রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

অধ্যক্ষকে সরিয়ে চেয়ার দখল করলেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা

সিরাজুল হক। ছবি : সংগৃহীত
সিরাজুল হক। ছবি : সংগৃহীত

রাজশাহীর কাটাখালী আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষকে বিদায় করে সেই চেয়ার দখল করেছেন কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা সিরাজুল হক।

তিনি রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। গত এপ্রিলে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কাটাখালী পৌরসভার উপনির্বাচনে মেয়র পদের প্রার্থী হওয়ায় দল থেকে বহিষ্কার করা হয় তাকে।

সিরাজুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত ৯ আগস্ট তিনি কলেজের অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীনকে তার কার্যালয়ে ঢুকতে দেননি। সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে গিয়ে হামলা চালিয়েছেন অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীনের বাড়িতেও। ফলে ভয়ে জয়নাল কলেজে যেতে পারেননি। কলেজে ঢুকতে বাধা দেওয়া ও বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগে জয়নাল আবেদীন থানায় আলাদা দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

এ অবস্থায় কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ও পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহরাব হোসেন কলেজের এক শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু পরদিনই অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করে নিয়েছেন সিরাজুল হক। এখন কলেজটিতে অধ্যক্ষের পদ নিয়ে জটিলতা চলছে। এ নিয়ে গত ২৮ অক্টোবর ইউএনও সোহরাব হোসেন জেলা প্রশাসকের কাছে একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন।

কলেজের অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন বলেন, আমি আওয়ামী লীগের সমর্থক না। বরং, আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন সবাই বিএনপি করে। আর আমার কলেজের সভাপতি ছিলেন এলাকার সাবেক এমপি আয়েন উদ্দিন। তাই তার কাছে আমাকে যেতে হয়েছে। এখন সিরাজুল হক বলে বেড়াচ্ছেন, আমি না কি আওয়ামী লীগ করেছি। গত ৯ আগস্ট তিনি বহিরাগতদের নিয়ে এসে আমাকে কলেজে ঢুকতে দেননি। আমার বাড়িতেও হামলা চালিয়েছেন। কলেজে গেলে মেরে ফেলা হবে বলে ভয় দেখানো হয়েছে। তাই আমি কলেজে যেতে পারি না। এখন শুনছি সিরাজুল হক অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করে নিয়েছেন।

গত ২৮ অক্টোবর কলেজের সভাপতি ও ইউএনও সোহরাব হোসেন জেলা প্রশাসকের কাছে যে প্রতিবেদন দিয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে, অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন অনুপস্থিত রয়েছেন। তাই কলেজের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে ২৩ অক্টোবর গণিতের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক বদরুল আমিন সরকারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হওয়ার আগেই পরদিন ২৪ অক্টোবর ভূগোলের শিক্ষক সিরাজুল হক সকল শিক্ষককে ভয়ভীতি দেখিয়ে সম্মতিসূচক স্বাক্ষর নিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেন। এর আগে অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীনকে ঢুকতে না দিয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর তিনি চেয়ার দখল করে নিজেকে অধ্যক্ষ বলে ঘোষণা দেন। এ পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে ওই চিঠি দেন ইউএনও সোহরাব হোসেন।

কলেজের শিক্ষকরা জানান, ১১ আগস্ট সিরাজুল হক নিজেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ঘোষণা করলে পরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তারা ইউএনওর সঙ্গে বসেছিলেন। কিন্তু বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি। কথাবার্তার ফাঁকে ফাঁকে সিরাজুল হক উত্তেজিত হয়ে মারমুখী আচরণ করেন। এ সময় শিক্ষকরা জয়নাল আবেদীন ও সিরাজুল হককে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করার আবেদন করেন। তখন পাঁচজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের যে কোনো একজনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ভীত অন্য চারজন শিক্ষক দায়িত্ব নিতে চাননি। রাজি হয়েছিলেন বদরুল আমিন সরকার। কিন্তু পরদিনই সিরাজুল হক অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করেন। কার্যালয়ে লাগিয়ে দেন আলাদা তালা। ফলে বদরুলও দায়িত্ব পাননি।

