সিলেট ব্যুরো
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পার্কে ছাত্র-ছাত্রীদের বিয়ে ‘কাঠগড়ায়’ মাতব্বররা

রিজেন্ট পার্ক অ্যান্ড রিসোর্টের বিশ্রাম ঘর। ছবি : কালবেলা
রিজেন্ট পার্ক অ্যান্ড রিসোর্টের বিশ্রাম ঘর। ছবি : কালবেলা

সিলেটে রিসোর্টে বিয়ে নিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছেন এলাকাবাসী। জোরপূর্বক বিয়ের আইনি ভিত্তি নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, তরুণ-তরুণীদের পক্ষে কেউ আইনের আশ্রয় নিলে অতি উৎসাহী মাতব্বরদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার সিলাম এলাকার রিজেন্ট পার্ক অ্যান্ড রিসোর্টে ১৬ তরুণ-তরুণীকে আটক করে ৮ জনকে বিয়ে পড়িয়ে দেন এলাকাবাসী। এ ঘটনার পর রাতে রিসোর্ট বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

ঘটনার পর পক্ষে-বিপক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলে আলোচনা-সমালোচনা। তবে, কালবেলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে অন্য তথ্য।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অনেক আগে থেকেই এই রিসোর্ট থেকে চাঁদা নিত কিছু যুবক। একটা সময় কর্তৃপক্ষ চাঁদা বন্ধ করে দেয়। এ সুযোগে এলাকাবাসীর নাম করে সংঘবদ্ধ হতে থাকে তারা। গতকাল রোববার দুপুরে তারা চাঁদা দাবি করলে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ অপারগতা প্রকাশ করে। পরে তারা অসামাজিক কার্যকলাপ হচ্ছে বলে কিছু তরুণ-তরুণীকে ধরে একটা রুমে আটক করে। ততক্ষণে এলাকার অনেক মানুষ জড়ো হতে থাকে। এ সময় কিছু অতি উৎসাহী যুবক কাজি ডেকে এনে ৮ তরুণ-তরুণীকে বিয়ে পড়িয়ে দেন। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হলে মোগলাবাজার থানার একটি দল ঘটনাস্থলে যায়।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তরুণ-তরুণীকে আটকের পর জড়ো হওয়া এলাকার লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ওই রিসোর্ট এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে এমন অভিযোগ তুলে তারা রিসোর্টের একটি অংশে অগ্নিসংযোগ করে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

মোগলাবাজার থানার ওসি মো. খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান কালবেলাকে বলেন, কয়েকজন তরুণ-তরুণীকে আটকের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। পরে এলাকার মুরুব্বিরা তাদের অভিভাবকদের খবর দেন।

এক প্রশ্নের জবাবে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) সাইফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, কেউ অপরাধ করে থাকলে পুলিশ তাকে ধরে আনবে। আদালত বিচার করবে। কিন্তু আটকের পর বিয়ে পড়ানোর কোনো আইন নেই।

তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত জানি না। শুনেছি আটকদের মধ্যে ৮ জনের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। কীভাবে এটি করা হলো তা খোঁজ নিচ্ছি।

আট তরুণ-তরুণীর বিয়ে পড়িয়েছেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সিলাম ইউনিয়নের কাজী আব্দুল বারী। তিনি বলেন, এলাকাবাসী ছেলেমেয়েদের আটক করেন। তারপর আমাকে খবর দিয়ে নেওয়া হয়। তখন এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে চার ছেলে ও চার মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়। তিনটি বিয়ের দেনমোহর ১০ লাখ টাকা ও আরেকটির দেনমোহর ১২ লাখ টাকা।

