স্বপন চন্দ্র দাস, সিরাজগঞ্জ
প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস

প্রধান ফটকের সামনের দোকানগুলোতে ‘প্রতারণার ফাঁদ’

সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। ছবি : কালবেলা
সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। ছবি : কালবেলা

পাসপোর্ট অফিসে প্রবেশ ফটকেই চোখে পড়ে পুলিশ ও আনসার সদস্যের কড়া নজরদারি। আবেদনকারীর রসিদে সিলমোহর দিয়ে দেওয়া হচ্ছে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি। আবেদনকারী ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

ভেতরে এমন কড়াকড়ি দেখা গেলেও গেটের বাইরেই দেখা যায় দালালদের আনাগোনা। অফিসের আশপাশেই রয়েছে একাধিক কম্পিউটার দোকান। যেখানে অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন জমা নেওয়া হয়। এসব কম্পিউটার দোকান থেকেও প্রতারিত হচ্ছে গ্রাহক। এদিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট ডেলিভারি মিলছে না বলে জানিয়েছেন একাধিক গ্রাহক।

বুধবার (০৪ ডিসেম্বর) সরেজমিন সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দেখা যায়, অফিসের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে একশ মিটারের মধ্যে রয়েছে ১৫ থেকে ২০টির মতো কম্পিউটার দোকান। এসব দোকানে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া শহরের জজকোর্টের প্রধান ফটকের সামনে, মুজিব সড়কেও বেশ কিছু কম্পিউটার দোকান রয়েছে। যেখানে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে পাসপোর্টের আবেদন করানো হয়।

সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সূত্র জানায়, গ্রাহক যে কোনো স্থান থেকে অনলাইনে আবেদন করলে সেটি জমা কাউন্টারে চলে আসবে। এরপর বায়ো অ্যান্ড রোলমেন্ট কক্ষে গ্রাহকের ছবি ও ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে ডেলিভারি তারিখসহ রসিদ দেবে। যাচাই-বাছাই শেষে নির্ভুল আবেদনটি পুলিশ ভেরিভিকেশনের জন্য মেইলে পাঠানো হয়। সেখান থেকে রিপোর্ট এলে পাসপোর্ট প্রস্তুতের জন্য ই-পাসপোর্ট দপ্তরে পাঠানো হয়।

১০ বছরমেয়াদি পাসপোর্টের সাধারণ ডেলিভারি ক্ষেত্রে ৫ হাজার ৭৫০ টাকা ও পাঁচ বছরমেয়াদি ৪ হাজার ২৫ টাকা, জরুরি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে (১০ বছরমেয়াদি) ৮ হাজার ৫০ টাকা ও পাঁচ বছরমেয়াদি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা এবং অতীব জরুরির ক্ষেত্রে ১০ বছরমেয়াদি ১০ হাজার ৩৫০ ও পাঁচ বছরমেয়াদি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা ফি নেওয়া হয়। সাধারণ ক্ষেত্রে ২১, জরুরি ক্ষেত্রে সাত দিন ও অতীব জরুরি ক্ষেত্রে দুদিনের মধ্যে পাসপোর্ট ডেলিভারির বিধান রয়েছে।

তবে দালালদের বিচরণে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ে ডেলিভারি না পেয়ে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে গ্রাহককে।

কথা হয় সলঙ্গা থানার সাতটিকরী গ্রামের শাকিল নামে এক আবেদনকারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, পাসপোর্ট অফিসে ঢোকার আগেই দালাল এসে ৮ হাজার ২শ টাকায় দ্রুত পাসপোর্ট করে দেওয়ার কথা বলে। তাদের কথা না শুনে আমি পাশের একটি কম্পিউটার দোকানে পাসপোর্টের আবেদন করি। ব্যাংকে আমি নিজে টাকা জমা দিতে চাইলেও কম্পিউটার দোকানদার নিজেই ব্যাংক ড্রাফট করে দেন। এতে ১৫০ টাকা বেশি নিয়েছে।

হুজাইফা নামে আরেক গ্রাহক বলেন, আমি ২০ অক্টোবর আবেদন করেছি, ১১ নভেম্বর ডেলিভারি দেওয়ার কথা থাকলেও যথাসময়ে পাইনি। আজ (রোববার) অনলাইনে খোঁজ নিয়ে দেখলাম, আমার পাসপোর্ট চলে এসেছে।

বেলকুচির কদমতলী থেকে আবেদন করেছেন বাবলু। সাধারণ পাসপোর্টের ক্ষেত্রে তার ৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান।

সদর উপজেলার রূপসার চরের সেলিমের সাধারণ পাসপোর্ট করতেই ৮ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান। একইভাবে রায়গঞ্জের ধর্মদাসগাঁতীর আব্দুল মোতালেব শেখও সাড়ে ৮ হাজার টাকা দিয়েছেন। চৌহালীর থেকে আবেদন করে নাঈম হোসেনকে সাড়ে ৮ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।