তারা আরও জানান, সিরাজুল হকের অধ্যক্ষ হওয়ার খায়েশ নতুন নয়। অধ্যক্ষের চেয়ারে বসতে অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীনকে দীর্ঘদিন ধরেই নানাভাবে হয়রানি করে আসছিলেন সিরাজুল। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে চেয়ার দখল করেছেন তিনি। অথচ ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধেও রয়েছে ছাত্রীর শ্লীলতাহানিসহ ডজন খানেক অভিযোগ। থানায় মামলা রয়েছে ৬টি।

অধ্যক্ষের চেয়ার দখলের অভিযোগ প্রসঙ্গে সিরাজুল হক বলেন, এলাকার লোকজন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী আমাকে এই সম্মান দিয়েছেন। তাদের অনুমতিক্রমেই আমি দায়িত্ব নিয়েছি। অধ্যক্ষ পালিয়ে থাকলে তো কলেজ চলে না। তাই স্বেচ্ছায় এই দায়িত্ব পালন করছি।

বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সহসম্পাদক ও রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন বলেন, বিএনপি কখনো অবৈধ ও অনৈতিক কাজকে সাপোর্ট করে না। কেন্দ্রীয়ভাবেও সতর্ক করা হয়েছে, দলের নাম ব্যবহার করে কোনো ধরনের অনৈতিক কাজ করার সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে ব্যক্তি স্বাধীনতা সব সদস্যের আছে।

সার্বিক বিষয় নিয়ে কলেজের সভাপতি ও পবার ইউএনও সোহরাব হোসেন বলেন, অধ্যক্ষ অনুপস্থিত থাকার কারণে আমরা একজনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দিতে চাই। তখন জ্যেষ্ঠ পাঁচজনের নাম আনা হলে তিনজনই দায়িত্ব নিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। আর সিরাজুল হক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হলেও তার বিরুদ্ধে ছাত্রী নিপীড়নসহ ৬টি মামলা আছে। তাই আমরা তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ না করে অন্যজনকে করি। কিন্তু তিনি পরদিনই সিরাজুল হক নিজেই অধ্যক্ষের চেয়ারে বসে গেছেন। এ পরিস্থিতিতে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর

কাভার্ডভ্যানের চাপায় মা-মেয়ের মৃত্যু

মাস্ক পরে হাসপাতালে দীপু মনি

ছাত্র সংসদের দাবিতে ‘আমরণ অনশন’ ঘিরে বিভক্ত বেরোবির শিক্ষার্থীরা

বন্ধুত্ব চাইলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করুন : লায়ন ফারুক

গাজা সীমান্তে ৪০ হাজার সেনা মোতায়েন করল মিসর

জাজিরা হাসপাতালে দুদকের অভিযান, অনিয়মে জর্জরিত স্বাস্থ্যসেবা

ডেজার সভাপতি প্রকৌশলী রুহুল আলম, সম্পাদক প্রকৌশলী চুন্নু

নানা আয়োজনে গাকৃবিতে মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন

বিপিএলের ফিক্সিং ইস্যুতে সতর্ক অবস্থানে তামিম

১০

রাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু বুধবার

১১

এবার সিলেটের উৎমাছড়া থেকে ২ লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ

১২

জমি রেকর্ড সংশোধনের মামলা দায়েরের শেষ সময় সেপ্টেম্বরে

১৩

পায়ের ফাঁকে বালিশ দিয়ে ঘুমালে কী হয়, জানেন কি?

১৪

জামায়াতের মুখে সংস্কার, হাস্যকর বিষয় : সোহেল

১৫

লবণ বেশি খেলে কী ঘটে শরীরে? জানালেন পুষ্টি বিশেষজ্ঞ

১৬

গণতন্ত্রকামী দলগুলোর দূরত্ব তৈরি হলে ফ্যাসিবাদ সুযোগ নেবে : তারেক রহমান

১৭

বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার

১৮

স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে ক্ষমা চাইতে হবে : এনসিপি নেতা ডা. জাহিদুল

১৯

বিপিএলে ফিক্সিং নিয়ে যা বললেন বিসিবি সভাপতি

২০
X