আর মাত্র ১০ দিন পরই বাজারে আসবে আগাম ‘অটো শিম’। পাবনার ঈশ্বরদীতে প্রত্যেক বছরই ঈশ্বরদীতে চাষ বাড়ছে আগাম জাতের শিমের। আগাম জাতের শিমের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অটো শিম’। এখানকার কৃষকরা অটো শিম চাষ করে লাভবান হয়েছেন। অটো জাতের শিম গাছ মাচায় উঠে ফুলে ফুলে ভরে গেছে। পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ঈশ্বরদীর কৃষকরা।
আগামী ১০ দিনের মধ্যে আগাম শিম বাজারে তুলতে পারবেন বলে কৃষক ও কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝিতে আগাম শিম চাষ শুরু হয়। আর শ্রাবণের শেষ দিকে বাজারে তোলা হয়। এরই মাঝে গাছে শিম ধরা শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন : বাজারে মিলছে শীতকালীন সবজি, নাগাল পাচ্ছে না নিম্নবিত্তরা
জানা যায়, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ঈশ্বরদীতে অটো শিমের আবাদ চলছে। ফলন ভালো এবং দাম বেশি পাওয়ায় প্রতি বছরই আবাদ বাড়ছে। শিম চাষকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদীর মুলাডুলিতে গড়ে উঠেছে বিশাল পাইকারি বাজার। গত বছর ১ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হলেও এবার বেড়ে লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ১৯০ হেক্টর জমি নির্ধারণ হয়েছে। মুলাডুলি ইউনিয়নেই ৮৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে।
শেখপাড়া গ্রামের চাষি আজমল হোসেন জানান, শীতকালীন সবজি হলেও এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এখানে আগাম জাতের শিমের চাষ হচ্ছে। শ্রাবণের শেষ দিকে শিমের ফলন শুরু হয়। আগাম শিমের চাহিদা বেশি থাকে, দামও ভালো পাওয়া যায়। তবে এ শিম উৎপাদনে খুবই পরিশ্রম হয়। শিমের ক্ষেতে পোকার আক্রমণ বেশি হয়। এ ছাড়া অতি বৃষ্টি ও অতি খরার কারণে শিমের ফলন বিপর্যয়ের সম্ভাবনা থাকে।
বাঘহাচলা গ্রামের ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, প্রতি বিঘায় অটো শিমের আবাদ করতে খরচ হয় প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। শিমের আবাদে খরচ বেশি। ফলন ভালো হলে ১ লাখ ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। প্রথম দিকে বাজারে দাম বেশি থাকে। প্রথম দিকে ২০০ টাকা কেজি বা আরও বেশি দামে বিক্রি হয়।
আরও পড়ুন : কৃষিবিদরা আজ মর্যাদাবান পেশাজীবী হিসেবে স্বীকৃত
শিম চাষি আলাউদ্দিন খাঁ বলেন, আগাম জাতের অটো শিম চাষ করে এখানকার কৃষকরা বেশ লাভবান। গত বছর ১২ কাঠা জমিতে অটো শিমের আবাদ করেছিলাম। খরচ বাদ দিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। আগাম অটো শিমের আবাদ করে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন। শিম গাছ ফুলে ফুলে ভরে গেছে। ফুল থেকে শিমের ফলনও হয়েছে।
মুলাডুলি সবজি বাজার সমিতির উপদেষ্টা আমিনুল ইসলাম বাবু জানান, এখনো আড়তে শিম আসা শুরু হয়নি। আশা করা যাচ্ছে ৮-১০ দিনের মধ্যেই বাজারে অটো জাতের শিম উঠতে শুরু করবে।
কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জাহিদ জানান, অটো-রূপবান-ঘৃত কাঞ্চন-রূপসী নামে আগাম জাতের শিম এখানে বেশি চাষ হয়। গত বছরের চেয়ে এবার উপজেলায় শিমের আবাদ বেড়েছে। গত বছর ১ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছিল। এবার ১ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে।
দেশের সবচেয়ে বেশি শিমের আবাদ ঈশ্বরদীতে হয় জানিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, আগাম জাতের শিমের গাছ ফুলে ও ফলে ভরে গেছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যেই চাষিরা বাজারে বিক্রি করতে পারবে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে আগাম জাতের যে শিম পাওয়া যায় সেগুলো ঈশ্বরদীতে উৎপাদন হয়। সার ও কীটনাশক কম ব্যবহার করে কীভাবে আগাম শিম উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন