উদ্বোধনের অপেক্ষার প্রহর গুনছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। চলছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। তবে জটিলতা কাটেনি ছয় লেনের টানেল সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ আপাতত এই প্রশস্ত সড়কে গাড়ি চলাচল করা যাবে বলে দাবি করলেও চার স্থানে সড়কের এক লেন চালু করতে পেরেছে তারা। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে এসব স্থানে চার লেন চালু করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানায় সওজ। তাই সেপ্টেম্বরে টানেল উদ্বোধন হলেও ছয় লেনের সড়ক নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
টানেল সংযোগ সড়ক ঘুরে দেখা যায়, টানেলের প্রবেশ দ্বার চাতরী চৌমহনী বাজারের দক্ষিণে আছে পাঁচটি দোকানসহ একটি একতালা মার্কেট। এ জাগায় সড়কের এক লেনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র। এ ছাড়া সড়কের ডাকপাড়া, মিয়ারহাট ও ফাজিল খাঁর হাট এলাকায় কোথাও এক লেন আবার কোথাও দুই লেন আবার কোথাও চার লেনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে দশ কিলোমিটার সড়কের কোনো অংশে ছয় লেনের কাজ হয়নি।
টানেল প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে প্রথম টানেল টিউবের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। ২০১৫ সালে টানেল প্রকল্প পাসের সময় এর খরচ ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। তখন এর মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত। পরে যথাসময়ে কাজ শুরু না হওয়ায় ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে প্রথম দফা সংশোধন করে খরচ ধরা হয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। মেয়াদ বেড়ে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরে এ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে নতুন করে এ মেয়াদ চলতি বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এবং প্রকল্পের ব্যয় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা করা হয়। গত কয়েক মাসে ডলারের দাম, আসবাব কেনা, শুল্ক-কর বৃদ্ধির কারণে খরচ বাড়েছে বলে জানা গেছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্র জানায়, প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে আনোয়ারার কালাবিবির দিঘির মোড় থেকে কর্ণফুলীর শিকলবাহা ক্রসিং পর্যন্ত ৬ লেনের টানেল সংযোগ সড়কের কাজ চলছে। টানেল উদ্বোধনের আগেই চার লেন যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তত করবে। কিন্তু ছয় লেন সড়কের চার স্থানে নানা জটিলতার কারণে এক লেন সড়কের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ কারণে টানেল উদ্বোধনের পর এ সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও যানজট নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এদিকে টানেলকে ঘিরে বদলে যাচ্ছে আনোয়ারাসহ পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামের চিত্র। টানেলটি চট্টগ্রামকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউনস’-এ পরিণত করবে। মাল্টিলেন টানেলটি সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরকে আনোয়ারা হয়ে কক্সবাজারকে চট্টগ্রামের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। টানেলে ১১ মিটার ব্যবধানে দুটি টিউব দিয়ে ভারী যানবাহন সহজে চলাচল করতে পারবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে সড়কের কয়েকটি অংশে চার লেনের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। খুব দ্রুত এই জটিলতা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে সড়ক যে পরিমাণ প্রশস্তকরণ করা হয়েছে তাতে এক লেনে গাড়ি চলতে আশা রাখি, কোনো সমস্যা হবে না।
বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ বলেন, টানেলে বড় আর কোনো কাজ নেই। দুটি টিউবই প্রস্তত করা হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আমরা আগস্টের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারব। তবে উদ্বোধনের বিষয়ে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে।
মন্তব্য করুন