চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানির লিমিটেডের (সিইউএফএল) সার পরিবহন নিয়ে অপপ্রচারের অভিযোগ উঠেছে।
সার পরিবহনে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন খরচের নামে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন (বাফা) সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম খান ও স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের চাঁদা আদায় বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বলে জানান কারখানার বর্তমান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আনোয়ারা ট্রান্সপোর্টের স্বত্বাধিকারী মুজিবুর রহমান। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন বাফার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম খান।
আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে সরকারি সার কারখানা বন্ধ ৯ মাস
সিইউএফএল দেশের ২৮টি গুদাম থেকে সার সরবরাহ করা হয়। এসব গুদামের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের সিইউএফএল কারাখানা ও কালুরঘাটে দুটি কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে রয়েছে।
জানা যায়, সিইউএফএলের সার সরবারাহের জন্য ২ কোটি ১১ লাখ টাকায় এক বছরের জন্য টেন্ডার পান আনোয়ারা ট্রান্সপোট। গত ১ জুলাই থেকে সার সরবরাহের কাজ শুরু করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়াও গত ২৫ জুলাই বাফার নির্বাহী সচিব রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে কালুরঘাট গুদামের ঠিকাদার মেসার্স কাশেম অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী ইফতিয়াল কাশেম চার্লিকে চট্টগ্রামের বাফার প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়ার পরই শুরু হয় উৎপাদিত সার উত্তোলন এবং পরিবহন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র।
বাফা লক্ষীপুর জেলার সভাপতি মোহাম্মদ ফারুক বলেন, লক্ষীপুর জেলায় ৬০ জন সারের ডিলার রয়েছে, যারা সিইউএফএলের সার আমদানি করে। বিগত সময়ে প্রতি গাড়িতে ১৫ টন সার পরিবহনে বখশিশ ও লোকাল গাড়ি ভাড়া দেখিয়ে ১ হাজর ২০০ টাকার স্থলে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা আদায় করত। এই টাকার কোনো রশিদ দিত না। তবে বর্তমানে আমাদের থেকে কোনো প্রকার বখশিশ বা বাড়তি টাকা নিচ্ছে না। এ নিয়মে চললে আমরা ডিলাররা উপকৃত হবো।
আনোয়ারা ট্রান্সপোর্টের স্বত্বাধিকারী মুজিবুর রহমান, বিগত সময়ে বাফা সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম খান ও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সার সরবরাহে লোকাল গাড়ি এবং বখশিশের নামে বাড়তি টাকা আদায় করত, তাদের এই চাঁদাবাজি বন্ধ করে দেওয়ায় তারা এখন আমাদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করছে।
মেসার্স কাশেম অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী ও বাফার চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ইফতিয়াল কাশেম চার্লি বলেন, আমি গত ২৫ জুলাই থেকে দায়িত্ব পাওয়ার পর তদন্ত করে জানতে পারলাম বিগত প্রতি টন সারে ৫৫ টাকার স্থলে ২৫০ টাকা আদায় করত। এতে ১৫ টনের গাড়িতে ১ হাজার ৩০০ টাকার স্থলে বিভিন্ন অযুহাতে ২ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করতেন। বর্তমান ঠিকাদার ও আমি চট্টগ্রাম বাফার প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বে আসার পর এই অতিরিক্তি টাকা আদায় বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এতে তারা আমাদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে নানা ষড়যন্ত্র করছে। চলতি মাসে সিইউএফএল কারখানা ও কালুরঘাট গুদাম থেকে সার সরবরাহ একদিনের জন্যও বন্ধ ছিল না। কিন্তু একটি চক্র সার সরবরাহ বন্ধ বলে গণমাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ডিলারদের থেকে পূর্বের ন্যায় অতিরিক্ত টাকা আদায় না করায় তারাও বর্তমানে সন্তুষ্ট। আমি দায়িত্ব পাওয়ার কারণে চক্রটি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে বাফার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম খান উল্টো বর্তমান ঠিকাদারের বিরুদ্ধে সার সরবরাহে বখশিশের নামে চাঁদা আদায় করছে বলে অভিযোগ করেন।
বাফার নির্বাহী সচিব রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সিইউএফএল এ সার কারখানায় কমান্ড জেলাসমূহে বিসিআইসি ডিলারদের নিকট সুষ্ঠুভাবে সার সরবরাহ দেওয়ার সময় কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিএফএ’র পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করা জন্য চট্টগ্রাম জেলার সার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবং বিএফএ’র সদস্য মেসার্স কাশেম অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী ইফতিয়াল কাশেম চার্লিকে চট্টগ্রাম প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করা হলো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান, উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক বৈঠক করেন। এতে সিদ্ধান্ত হয় কালুরঘাট গুদাম থেকে প্রতি ট্রাকে আট টন করে সার সরবরাহের সিদ্ধান্ত হয়। তবে কালুরঘাট গুদামে সিইউএফএল কর্তৃক তদন্ত কমিটি বখশিশের নামে বর্তমানে চাঁদা আদায়ের কোনো প্রমাণ পায়নি।
মন্তব্য করুন