলেন, সহিংসতার কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারে আমাদের হোটেলগুলো থেকে অনেকেই চলে গেছে। অনলাইনে ক্রেডিট কার্ড কাজ করছে না। কেউ অনলাইনে বুকিং করতে পারছে না। আবার অনেকে বুকিং দিয়েও আসতে পারেনি, এমন অনেক কাস্টমার আমরা মিস করেছি। এখনও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। এই সংকট আমাদের জন্য অনেক বড় লোকসানের কারণ। সবমিলিয়ে আমাদের দুই হোটেলে কয়েক কোটি টাকার লোকসান হয়েছে।

অন্যদিকে হোটেল গোল্ডেন ইন’র জেনারেল ম্যানেজার রুপক চৌধুরী বলেন, কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলন ঘিরে কারফিউর কারণে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় অচল। এ কারণে অতিথিরাও আসছেন না। হোটেলের সব রুম ফাঁকা পড়ে আছে। এ ছাড়া নেই কোনো অনুষ্ঠান। ফলে খাবারও বিক্রি হচ্ছে না।

চলমান পরিস্থিতিতে তারকা হোটেলগুলোর ব্যবসায়িক ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রামের একটি পাঁচতারকা হোটেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, হোটেলে প্রতি দিন কোটি টাকার ওপর ব্যবসা হয়। কিন্তু গেল কয়েক দিনে এক লাখ টাকারও ব্যবসা হয়নি। এখন কেবল বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিদেশি কিছু কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ হোটেলে অবস্থান করছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হঠাৎ মিষ্টি খেতে মন চায়, এটা কীসের ইঙ্গিত?

এশিয়া কাপ মিসের পর জাতীয় দলে ফেরার আশা ছেড়েছেন শামি

যথাযথ প্রক্রিয়ায় পুশ ইন করা হচ্ছে, দাবি বিএসএফ ডিজির 

সিজারের ৬ মাস পর পেট থেকে বের করা হলো গজ

৫ দিন কোথায় কেমন বৃষ্টি থাকবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

জাকসু নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণা করল ছাত্রদল

পাকিস্তানের পাঞ্জাবে ভয়াবহ বন্যায় মৃত্যু ১৫

১৭ কোটি টাকার জীবনরক্ষাকারী ওষুধ এনে প্রশংসায় ভাসছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক 

গয়েশ্বরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলার রায় ৪ সেপ্টেম্বর

আজ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা  / ইসির রোডম্যাপে যত পরিকল্পনা   

১০

প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ

১১

‘ভারতে পরমাণু হামলা চালাও, ট্রাম্পকে হত্যা করো’ লেখা বন্দুক দিয়ে হামলা

১২

এসএসসি পাসেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকরি

১৩

ইউআইইউতে রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সপ্তাহ অনুষ্ঠিত

১৪

শহীদ কাদরী: নগরসভ্যতার অন্তরালে এক কবির অনন্ত যাত্রা

১৫

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ১০ দফা ইশতেহার ঘোষণা ছাত্রদলের

১৬

ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি রিসার্চ সোসাইটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু

১৭

নববধূর আত্মীয়ের হাতে বরের মৃত্যু, আনন্দ প্রকাশেই ছুড়েছিলেন গুলি

১৮

জাতীয় পর্যায়ে কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম বাউফলের বুশরা

১৯

১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বুয়েটের সব পরীক্ষা স্থগিত

২০
X