শরীয়তপুর সদর উপজেলায় পঞ্চম শ্রেণির এক শিশুকে অপহরণ করে তার পরিবারের কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। শিশুর পরিবার মুক্তিপণ না দিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানালে অপহৃত শিশুটিকে হত্যা করে মাটিতে চাপা দিয়ে রাখে অপহরণকারীরা।
নিহত শিশু হৃদয় খান নিবিড় (১১) সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের খিলগাঁও গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী মনির খান ও নিপা আক্তার দম্পতির একমাত্র ছেলে। নিবিড় স্থানীয় শিশু কানন কিন্ডারগার্টেনের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।
আরও পড়ুন : চাঞ্চল্যকর শিশু মনিরা হত্যা মামলায় চারজনের যাবজ্জীবন
এ ঘটনার মাস্টারমাইন্ড সিয়ামসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধ স্বীকার করে তারা। অপহরণকারীরা নিবিড়দের বাসায় ভাড়া থাকত বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) সকাল ৬টার দিকে নিবিড়ের মাটিচাপা দেওয়া মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে সোমবার (৩১ জুলাই) বিকেলে অপহরণের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, প্রতিদিনের মতো সোমবার বিকেলে স্কুল থেকে এসে খাবার খেয়ে খেলার জন্য বাড়ি থেকে বের হয় নিবিড়। এরপর তাকে আর খুঁজে পায়নি পরিবার। সন্ধ্যাবেলা নিবিড়ের মা নিপা আক্তারের মোবাইলে কল করে অপহরণকারীরা। এ সময় ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করলে নিবিড়ের পরিবার থানা-পুলিশকে জানায়।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অপহরণকারীদের চিহ্নিত করে ৬ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে ঘটনার ১২ ঘণ্টা পরে নিবিড়ের বাড়ির ৫০০ মিটার দূরে পরিত্যক্ত জমিতে (এমকেবি ইটভাটা সংলগ্ন) মাটিচাপা দেওয়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিবিড়ের মামা ইকবাল কালবেলাকে বলেন, ওরা আমাদের নিবিড়কে গুম করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। সন্তান হারানোর বেদনায় আমার বোন পাগল প্রায়। আমরা হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, ফাঁসি চাই। আর যদি এর সঙ্গে কোনো রাঘববোয়ালদের হাত থাকে তাদেরও তদন্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি করছি।
আরও পড়ুন : শিশু ভাগ্নিকে হত্যা করে পানির ট্যাঙ্কে ফেলে রাখে সৎমামা
এ ঘটনায় পালং মডেল থানার ওসি আক্তার হোসেন কালবেলাকে বলেন, আসামিদের দেওয়া তথ্যমতে, নিবিড়ের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ওই ঘটনায় পালং মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করা হয়েছে। লাশ উদ্ধারের পরে পেনাল কোডের ৩০২, ২০১ ও ৩৪ ধারা সংযোজনের আবেদন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে শরীয়তপুর পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম কালবেলাকে বলেন, অপহরণের এ সংবাদ পুলিশ পাওয়া মাত্র বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস), ( প্রশাসন ও অর্থ), পালং মডেল থানার ওসি ও ডিবি পুলিশের সমন্বয়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় কার্যক্রম শুরু করে ৬ ঘণ্টার মধ্যে অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করে ১২ ঘণ্টার মধ্যে শিশু নিবিড়ের মরদেহ উদ্ধার করি।
ঘটনার মাস্টার মাইন্ড সিয়ামসহ, শাকিল গাজী ও তুহিন গাজীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করে মূল রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।
মন্তব্য করুন