ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় এবার নতুন এক অভিযোগ উঠেছে। এবার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাইর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অনুমতি না নিয়ে কমিটি হস্তান্তরের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে বিভ্রান্তি ও ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দাবি দলীয় সভানেত্রীর সঙ্গে দেখা করেই আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটি হস্তান্তর করা হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর স্বাক্ষর করা কমিটিতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অনুমতি না নিয়ে হস্তান্তর করার অভিযোগ উঠেছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: পাপিয়াকাণ্ডে এবার জেল সুপারকে বদলি
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর স্বাক্ষর করা কমিটি নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলে বলেছেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুমতি নিয়ে কী আদৌ এ কমিটি হস্তান্তর করা হয়েছে?
তবে কেন্দ্রীয় নেতারাসহ জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু কমিটি হস্তান্তরের ঘটনা জানেন না বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
গত ৫ মে কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্তে জেলা আওয়ামী লীগ শৈলকুপা উপজেলাতে মতিয়ার রহমানকে সভাপতি, সহসভাপতি পদে নাসির খান, সাধারণ সম্পাদক এম আব্দুল হাকিম আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম রাজু, শামিম মোল্লা, ব্যারিস্টার তানভির হাসান জিসান হাই ও সরোয়ার জাহান বাদশাকে সদস্য করে কমিটি ঘোষণা করে।
কমিটি ঘোষণার কিছুদিন পর কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অভিযোগ যায়, শৈলকুপার ধলহারাচন্দ্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমানের ছেলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা দিনার হোসেনের বিরুদ্ধে কালী মন্দির হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছে।
এ নিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতা পারভিন জামান কল্পনা জানান, মতিয়ার রহমানকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হলেও তার ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার কারণে কেন্দ্র থেকে জেলা নেতাদের কাছে এ কমিটির হস্তান্তর করতে সাময়িকভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
কিন্তু হঠাৎ করেই কেন্দ্রীয় নেতাদের না জানিয়ে গতকাল বুধবার নব-কমিটির নেতাদের কাছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য আব্দুল হাই শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি হস্তান্তর করেন।
আর এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখতে পেয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েন। কোনো ব্যক্তির নামে কেন্দ্রে অভিযোগ গেলে তাকে কী করে সভাপতি করা হয় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
মাঠ পর্যায়ের কর্মী রেজাউল ও মাসুদ রানা জানান, কোনো পরিবারের বিরুদ্ধে যদি সংখ্যালঘুদের পবিত্র স্থান মন্দিরে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠে সেই বিষয়টি নেতাদের তদন্ত করা উচিত ছিল। কিন্তু তদন্ত না করে সভাপতির দায়িত্ব দিলে কর্মীরাও নিরাপদে থাকতে পারবে না।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য আব্দুল হাই জানান, দলীয় নেত্রীর অনুমতি নিয়েই এ কমিটি হস্তান্তর করা হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়ার রহমানকে নিয়ে কেন্দ্রে মিথ্যা অভিযোগ করেছিল পারভিন জামান কল্পনা। কমিটি অনুমোদন হওয়ার পরই তা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। নতুন করে আমি গতকাল তাদের কাছে হস্তান্তর করেছি।
অন্যদিকে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু জানান, যেহেতু কেন্দ্রে শৈলকুপা উপজেলা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ গিয়েছিল। সে কারণে কেন্দ্রের নির্দেশে আমি এ কমিটি হস্তান্তর করেনি। তবে কীভাবে এ কমিটি হস্তান্তর করলেন তা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিই বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে জেলা পরিষদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং আবাইপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোক্তার আহমেদ মৃধা জানান, আমি যেটা জানি কেন্দ্রে মতিয়ার রহমানের নামে অভিযোগ যাওয়ার কারণে উপজেলা কমিটি স্থগিত রাখা হয়েছিল। এখন কী করে সেই কমিটি হস্তান্তর করা হলো সেটি ভালো বলতে পারবেন জেলা কমিটির সভাপতি-সম্পাদক।
অপরদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের গঠিত এ কমিটির সভাপতি মতিয়ার রহমান তার পরিবারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে জানান, আমার ছেলের বিরুদ্ধে কালী মন্দির ভাঙচুরের ঘটনার সাথে কখনই জড়িত ছিল না, তিনি মামলার আসামিও না। রাজনৈতিকভাবে আমাকে ফাঁসানোর কারণে প্রতিপক্ষরা কেন্দ্রে অভিযোগ দিয়েছিল। যেহেতু আমি বা পরিবার দোষী না সে কারণে কমিটি হস্তান্তর করতে কোনো বাধা নেই। সে কারণে গতকাল আমরা জেলার সভাপতি আব্দুল হাই সাহেবের কাছ থেকে চিঠি নিয়ে এসেছি।
আর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পারভিন জামান কল্পনা আরও জানান, যেহেতু শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটির সভাপতি মতিয়ার রহমানের পরিবার নিয়ে নেত্রীর কাছে অভিযোগ গিয়েছিল। সে কারণে এ কমিটি তখন থেকেই স্থগিত ছিল। নতুন করে সেই কমিটির তালিকা কীভাবে হস্তান্তর করা হলো সেইটি আমার জানার বাইরে।
উপজেলার এ কমিটি হস্তান্তর নিয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক কালবেলাকে জানান, শৈলকুপার এ উপজেলা কমিটির সভাপতি নিয়ে কেন্দ্রে অভিযোগ এসেছিল। সে কারণে কমিটির তালিকা হস্তান্তর করতে নিষেধ করা হয়েছিল। পরে নেত্রী বা দলের সাধারণ সম্পাদকের সাথে ঝিনাইদহের সভাপতি-সম্পাদকের কথা হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই।
তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম জানান, ঝিনাইদহের শৈলকুপার এ কমিটি হস্তান্তর করার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে এ বিষয়টি আমি খোঁজখবর নিব।
মন্তব্য করুন