রাজিব হাসান, ঝিনাইদহ
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৩, ০৪:২০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ফেরিওয়ালার ঘরে দুই আলো

এক ছেলে বিসিএস ক্যাডার, অপরজন জাতীয় দলের ফুটবলার

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ফেরিওয়ালা মিরাজুল হক ও মা জুলেখা বেগমের সঙ্গে বিসিএস ক্যাডার বড় ছেলে জাহাঙ্গীর। ছবি: কালবেলা
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ফেরিওয়ালা মিরাজুল হক ও মা জুলেখা বেগমের সঙ্গে বিসিএস ক্যাডার বড় ছেলে জাহাঙ্গীর। ছবি: কালবেলা

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ফেরিওয়ালা মিরাজুল হক। সড়কে ঘুরে হাতপাখা ও রুমাল বিক্রি করে সংসার চালান তিনি। বর্তমানে তার অভাবের ঘরে বইছে আনন্দের জোয়ার।

কারণ, এলাকায় সফল বাবা হিসেবে মিরাজুল প্রশংসায় ভাসছেন। তার বড় ছেলে জাহাঙ্গীর মোল্লা ৪১তম বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। অপরদিকে ছোট ছেলে আলমগীর মোল্লা জাতীয় দলের ফুটবলার। এতে যেন বাবার দীর্ঘ জীবনসংগ্রাম সার্থক হলো।

মিরাজুল হকের ছোট ছেলে জাতীয় দলের ফুটবলার আলমগীর মোল্লা। ছবি: সংগৃহীত

মিরাজুল হক জানান, তিনি ১৯৭৮ সাল থেকে কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের বাসস্ট্যান্ডে যানবাহনে ফেরি করে হাতপাখা, রুমাল-গামছা বিক্রি করেন।

তার স্ত্রী জুলেখা বেগমও একই শহরের অগ্রণী ব্যাংকের পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কাজ করেন। দুজনের আয়ে কষ্টের সংসার। শহরের কলেজপাড়ার দুই কক্ষের টিনশেডের ঘরে থাকেন।

তিনি আরও জানান, টাকার অভাবে দুই মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করাতে পারেননি। বিয়ে দিয়ে দিতে হয়েছে। কিন্তু দুই ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখতেন।

এ স্বপ্ন অন্তরে বুনে চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। দুই ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান। বড় ছেলে জাহাঙ্গীর সমাজকল্যাণ ও গবেষণা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। ছোট ছেলে আলমগীর বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র ও জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়।

সংগ্রামী এ বাবা বলেন, ‘আমার স্বপ্নের দুই ছেলে ঘরে আলো জ্বালিয়েছে। ভবিষ্যতে আর আমার ফেরি করে সংসার চালাতে হবে না।’

মা জুলেখা বেগম বলেন, ‘আমার এক ছেলে বিসিএস ক্যাডার ও অপর ছেলে জাতীয় দলের খেলোয়াড়। আল্লাহ আমার আচলে ভিক্ষা দিয়েছেন। আমাদের কষ্ট পরিপূর্ণ হয়েছে। আমি ব্যাংকের পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কাজ করে ছেলেদের মানুষ করেছি।’

এসব বিষয়ে কথা হয় বড় ছেলে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাবা ও মায়ের স্বল্প আয়ে আর টিউশনি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করেছি। বর্তমানে বড় সিমলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছি। মা-বাবার মনের আশা পূরণ করতে বিসিএস পরীক্ষা দেই।’

ছোট ছেলে আলমগীর বলেন, ‘আমরা চার ভাইবোন খুব কষ্টে মানুষ হয়েছি। স্বল্প শিক্ষিত করে দুই বোনকে মা-বাবা বিয়ে দিয়েছেন। বাবা রাস্তায়, ফুটপাতে ফেরি করে এবং মা ব্যাংকে পরিচ্ছন্নতার কাজ করে আমাদের লেখাপড়ার খরচ ও সংসার চালাতেন। আমি এখন জাতীয় দলের ফুটবলার। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। আমরা মা-বাবার ঋণ কোনো দিন শোধ করতে পারব না।’

প্রতিবেশী আব্দুল কাদের বলেন, ‘মিরাজুল খুবই গরিব মানুষ। কত কষ্ট করে আমাদের সামনে জীবন পার করেছেন। তারপরও দুই ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করেছেন। এতে আমরা খুব খুশি।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইসরাত জাহান বলেন, ‘যারা ছোট পেশায় আছেন, নিজেরা প্রতিষ্ঠিত না হতে পারলেও কষ্ট করে সন্তানকে সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন, সেসব মানুষের কাছে ফেরিওয়ালা মিরাজুল হক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধারই জাতির একমাত্র লক্ষ্য : গয়েশ্বর

ঘুষি মেরে বিমানের মনিটর ভেঙে ফেললেন লন্ডন প্রবাসী

ইসরায়েলের যে কারাগারে বন্দি শহিদুল আলম

আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান, টিটিপি প্রধান নিহতের গুঞ্জন

বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল কাবুল

এককভাবে সরকার গঠন করবে বিএনপি : এমরান চৌধুরী

‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে রংপুর অচল করে দিতে বাধ্য হবো’

নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র সহ্য করা হবে না : লায়ন ফারুক

ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের পা বিচ্ছিন্ন

বৃহত্তর মিরপুরে সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত ওলামা সম্মেলন অনুষ্ঠিত

১০

দেশ বাঁচাতে হলে বিএনপির বিকল্প নেই : টুকু

১১

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা / বস্তিবাসী ও শহীদ পরিবারের ন্যায্য দাবি মেনে নিন

১২

মা-মেয়েকে গলা কেটে হত্যা

১৩

রাজধানীতে ১৭ ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জাগপা ছাত্রলীগের বৈঠক

১৪

হাত-মুখ বেঁধে শিশুকে ধর্ষণ, যুবককে খুঁজছে পুলিশ

১৫

এনসিটিবির নামে ‘নকল’ ছাপাখানা, আটক ৫ 

১৬

পচা চাল ক্রয়, বাচ্চু মিয়াকে বাধ্যতামূলক অবসর

১৭

শহিদুল আলমসহ নৌবহর থেকে আটক ব্যক্তিদের কারাগারে বন্দি

১৮

পা হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন আইসক্রিম বিক্রেতা রফিকুল

১৯

গুণগত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা তারেক রহমানের অঙ্গীকার : সাঈদ

২০
X