বশির হোসেন, খুলনা ব্যুরো
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৪৯ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে খুমেক হাসপাতাল, বন্ধ হয়ে গেছে অনেক সেবা

খুলনা মেডিকেল কলেজ। পুরোনো ছবি
খুলনা মেডিকেল কলেজ। পুরোনো ছবি

গত চার মাসে হাসপাতালের পরিচালক ডা. গৌতম কুমার পাল অফিস করেছেন মাত্র ৫ দিন। তত্ত্বাবধায়ক ও ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক ও সহকারী পরিচালকও ৫ আগস্টের পরে ১৫ দিনও অফিস করেননি। প্রশাসন না থাকায় কর্তব্যরত চিকিৎসকদের ওপর গত ১০ দিনে তিনবার হামলার ঘটনা ঘটেছে।

দফায় দফায় কর্মবিরতি দিচ্ছে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। ডেঙ্গু পরীক্ষা, এক্সরেসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক সেবা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। সন্ত্রাসীদের মার খেয়ে নালিশ করার জন্য পরিচালককে না পেয়ে চিকিৎসকরা দ্বারস্থ হয়েছে বিভাগীয় কমিশনারের। ফলে বিভাগীয় সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

জানা গেছে, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা প্রশাসনের প্রধান তিন পদের মধ্যে পরিচালক ডা. গৌতম কুমার পাল থেকেও নেই। গত ২২ জুলাইয়ের পর থেকে তিনি হাসপাতালে এসেছেন মাত্র ৫ দিন। তার নিজের যখন দরকার হয় তখন তিনি আসেন। এর বাইরে তিনি হাসপাতালের বেশিরভাগ চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফোন রিসিভ করেন না।

সাধারণ চিকিৎসক ও সাংবাদিকরা ফোন করলে বলেন, অসুস্থ। অথচ বিভিন্ন সময়ে ঢাকার প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করার প্রমাণ রয়েছে কালবেলার হাতে। ২৬ জুলাই থেকে উপপরিচালক পদ ফাঁকা। তত্ত্বাবধায়ক ডা. আক্তারুজ্জামান ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালকের দায়িত্ব পালন করলেও মাসের বেশিরভাগ সময় থাকেন অনুপস্থিত।

ডা. আক্তারুজ্জামান বলেন, পরিচালক, সহকারী পরিচালক কেউ হাসপাতালে আসেন না। এখানে কাজের পরিবেশ নেই। সারাক্ষণ একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে ঠিকমতো আসা হয় না।

একই কারণে হাসপাতালে আসেন না সহকারী পরিচালক ডা. নিয়াজ মুস্তাফি চৌধুরী। এদিকে মাসের পর মাস হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার প্রধান তিন ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে ভেঙে পড়েছে প্রশাসন। বিশেষ করে টেন্ডার প্রক্রিয়া ঝুলে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে বেশিরভাগ উন্নয়ন ও সেবা খাত। এখন পর্যন্ত সম্পন্ন করা যায়নি বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা (এপিপি)।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের হিসাব শাখার একজন কর্মচারী কালবেলাকে বলেন, প্রতি মাসে জুলাইতে এপিপি সম্পন্ন করার কথা থাকলেও আওয়ামী ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে তা নভেম্বরে গিয়ে শেষ করে। ফলে হাসপাতালের ওষুধ এমএসআর মালামাল, লিলেন বা অন্যান্য সেবা আগে থেকেই নির্ধারিত ব্যক্তির কাছ থেকে বেআইনিভাবে নিয়ে সেবা সচল রাখা হয়। এবার আর এই সাহস পাচ্ছে না। তাই এখনো এপিপি শেষ করতে পারেনি।

এদিকে তুচ্ছ ঘটনায় গত ১০ দিনে চিকিৎসকদের ওপর তিনবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে হামলা বা এর পরবর্তী সময়ে হাসপাল প্রশাসনের কোনো ব্যক্তি আহত চিকিৎসক ও কর্মচারীর খবর নেন না। ফলে প্রথমে ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং পরবর্তীতে অনারারি চিকিৎসকরা ধর্মঘট পালন করছে আর এতে চরম ভোগান্তিতে সাধারণ রোগীরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ অক্টোবর শিশু বিভাগে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ ফেরাতে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে তিন দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। এই দাবির দুই দিনের মাথায় হাসপাতালের জরুরি অপারেশন থিয়েটারে নারী চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করে রোগীর স্বজনরা। ঘটনাক্রমে এক মাসের মধ্যে ঐ দিনই হাসপাতালের পরিচালক ডা. গৌতম কুমার পাল হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু এ ঘটনায় কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে পরদিন থেকে আবারও হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকেন তিনি।

