সম্প্রতি রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের ওয়েবসাইটে প্রচারিত নতুন যোগদানকৃত অধ্যক্ষের বাণীতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবুর রহমানের গুণকীর্তন করা হয়েছে। শেখ হাসিনা ৬ মাসের অধিক সময় ধরে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে গেলেও অধ্যক্ষের বাণীতে তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই উপস্থাপন করা হয়েছে।
ওয়েবসাইটে প্রকাশিত শেখ হাসিনার গুণকীর্তন করে এই অধ্যক্ষের এমন বাণী নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই কলেজের কয়েকজন শিক্ষক। তারা বলছেন, এটা ভুল নয়। ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে। কারণ, তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের লোক ছিলেন।
জানা গেছে, ২০ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন পান কলেজটির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সারওয়ার জাহান। তিনি যোগদান করার পর কলেজের ওয়েবাসইটে একটি বাণী আপলোড করা হয়। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারী শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর সমঅধিকার বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৭, ১৯, ২৮, ২৯ সহ বিভিন্ন ধারায় নারীর শিক্ষা, চাকরি, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির বাধ্যবাধকতা সন্নিবেশ করে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করেছেন এবং এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।’
বাণীতে বলা হয়, ‘রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ শিক্ষানগরী রাজশাহীর নারী শিক্ষা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে একটি অনন্য পথিকৃৎ প্রতিষ্ঠান। এ অঞ্চলে নারী শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে ভূমিকা রেখে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে এই কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের রয়েছে অসামান্য অবদান। এই প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষালাভ করে অনেক শিক্ষার্থী সমাজের বিভিন্ন স্তরে উচ্চ আসন করে নিয়েছেন। বর্তমানে এখানে উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক পাস ও সম্মান এবং মাস্টার্স শ্রেণিতে ৮ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের একজন সহকারী অধ্যাপক বলেন, তিনি ডানপন্থি রাজনীতির কেউ নন। তিনি ফজলে হোসেন বাদশার (সাবেক এমপি) লোক। অনেক দিন আগে একটি অনুষ্ঠানে তিনি জিয়াউর রহমানকে ‘খুনি’ আখ্যা দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি ভিন্ন রাজনীতির মানুষ। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ার সুবাদে তার মাধ্যমেই তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন পেয়েছেন।
কলেজটির আরেক সহযোগী অধ্যাপক বলেন, ওয়েবসাইটে শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবকে নিয়ে নতুন অধ্যক্ষের গুণকীর্তন এটি কোনো ভুল নয়। বরং ইচ্ছাকৃতভাবেই তিনি এটি করেছেন বলে আমার বিশ্বাস। কেননা, তিনি ভিন্ন রাজনীতির মানুষ।
জানতে চাইলে অধ্যক্ষ সারওয়ার জাহান বলেন, আগের অধ্যক্ষের যে বাণী ছিল, সেই বাণীটাই হুবহু লিখে দিয়ে আপলোড করা হয়েছে। শুধু আগের অধ্যক্ষের ছবির জায়গায় আমার ছবিটি বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা আমাদের কলেজের ওয়েবসাইটটি মেইনটেইন করেন তারাই এটি করেছে। তারা বলছে, তারা এটি ভুল করে করেছে। আমি রোববার বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে বসব।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কোনো দিনই কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। ফজলে হোসেন বাদশার বাড়ি আর আমার বাড়ি একই এলাকায়। ওনার (বাদশা) বাড়ি হরগ্রাাম বাজারে আর আমার বাড়ি মহিষবাথান। আমি যদি একই হতাম তাহলে তো আওয়ামী লীগের আমলেই কোনো না কোনো কলেজের অধ্যক্ষ হতাম। কারণ, আমি ২০১৮ সালে প্রফেসর হয়েছি। আমার পরে যারা প্রিন্সিপাল হয়েছেন তারা রাজশাহী কলেজ ও নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ।
জিয়াউর রহমানকে ‘খুনি’ বলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষ তো এগুলো বলবেই। কারণ, এই কলেজের অধ্যক্ষ হওয়ার জন্য অনেকেই চেষ্টা করেছিল। তারাই হয়তো এগুলো বলে বেড়াচ্ছে। এতদিন কেউ ওয়েবসাইট দেখেনি, আমি যোগদানের পর এটি মানুষের নজরে এসেছে। তবে আমার ভুল হয়েছে যে, ওয়েবসাইটটি আমার নখদর্পণে রাখতে হতো। কিন্তু আমি এসব কম বুঝি। আমি ফেসবুকেও নেই। আমি খুব অন্তর্মুখী একজন মানুষ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মোহা. আছাদুজ্জামান বলেন, আমার কাছে তো এ ধরনের খবর নেই। আমি দেখিনি। কারণ আমি বিগত দুদিন খুব ব্যস্ত ছিলাম। কারণ দুদিন আমার এমপিওর কাজ করলাম। তবে এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেব।
উল্লেখ্য, বিষয়টি জানাজানি হলে ওয়েবসাইটে প্রকাশিত অধ্যক্ষের বাণীটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
মন্তব্য করুন