আওয়ামী সরকার পতনকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি, দখল এবং হামলা-লুটপাটে না জড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে বিএনপি। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের দায় বিএনপি নিবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কিন্তু হাইকমান্ডের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেন বরিশালের হিজলা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব দুলাল সরদার।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর বিএনপি পরিবারের কাছে চাঁদাদাবি, হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এমনকি প্রেস ক্লাবে তালা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী উপজেলার কাউরিয়া বাজারে মোটরযান মেকানিক পলাশ জানান, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগের পরদিন অর্থাৎ ৬ আগস্ট সকালে লোকজন নিয়ে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যান উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব দুলাল সরদার। এ সময় পাশের দোকানে নাস্তা করতে গিয়েছিলেন পলাশ।
তিনি বলেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই স্বেচ্ছাসেবক দলের এই নেতা লাথি দিয়ে দোকানের দরজা ভেঙে ফেলেন। দোকানের কর্মচারী বাধা দিলে তাকেও হুমকি দেয়। একপর্যায় দোকানে তালা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন স্বেচ্ছাসেবক দলের এই নেতা। যাওয়ার সময় বলে যান, তার অনুমতি ছাড়া যেন দোকান খোলা না হয়। খবর পেয়ে বিএনপি কয়েকজন নেতাকর্মী এসে দোকান খুলে দেন।
অপরদিকে, হিজলা উপজেলা প্রেস ক্লাব দখলের চেষ্টাও করেছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব দুলাল সরদার। এজন্য ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে প্রেস ক্লাবের গেটে দুই দফা তালাও ঝুলিয়ে দেন তিনি।
হিজলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহাগ সরদার জানান, তিনি (দুলাল) প্রেস ক্লাবে নতুন নেতৃত্ব চায়। পূর্বে রিপোর্টাররা না কি এক ঘেয়ে সাংবাদিকতা করেছে। আরও নানা অভিযোগ তার। এ জন্য ক্লাবে দুবার তালা দিয়েছে।
এ দিকে সরকার পতনের পর পরই পূর্ব বিরোধের জেরে উপজেলার গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের মাসকাটা গ্রামে বিএনপি অনুসারী হাওলাদার পরিবারের সদস্যদের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন দুলাল সরদার। ওই পরিবারের সদস্য সুমন হাওলাদার অভিযোগ করেন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব দুলাল সরদার আওয়ামী শাসনামলে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তখনকার সময় প্রভাব খাটিয়ে একটি বাল্যবিয়েকে কেন্দ্র করে আমাদের কাছে চাঁদাদাবি করেন দুলাল। এ ঘটনায় মামলাও করেন। সেই বিরোধের জেরে সরকার পতনের পরদিনই বাড়িতে গিয়ে চাঁদা দাবি করেন। আমাকে এলাকা ছাড়া করার হুমকিও দিয়েছে। যিনি একসময় ছাত্রলীগ করতেন তিনি কীভাবে স্বেচ্ছাসেবক দলে পদ পেয়েছেন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব দুলাল সরদার। তিনি বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের রিপন আমার বাল্যবন্ধু। তার সঙ্গে একটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আর প্রেস ক্লাব আমি দখল নিতে যাইনি। সাংবাদিকদের নিজেদের মধ্যে ভুলবোঝাবুঝির কারণে এটা হয়েছে। এখন পুরো দায় আমার ওপর চাপানো হচ্ছে। তিনি স্থানীয় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার বলে পাল্টা অভিযোগ তোলেন।
মন্তব্য করুন