কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসক সজীব কাজীর ওপর হামলার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। আহত সজীব মামলাটি করেছেন। হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনায় দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে শাটডাউন কর্মসূচি। নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন দাবিতে মানববন্ধন সমাবেশ করেছেন চিকিৎসক, নার্স, ইন্টার্ন ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা কাজে না ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে তারা এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় প্রাইভেট চেম্বারও বন্ধ রাখার আহ্বান জানান বক্তারা। পরে শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল পুলিশ সুপার কার্যালয়ে গিয়ে বিক্ষোভ করে।
অন্যদিকে টানা কর্মবিরতির ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়ে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম। শাটডাউন কর্মসূচির ফলে সেবা না পেয়ে হাসপাতাল ছাড়ছেন রোগীরা।
রুখসানা আক্তার নামে এক গৃহবধূ জানান, নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছি। মঙ্গলবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোনো ডাক্তার আসেনি। আমার শিশুর অবস্থাও অবনতির দিকে তাই প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।
রহিম উল্লাহ নামে অপর এক রোগীর স্বজনের দাবি, বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে ভর্তি আছি কয়েকদিন। গত দুদিন কোনো ডাক্তার বাবাকে দেখতে আসেনি। কী করব বুঝতে পারছি না।
এদিকে চিকিৎসক সজীব কাজীর ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলায় চারজনকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন, কক্সবাজার পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন বাহারছড়া এলাকার মোহাম্মদ সেলিম রেজার ছেলে তাহসিন মোহাম্মদ রেজা (২৫), তামিম মোহাম্মদ রেজা (২২), কালুর দোকান এলাকার সাইফুল আজিমের ছেলে সাইদুল লতিফ সাকিব (২৪) ও টেকপাড়া এলাকার আবু বক্করের ছেলে সাইফ বিন সম্রাট (২৪)।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুস সত্তার বলেন, গ্রেপ্তারদের দুজনকে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিজানুর রহমান বলেন, কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাসপাতালের চিকিৎসক ও ওয়ার্ড কর্মীদের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় আহত চিকিৎসকের দায়ের করা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অন্য অভিযুক্তদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে, চিকিৎসক সজীব কাজীর ওপর হামলা ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার, নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে চলমান শাটডাউন আন্দোলনের সমর্থনে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, কনসালট্যান্ট (সকল), প্রভাষক, সহকারী রেজিস্টার, মেডিকেল অফিসারদের সব ধরনের প্রাইভেট প্র্যাক্টিস ও চেম্বার সেবা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক এবং শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে তারা একটি বিবৃতিও দেন।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আশিকুর রহমান বলেন, আমাদের দাবিগুলো এখনো মেনে নেয়া হয়নি। আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়নি। হাসপাতালে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনীও নেই। যেখানে আমাদের নিরাপত্তা নেই সেখানে আমরা কীভাবে কাজ করব। তাই আমাদের সব সহকর্মী তাদের সেবা বন্ধ রেখেছে। তবে মানবিক দিক বিবেচনা করে জরুরি বিভাগ ও প্রসূতি সেবা চালু রাখা হয়েছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিং বলেন, কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ভাঙচুর নিয়ে কমিটি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে কেউ কাজ করবে না। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের অবগত করেছি।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি আবদুল আজিজ নামের এক রোগীর মৃত্যু হয়। তিনি শহরের নুনিয়ারছড়া এলাকার বাসিন্দা। ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার অভিযোগ এনে কয়েকজন যুবক কর্তব্যরত চিকিৎসক সজীব কাজীকে মারধর করে।
এ সময় আইসিইউ, সিসিইউসহ হাসপাতালে ভাঙচুর চালানো হয়। হামলার শিকার চিকিৎসক সজীব কাজীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও ডাক্তারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করে আন্দোলনে নেমেছে চিকিৎসকরা।
মন্তব্য করুন