গত ২০ অক্টোবর হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে একজন অনারারি চিকিৎসককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে বহিরাগতরা। এই ঘটনায় সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার আগেই হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।

সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ওসি মো. শরীফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, আমি থানায় যোগদানের পর গত ৭ দিনে তিনবার হাসপাতালে এসেছি। এখানে আনসার আছে, কিন্তু তারা কীভাবে কাজ করে বুঝি না। একবার হাসপাতালের পরিচালককে দেখেছি। যদিও আমরা প্রত্যেকটি ঘটনার আইনি ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু এভাবে হাসপাতালে সেবা নিশ্চিত হবে না। হাসপাতাল প্রশাসনের তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। পুলিশ তো খবর পেয়ে আসে, কিন্তু এখানে যারা আনসারসহ হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা থাকেন তাদেরই আগে এগিয়ে আসতে হবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রশাসনিক অচলাবস্থার কারণে ঠিকমতো অপারেশন হচ্ছে না হাসপাতালে। মাসের পর মাস অপারেশনের অপেক্ষায় রোগীরা। অপারেশন থিয়েটারের ডায়াথার্মি, এনেস্থেশিয়া মেশিনসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এতে বিলম্বিত হচ্ছে অপারেশন কার্যক্রম।

এদিকে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সেবার মধ্যে এক্সরে একটি। গত ৭ দিন ধরে এক্সরে বন্ধ রয়েছে। এতে প্রতিদিন অন্তত ৫ শতাধিক রোগী চরম ভোগান্তিতে পড়ছে। আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনও মাত্র ২টি সচল। যেখানে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ জনের আল্ট্রাসনোগ্রাম করা যায়।

এ বিষয়ে জানতে হাসপাতালের পরিচালক ডা. গৌতম কুমার পালকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আক্তারুজ্জামান বলেন, স্যার ছুটিতে থাকেন। যেসব যন্ত্রপাতি নষ্ট আছে সেগুলো সম্পর্কে উপযুক্ত জায়গায় চিঠি পাঠানো আছে। এগুলো আমরা ডিল করি না। আমাদের দায়িত্ব কর্তৃপক্ষকে জানানো। আমরা সেগুলো জানিয়েছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আগে টাইফয়েড টিকা গ্রহণকারীরা কি আবার নিতে পারবে?

বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামছেন সাবেক মেয়র আরিফ

পরাজয়ে শেষ বাংলাদেশের এশিয়ান কাপ আশা

ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমার ৮ বছরে কারাদণ্ড

ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র পাল্লা থেকে ‘সব সীমা’ তুলে নিলেন খামেনি!

ইমো হ্যাকিং চক্রের ১২ সদস্য আটক

ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপি নেতা মোস্তফা জামানের উঠান বৈঠক

শতাধিক সনাতনী যোগ দিলেন বিএনপিতে

উপদেষ্টা পরিষদে ১১ অধ্যাদেশ ও ৩ প্রস্তাব অনুমোদন

আলোচিত শুটার লালন গ্রেপ্তার

১০

ঢাকা-১৮ আসনের উন্নয়নে কাজ করতে চান কফিল উদ্দিন

১১

‘গাজায় স্থায়ী স্বস্তি ফিরে আসুক’

১২

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সব মামলা বাতিল হচ্ছে, আসামিরা পাচ্ছেন দায়মুক্তি

১৩

তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামীর রাষ্ট্র পরিচালিত হবে : তানভীর

১৪

তাইওয়ানে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন!

১৫

হাজারো বন্দিকে মুক্তি দিলেও এক ফিলিস্তিনিকে ছাড়তে নারাজ ইসরায়েল

১৬

যোগ করা সময়ে গোল খেয়ে লিড হারাল বাংলাদেশ

১৭

বাংলাদেশকে বড় ‘সুখবর’ দিল যুক্তরাজ্য

১৮

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করল জবি প্রশাসন 

১৯

অর্থবছর শেষে কমেছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি

২০
X