সুনামগঞ্জের শাল্লায় এক সপ্তাহে ইজারাকৃত ৬টি বিলের প্রায় সাত কোটি টাকার মাছ লুটের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলা সদরের নিকটবর্তী জোয়ারিয়া বিলের মাছ লুটের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। সবশেষ বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের ভান্ডাবিলের মাছ লুটে নেয় স্থানীয় লোকজন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের কাশীপুর গ্রামের বাইল্লা বিল, ইয়ারাবাদ গ্রামের পাশে ভাটিগাং বিল, আটগাঁও গ্রামের পূর্বপাশে (বড় জলমহাল) শতোয়া বিল, চাকুয়া গ্রামের নিকটে (বড় জলমহাল) আতিনি বিলের মাছ লুট করে বিভিন্ন গ্রামের কয়েকশ লোকজন। এসব বিলের সব মিলিয়ে প্রায় ৭ কোটি টাকার মাছ লুট হয়েছে বলে জানান বিল সংশ্লিষ্টরা। এসব বিল বিভিন্ন মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি কাগজেপত্রে ইজারা নিলেও বাস্তবে এগুলো ভোগদখল করতেন আওয়ামী লীগের নেতারা। গত ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পলাতক থাকায় এলাকার লোকজন মাছ ধরার সুযোগ করে নেয়।
শতোয়া বিলের ইজারাদার উত্তর জারুলিয়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের একটি সংগঠন। সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রজেশ দাস বলেন, এমন পরিস্থিতি জীবনেও দেখিনি। আমরা প্রতি বছর সরকারকে ৪৫ লাখ টাকা রাজস্ব দিই। তিন বছর পরপর (পাইল বিল) মাছ ধরা হয়। আগামী বছর মাছ ধরার কথা থাকলেও এলাকার ২/৩ হাজার মানুষ দুই দিনে প্রায় দেড় কোটি টাকার মাছ লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় সব মিলিয়ে বিলের প্রায় আড়াই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
জোয়ারিয়া বিলের ইজারাদার যাত্রাপুর হিলিপ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি হিমাদ্রী সরকার বলেন, বিলে বাঁশ-কাঠ দেওয়া, পাহারাদার রাখাসহ প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আগামী বছর মাছ ধরার কথা ছিল। কিন্তু গত দুই দিন জোর করে মাছ ধরে নিয়ে যাওয়ায় আমাদের কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরপর ২ দিন উপজেলার নিকটবর্তী জোয়ারিয়া বিলের মাছ লুট করে নিয়ে যায় ছব্বিশা, দামপুর, কান্দিগাঁও, ইয়ারাবাদ, কান্দকলা, রঘুনাথপুর, যাত্রাপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের হাজারখানেক লোকজন। লুটপাটকারীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় বাধা দেওয়ার সাহস পাননি বিলের পাহারাদার।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাছ লুটপাট শুরু হয় মার্চের প্রথমদিন সকালে জোয়ারিয়া বিলের কোটি টাকার মাছ লুট করার মধ্যদিয়ে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শাল্লায় মোট ৬টি বিলের মাছ লুট হয়েছে। এলাকায় যে অবস্থা চলছে আরও বিল লুটের সম্ভবনা রয়েছে।
আটগাঁও ইউনিয়নের ইজারাদাররা জানান, উপজেলার চিকাডুপি, বল্লভপুর, উজানগাঁও, সোনাকানি, নিজগাঁও, মির্জাপুর, রাহুতলা, শরীফপুর, কাশীপুর আটগাঁওসহ পাশের দিরাই উপজেলার শ্যামারচর, লৌলোয়ারচর, মাইতি, কার্তিকপুর, নোয়াগাঁওসহ আশপাশের গ্রামের লোকজন জলমহালের মাছ লুটের সঙ্গে জড়িত।
স্থানীয় কয়েকজন জেলে জানান, জলমহালগুলো মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে ইজারা নিয়ে বছরের পর বছর আওয়ামী লীগের নেতারা নিয়ন্ত্রণ করতেন। নেতারা এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর গ্রামের লোকজন জোর করে মাছ ধরে নিয়ে যান। এখানে কাগজেই শুধু মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে ইজারা নিয়ে আসা হয়। বাস্তবে ভোগদখল করেন নেতারা। গত পাঁচ দিনে ঘোষণা দিয়ে ৬টি জলমহালের মাছ ধরে নিয়ে যান জলমহালের আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা।
এ বিষয়ে শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, জোয়ারিয়া বিলের মাছ ধরার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে যাদেরকে ঘটনাস্থলে পেয়েছি তাদের বুঝিয়েও কোনোও লাভ হয়নি। বিলের পাহারাদার ও পুলিশের পক্ষে এতো মানুষকে বাধা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এরপরও যারা মাছ ধরে নিয়ে গেছেন তাদের কয়েকজনকে চিহ্নিত করেছি। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
মন্তব্য করুন