রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। আর গুলিবিদ্ধ হয়ে কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন।
তাদের মধ্যে ৪০ জনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত সবুজ বেসরকারি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ শংকর কুমার বিশ্বাস জানান, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৪০ জনের মধ্যে ৩৭ জন এসেছেন রাজশাহী মহানগর থেকে। আর তিনজন এসেছেন জেলার গোদাগাড়ী উপজেলা থেকে। ভর্তি হওয়া ৪০ জনের মধ্যে অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ বলে জানান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার (৫ আগস্ট) সকাল ১১টার দিকে বিক্ষোভকারীরা হাতে হাতে লাঠি নিয়ে নগরীর তালাইমারী মোড়ে জড়ো হন। এরপর দুপুর ১২টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে সাহেববাজারের দিকে রওনা হন।
আর আলুপট্টি মোড়ে সশস্ত্র অবস্থায় অপেক্ষা করছিলেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি সাগরপাড়া মোড়ে পৌঁছালে তারা আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেন। মিছিল থেকে ককটেল ছুড়ে মারা হয়।
এ সময় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা কিছুটা পিছু হটেন। এরপর পুলিশ এলে তারা আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণ করেন। এ সময় বেশ কিছু ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। মুহুর্মুহু গুলি ছুড়েন আওয়ামী ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পুলিশও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে মারে। এতে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এ সময় বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সবুজ পালিয়ে শাহ মখদুম কলেজের পাশে একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ওই বাড়িতে সবুজকে হত্যা করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। সবুজের বাড়ি নগরীর রানীনগর এলাকায়।
এদিকে সকাল ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা গোদাগাড়ী উপজেলা সদরে এলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। তখন আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে গিয়ে পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশ ডাইংপাড়া মোড় ছেড়ে থানার দিকে চলে যায়। তখন আন্দোলনকারীরা ডাইংপাড়া মোড়ে ঢুকে যান।
এ সময় আন্দোলনকারীরা ডাইংপাড়া মোড়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের দোকান ভাঙচুর করেন। এরপর তারা উপজেলা প্রেস ক্লাবে গিয়ে ভাঙচুর চালান। সেখানে শহিদুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক সাংবাদিককেও মারধর করে জখম করা হয়। পরে দুপুরে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি হুমায়ুন কবীর শহরে সংঘর্ষে হতাহতের সংখ্যা জানাতে পারেননি।
মন্তব্য করুন