হঠাৎ বন্যায় দিশেহারা ফেনীর সবকটি উপজেলার মানুষ। শুরুর দিকে পরশুরাম, ফুলগাজী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি খারাপ হয়। গতকাল থেকে ওসব উপজেলায় বন্যার পানি কিছুটা কমতে শুরু করে। তবে জেলার দাগনভূঞা ও সোনাগাজীতে বন্যার পানি বাড়ছে। গতকাল সারাদিনে বন্যার পানি কিছুটা কমলেও সোমবার (২৬ আগস্ট) ভোর থেকে টানা বৃষ্টি হওয়ায় আবার পানি বেড়েছে।
সোমবার সকাল থেকে দাগনভূঞা উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা সদর, আতাতুর্ক স্কুল মার্কেট, মাতুভূঞা, বেকের বাজার, আমিরগাঁও বাজার, সিলোনীয়া বাজার এলাকার প্রায় প্রতিটি মোড়ে ত্রাণের গাড়ি দাঁড়ানো। সেখানে স্বেচ্ছাসেবকরাও আছেন। সকাল থেকেই এসব ত্রাণের গাড়ির সামনে মানুষের ভিড়।
তবে সাধারণ মানুষের অভিযোগ, উপজেলার সব জায়গায় ঠিকমতো ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। বিশেষ করে যেসব এলাকায় পানি বেশি সেসব জায়গায় এখনও ঠিকমতো ত্রাণ পৌঁছায়নি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দাগনভূঞায় যেসব ত্রাণ আসছে, তা বিভিন্ন চ্যানেলে আসছে। স্থানীয় প্রভাবশালী কিংবা রাজনীতিবিদ তাদের মতো করে তাদের চ্যানেলের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করছেন। এর ফলে মূল সড়কের কাছাকাছি লোকজন বেশি ত্রাণ পাচ্ছেন। অনেক ত্রাণ এলেও গ্রাম পর্যায়ে যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে পরিবহন সমস্যাকে দায়ী করছেন অনেকেই। তারা বলছেন, নৌকা না থাকায় হেঁটে হেঁটে বুকসমান পানিতে অনেক এলাকায় যাওয়া যাচ্ছে না। আবার ট্রাক্টর ছাড়া কোনো পরিবহনও নেই। ট্রাক্টরের স্বল্পতা থাকায় অনেকেই একবার ত্রাণের জন্য বাজারের দিকে এলে ফেরত যেতে পারছেন না। অনেকে বুক সমান পানি দিয়ে হেঁটে হেঁটে এলাকায় যাচ্ছেন।
স্থানীয়রা আরও বলছেন, ইয়াকুবপুর, সিন্দুরপর, রাজাপুরসহ কয়েকটি ইউনিয়নে পর্যাপ্ত ত্রাণ যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের উদ্যোগে কিছু ত্রাণের প্যাকেট গেলেও তা অপ্রতুল।
জায়লস্কর ইউনিয়নের দক্ষিণ জায়লস্করের বাসিন্দা মো. লোকমান বলেন, ‘আংগো এমুই ত্রাণ আইয়ের না। বাজারে যাই যেতে হারের কিছু আনের। যেতে বুক হানি ভাঙ্গি যাইতো হারের না, হেতে না খাই রইছে (আমাদের এদিকে ত্রাণ আসছে না। যে বাজারে যেতে পারছে, সে কিছু ত্রাণ নিয়ে আসতে পারছে। আর যে বুক পরিমাণ পানি পাড়ি দিয়ে যেতে পারছে না, সে না খেয়ে আছে)।’
ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা সাদিক হোসেন বলেন, ‘গত চাইর-হাচ দিনে একবার ত্রাণের ইগগা প্যাকেট হাইছিলাম। হেই প্যাকেটও শেষ অই গেছে কাইল্যা। এমুই ত্রাণের প্যাকেটও ঠিকমতো আইয়ের না। ঘরিত্তে মানস হাচগা। হেগুনেরে লই কই যামু, কিয়া খামু, বুজিয়ের না (গত চার-পাঁচ দিনে একবার ত্রাণের একটা প্যাকেট পেয়েছিলাম। সেই প্যাকেটও গতকাল শেষ হয়ে গেছে। এদিকে ত্রাণের প্যাকেট ঠিকমতো আসছে না। ঘরের ভেতর পাঁচজন মানুষ। তাদের নিয়ে কোথায় যাব, কি খাব, বুঝতেছি না)’।
দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিবেদিতা চাকমা কালবেলাকে বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে কোন কোন এলাকায় কারা ত্রাণ পাচ্ছে না। সে অনুযায়ী আমরা ত্রাণ পাঠাচ্ছি। এছাড়া সেনাবাহিনীও ওসব এলাকায় ত্রাণ পাঠাচ্ছে। তারপরও যদি কোনো এলাকায় ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ আসে, আমাদের জানালে সেখানে ত্রাণ পাঠানো হবে।
মন্তব্য করুন