কাজী আরও জানান, এসব ছেলে-মেয়ে সিলেটের বিশ্বনাথ, মোগলাবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমা এলাকার বাসিন্দা বলে নিজেদের পরিচয় দিয়েছেন। বিয়ের সময় স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতাও উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে রিজেন্ট পার্ক রিসোর্টের এমডি হেলাল আহমদ কালবেলাকে বলেন, আমাদের রিসোর্টে পুলিশের নির্দেশনা মোতাবেক এনআইডি কার্ড নিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে বিশ্রাম নিতে দেওয়া হয়। রোববারও ছেলে এবং মেয়েরা আলাদাভাবে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য এনআইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। হঠাৎ করে একদল যুবক রিসোর্টে ঢুকে ভাঙচুর-লুটপাট চালায়। তারা আসবাবপত্রে অগ্নিসংযোগও করে। ম্যানেজারের রুম থেকে ছেলে-মেয়েদের এনআইডি কার্ডের কপি ছিঁড়ে ফেলে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এরপর তাদের আটক করে রিসোর্টের চাবি নিয়ে নেয়। এরপর আটকদের তারা বিয়ে দিয়েছেন বলে শুনেছি। হামলায় ৩০-৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, আমি মনে করি যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। বাচ্চারা যে অপরাধ করেছে সে অপরাধের বিচার হবে দেশে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী। পুলিশকে সামনে রেখে যে ঘটনা ঘটেছে এটা অত্যন্ত নোংরা ঘটনা। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের হাত লম্বা থাকার কারণেই পুলিশকেও পাত্তা দেয়নি। আমি দাবি জানাই, অনতিবিলম্বে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর ও অতিরিক্ত দায়িত্বে ডিসি দক্ষিণ) মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম বলেন, এ কাজটা এলাকাবাসী-পঞ্চায়েত মিলে করেছে। পুলিশের সামনে এ কাজটা করেছে, তা সঠিক নয়। পুলিশকে ফোনে বলা হয়েছিল আগুন লেগেছে, পরে পুলিশ গিয়ে দেখে এমন ঘটনা। পঞ্চায়েতরা মিলে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।

এলাকাবাসী এমন বিয়ে দিতে পারে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যাদের বিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের সম্মতিতেই বিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর এ বিষয়ে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।

সিলেট জেলা প্রশাসক মাহবুব মোরাদ কালবেলাকে বলেন, আমি বিষয়টি পত্রিকায় পড়েছি। খুব শিগগিরই মালিক এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে এ বিষয়ে বসব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গণহত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে হাসিনার বিরুদ্ধে ৫ অভিযোগ

আ.লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের নিবন্ধন বাতিলের আবেদন গণঅধিকার পরিষদের

‘টুম্পার মা নয়, আমার মা-ই সবচেয়ে ভালো!’

থামছেই না পদ্মার ভাঙন

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় শ্রমিকের মৃত্যু

ঢাবিতে কয়রা ছাত্রদের সংগঠন ডুসাকের নতুন কমিটি

বাকশাল সিপিবির বিচার চান এনসিপি নেতা তুহিন

আইপিএলে ফিরতে চাচ্ছেন না অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা

আন্তর্জাতিক নার্স দিবস আজ

সারা দেশে শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাস 

১০

জরুরি বৈঠকে বসেছেন মোদি, উপস্থিত ৩ বাহিনীর প্রধান

১১

গাজা যুদ্ধের সমাধান খুঁজছে জার্মানি

১২

বিমানবন্দরে সোনারগাঁও আ.লীগের সহসভাপতি গ্রেপ্তার

১৩

চিকিৎসক না থাকায় ব্যাহত স্বাস্থ্যসেবা

১৪

ভেলপুরি খেয়ে হাসপাতালে শিশুসহ শতাধিক

১৫

আফগানিস্তানে দাবা খেলা নিষিদ্ধ

১৬

ব্রহ্মপুত্র নদে ভাসছিল নিখোঁজ ২ ভাইয়ের মরদেহ

১৭

আবারও রেকর্ডের পথে রেমিট্যান্স

১৮

দালালদের দখলে কুয়াকাটা বিদ্যুৎ অফিস

১৯

চেনাব নদীর বাঁধ খুলে দিল ভারত, পাকিস্তানে বন্যার শঙ্কা

২০
X