তিনি বলেন, ৪ অক্টোবর আবেদন করে এক মাস ২৪ দিন পর পাসপোর্ট ডেলিভারি পেয়েছেন। রুবেল হোসেন এনায়েতপুর এলাকা থেকে আবেদন করেছেন, তার কাছ থেকেও সাড়ে ৮ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। কামারখন্দ উপজেলার গোপালপুর গ্রামের সুলতান আকন্দ নিজ এলাকায় সাব্বির কম্পিউটারের মাধ্যমে আবেদন করেছেন। তার কাছ থেকে ৮ হাজার ২শ টাকা নেওয়া হয়েছে।

এসব ছাড়াও একাধিক গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কম্পিউটার দোকানের মাধ্যমে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হয়। প্রতিটি আবেদনে ৩০০ টাকা করে নেওয়া হয়। এদিকে পুলিশ ভেরিভিকেশনের দীর্ঘসূত্রতার কারণে পাসপোর্ট ডেলিভারি দেরি হয় বলে জানান অনেকে।

একাধিক কম্পিউটার দোকানদার আবেদন প্রতি ৩০০ টাকা করে নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, জিনিসপত্রের দাম বেশি। এ কারণে তারাও বেশি টাকা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। কম্পিউটার দোকানে কোনো গ্রাহককে প্রতারণা করা হয় না বলে অনেকেই দাবি করেন। তবে দোকানের বাইরে দালালরা ঘোরাফেরা করে। আবেদনকারীরা নিজ নিজ এলাকা থেকেও দালাল সঙ্গে করে নিয়ে আসে বলে দাবি অনেকেরই।

সিরাজগঞ্জ পুলিশের বিশেষ শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের কাছে আবেদন আসার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত আবেদনকারীর এলাকায় অফিসার পাঠিয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়া হয়। তিনি বলেন, গত ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২টি আবেদন এসেছে আমাদের কাছে। এর মধ্যে ২৭৯৩টি আবেদনের প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মুনতাকীম মো. ইব্রাহিম বলেন, পাসপোর্ট অফিসের ভেতরে অবাঞ্ছিত লোকজনের প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে। ১৬টি সিসি ক্যামেরা দিয়ে আমরা মনিটরিং করছি। কিন্তু অফিস থেকে সামান্য দূরেই একাধিক কম্পিউটার দোকান রয়েছে। সেখানে গ্রাহক প্রতারিত হলে আমাদের কিছু করার থাকে না। তা ছাড়া বাড়তি টাকা নেওয়ার বিষয়ে সরাসরি কোনো আবেদনকারী অভিযোগ দেন না। অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

বিলম্বে পাসপোর্ট ডেলিভারি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে পাসপোর্ট আবেদনের চাপ রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াইশ আবেদন জমা পড়ে। নভেম্বর মাসেই ৪ হাজার ৮শ আবেদন জমা পড়েছে। আবেদনকারী ভুল তথ্য দেওয়া কিংবা পুলিশ রিপোর্ট দেরিতে আসায় পাসপোর্ট আসতে অনেক সময় দেরি হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চাকরি দিচ্ছে দারাজ, কাজ করতে পারবেন নিজ নিজ জেলায়

তারেক রহমানের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে : টুকু

‘জুলাই সনদ’ নিয়ে লিখিত মতামত দিল বিএনপি

‘সিলেটে পাথর লুটে জড়িতদের পুরো তালিকা প্রকাশ করবে প্রশাসন’

নির্ধারিত সময়ে হয়নি ওষুধের তালিকা হালনাগাদ ও মূল্য নির্ধারণ প্রতিবেদন

পরশু, তরশু নাকি আজই?

রাতে ফোন চার্জে রেখে ঘুমালে কি ফোনে আগুন লাগতে পারে?

স্ত্রীর প্রতারণার ভয়ংকর বর্ণনা দিলেন শওকত

যে ৩৩ ওষুধের দাম কমিয়েছে ইডিসিএল

ইসরায়েলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী!

১০

বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস হাসপাতালে ভর্তি

১১

দ্বিতীয় ধাপে কলেজ পেতে যা করতে হবে শিক্ষার্থীদের, জানাল শিক্ষা বোর্ড

১২

দেশকে আর তাঁবেদার রাষ্ট্র বানাতে দেব না : চরমোনাই পীর

১৩

ভারতের মাটিতে আ.লীগের তৎপরতা নিয়ে ২ দেশের পাল্টাপাল্টি অবস্থান 

১৪

শিক্ষককে ছাত্রীর ছুরিকাঘাত, থানায় মামলা

১৫

৫০ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ীর বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি

১৬

হোটেলকক্ষে গোপন ক্যামেরা? মোবাইল দিয়ে শনাক্ত করবেন যেভাবে

১৭

আলোচিত সেই কৃষি কর্মকর্তা বদলি

১৮

আমির খানের গোপন সন্তান থাকার অভিযোগ ভাই ফয়সালের

১৯

জিপিএ-৫ পেয়েও কলেজ পায়নি ৫৭৬৫ জন

২০
X