এস কে দাশ সুমন, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার)
প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পৈতৃক ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন শ্রীমঙ্গলের মৃৎশিল্পের কারিগররা

কারিগর নিজ হাতে তৈরি করছেন মাটির শিল্পকর্ম। ছবি : কালবেলা
কারিগর নিজ হাতে তৈরি করছেন মাটির শিল্পকর্ম। ছবি : কালবেলা

প্রাচীনকাল থেকেই গ্রামবাংলার হাটবাজারে হাতে তৈরি মাটির দৃষ্টিনন্দন ও নিত্যপ্রয়োজনীয় গৃহস্থালির সামগ্রীর ছিল বিপুল চাহিদা। সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল এসব সামগ্রী।

অথচ সময়ের পরিক্রমায় বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম ধারক এই মৃৎশিল্প আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। পেশাগতভাবে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ায় অনেকেই ছেড়ে দিয়েছেন এই পেশা। শুধু পারিবারিক ঐতিহ্য ও বাপ-দাদার স্মৃতিকে ধরে রাখতে এখনো লড়ে যাচ্ছেন কিছু কারিগর।

দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে আজও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে পাল সম্প্রদায়ের হাতে তৈরি মাটির শিল্পকর্ম— যেমন হাঁড়ি, পাতিল, থালা, কলস, সড়াই, ভাতের হাঁড়ি, ঢাকনা, ফুলের টব, মাটির ব্যাংক, ফুলদানি ইত্যাদি। এসব সামগ্রী একসময় গ্রামবাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে ব্যবহৃত হতো, যা এ শিল্পকে প্রাণবন্ত রাখত।

এক সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাল সম্প্রদায়ের বসতি গড়ে উঠেছিল এই শিল্পের চাহিদার ভিত্তিতে। তাদের তৈরি সামগ্রী বিক্রি হতো গ্রামের হাটবাজারে; কিন্তু সময় বদলেছে। আধুনিক যুগে মানুষের পছন্দ-অপছন্দের পরিবর্তনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এসেছে প্লাস্টিক, মেলামাইন ও স্টিলের তৈরি টেকসই এবং ঝকঝকে গৃহস্থালি পণ্যের বাজার। ফলে মাটির তৈরি এসব ঐতিহ্যবাহী সামগ্রীর বাজার ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়েছে।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সদর ইউনিয়নের সন্ধানী আবাসিক এলাকার কুমারপাড়ায় সরেজমিনে দেখা যায়, হাতে গোনা কয়েকজন কারিগর এখনো ব্যস্ত রয়েছেন মাটির কাজ নিয়ে। নারী-পুরুষ একত্রে কাজ করছেন ছোট পরিসরে, বাঁচিয়ে রাখছেন তাঁদের ঐতিহ্য।

জ্যোতির্ময় পাল নামে এক কারিগর জানান, ‘আমরা যে কাজ করি, সেটা মৃৎশিল্পের। এখন আর তেমন কেউ এই কাজ করতে চায় না। আগে আমাদের উপজেলায় ৪০টি পাল পরিবার ছিল যারা এই পেশায় জড়িত ছিল। এখন মাত্র ৩-৪টি পরিবার টিকে আছে।’

এই এলাকার মৃৎশিল্প কারখানার পরিচালক বীণা পাল বলেন, ‘আমরা পারিবারিকভাবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত বহুদিন ধরে। কিন্তু এই পেশায় এখন আর সংসার চালানো যায় না। সন্তানদের পড়াশোনা করিয়ে চাকরির দিকে পাঠিয়েছি। তবে ১০ বছর ধরে আমরা সাধারণ অসহায় নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বনির্ভর করার চেষ্টা করছি। সরকারি সহযোগিতা পেলে আরও অনেক নারীকে এই শিল্পে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব। এভাবেই হয়তো টিকিয়ে রাখা যাবে আমাদের ঐতিহ্য।’

ঢাকার বিক্রমপুর থেকে আসা প্রতিমাশিল্পী বিশ্বজিৎ পাল, যিনি ৩০ বছর ধরে শ্রীমঙ্গলে প্রতিমা তৈরি করে আসছেন জানান, ‘এখন আর আগের মতো প্রতিমার কাজ নেই। কারিগরদের মজুরি দিতে পারি না, ফলে তারা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। আমিও এ কাজ ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছি।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রানার হ্যাটট্রিকও থামাতে পারল না সিলেটকে, শেষ বলে রুদ্ধশ্বাস জয়

এক উপজেলা বিএনপির সব কমিটির কার্যক্রম স্থগিত

ত্রিশাল প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুজিব, সম্পাদক নোমান

শ্বশুরবাড়িতে ‘প্রাণিপ্রেমী তারেক রহমান’

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ

চেরকির ঝলকে নটিংহ্যাম ফরেস্টকে হারিয়ে শীর্ষে ম্যান সিটি

‘উৎসবমুখর নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও পেশি শক্তির নিয়ন্ত্রণ জরুরি’

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে কারফিউ জারি

জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির জোট নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানালেন সামান্তা শারমিন

ইসরায়েলের ওপর ক্ষেপল সোমালিয়া, সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি

১০

জনতা গ্রুপ-কুয়েত প্রেস ক্লাবের শুভেচ্ছা বিনিময় সভা

১১

লক্ষ্মীপুর-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী আবুল খায়েরকে নিয়ে ‘নির্বাচনী ভাবনা’ 

১২

২ ভাইকে কুপিয়ে হত্যা

১৩

ফান্ডের টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে তাসনিম জারার বক্তব্য

১৪

জামায়াতের সঙ্গে জোটে আপত্তি জানিয়ে নাহিদ ইসলামকে এনসিপির ৩০ নেতার চিঠি 

১৫

হত্যাসহ ১০ মামলার আসামি মহিলা আ.লীগ নেত্রী গ্রেপ্তার

১৬

পাগলা মসজিদে এবার পাওয়া গেল ১১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা

১৭

বিশ্বসেরা কোচের মঞ্চে পর্তুগালের কোচের পিছনে স্কালোনি

১৮

এনসিপির ৩ শীর্ষ নেত্রীর পোস্ট, জানালেন নতুন তথ্য

১৯

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ৮ম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত

২০
X