ফেনীতে দুই কিশোরের বিরুদ্ধে কবুতর ও মুরগি চুরির অভিযোগ এনে শত শত মানুষের সামনে তাদের মায়েদের প্রকাশ্যে নাকে খত দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (০১ মে) রাতে ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারার খালুর দোকান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শনিবার (০৩ মে) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত ভিডিও ভাইরাল হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন দেলুর নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। পরে ফেনী সদর উপজেলা বিএনপি রোববার (০৪ মে) বিকেলে অভিযুক্ত নেতার সব স্তরের দলীয় পদ স্থগিত করে নোটিশ জারি করেছে। পরে রাতে জেলা বিএনপি বিষয়টি তদন্ত করে তাকে দলীয় সকল পদ পদবী থেকে অব্যাহতি দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি মাথিয়ারা গ্রামের তফজল মেম্বার বাড়ির বাসিন্দা জাহাঙ্গীরের ঘর থেকে কবুতর ও মুরগি চুরির অভিযোগ উঠে দুই কিশোরের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে শালিসের আয়োজন করেন ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর। সালিশে বিচারকের ভূমিকায় ছিলেন পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলু। সালিশে অভিযুক্ত কিশোরদের মারধর করে পুলিশে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা শুনে এলাকা থেকে পালিয়ে যান কিশোররা।
পরে রাতে ডাকা সালিশে কিশোরদের না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে দুই কিশোরের মায়েদের ডেকে সবার সামনে নানাভাবে হেনস্তা করে নাকে খত দিতে বাধ্য করে বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দেলু। সালিশটিতে ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারব মহি উদ্দিন জসিমসহ স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানান।
এ সময় ধারণকৃত ১ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, রাতের বেলায় বহু লোকজনের সামনে বিচার করছেন দেলু চেয়ারম্যান। হাতে লাঠি নিয়ে দুই কিশোরের মাকে নাকে খত দিতে মাটিতে দাগ দিচ্ছেন দেলু চেয়ারম্যান। ভয়ে বাধ্য হয়ে বোরকা পরা দুই নারী মাটিতে লুটে নাকে খত দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে সালিশের বিচারক ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলু বলেন, পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে এমনটি করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। সেই দিন যদি আমি এ বিচার না করতাম তাহলে এলাকাবাসী হয়তো গণপিটুনেতে তাদের মেরেই ফেলত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আমান উদ্দিন কায়সার সাব্বির কালবেলাকে জানান, আমরা বিষয়টি জানার তাকে পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পদসহ সব দলীয় পদ স্থগিত ঘোষণা করে নোটিশ জারি করেছি। কোনো ব্যক্তির দায়ভার দল গ্রহণ করবে না বলে জানান তিনি।
ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল কালবেলাকে জানান, ফেনী সদরের পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারায় নারীর প্রতি অসাধাচরণের বিষয়টি তদন্তে প্রমাণ মেলায় আমরা তাকে দলীয় সব পদবী থেকে অব্যাহতি দিয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী মডেল থানার ওসি তদন্ত ইকবাল হোসেন কালবেলা কে জানান, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি তিনি দেখেছেন। এ বিষয়ে থানায় কোন অভিযোগ এখন পর্যন্ত আসেনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন