খুলনার দৌলতপুর দিবা-নৈশ কলেজে সভাপতি পদে নিয়োগ পেয়েছেন কলেজেরই সাবেক গণিত বিভাগের শিক্ষক মো. জয়নাল আবেদীন। তার নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। গত ১৫ এপ্রিল তাকে কলেজটির গভর্নিং বডির সভাপতি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অথচ তিনি কলেজটির আর্থিক অনিয়মের কারণে এক সময় সাময়িক বরখাস্ত ছিলেন।
তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর একক ক্ষমতা বলে কলেজের বহুল আলোচিত সাময়িক বরখাস্ত অধ্যক্ষ এএসএম আনিসুর রহমানকে গত ২২ এপ্রিল পুনরায় যোগদানের নির্দেশ দিয়েছেন। এসব ঘটনায় কলেজের এডহক কমিটি এবং শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
গত বছরের দৈনিক পত্রিকায় ‘খুলনার দৌলতপুর কলেজে পদে পদে অনিয়ম’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর তৎকালীন গভর্নিং বডি তদন্ত সাপেক্ষে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে কলেজের অধ্যক্ষ এ এস এম আনিসুর রহমান এবং ২৫ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক জাহাঙ্গীর আলম সবুজকে সাময়িক বহিষ্কার করেন।
জানা যায়, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা মো. শাহাজান মোল্লা গত ১৮ মার্চ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শকের নিকট গভর্নিং বডির সভাপতি ও বিদ্যোৎসাহী সদস্য মনোনয়নের জন্য ৬ জনের একটি তালিকা পাঠায়। তালিকায় মো. জয়নাল আবেদীনের নাম ছিল না। তবে তিনি বিশেষ সুপারিশের ভিত্তিতে কলেজটির সভাপতির নিয়োগ পান। তালিকায় তার নাম না থাকার বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন। এদিকে বহুল আলোচিত এবং শিক্ষক-কর্মচারীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় সাময়িক বরখাস্তকৃত কলেজটির অধ্যক্ষ এ এস এম আনিসুর রহমান সম্প্রতি পুনরায় কলেজে যোগদান করেছেন। অভিযোগ রয়েছে তার যোগদানের পেছনে সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীনের একক ক্ষমতা এবং আর্থিক বিষয় রয়েছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সভাপতি।
কলেজের এডহক কমিটির একাধিক সদস্য এবং শিক্ষকরা কালবেলাকে জানান, যেহেতু এ এস এম আনিসুর রহমান বরখাস্ত ছিলেন। আদালতে রিট করার পর বিষয়টি নিয়ে সভাপতির অনন্ত এডহক কমিটির সাথে মিটিং করে রেজুলেশন করা উচিত ছিল। এরপর পুনরায় নিয়োগ দিলে বিতর্কের সৃষ্টি হতো না। তাছাড়া আদালত থেকেও কোনো আদেশ কলেজে আসেনি। এদিকে আগের এডহক কমিটি তদন্ত সাপেক্ষে দুর্নীতির কারণে এ এস এম আনিসুর রহমানকে বহিষ্কারের পর পুনরায় এমনভাবে যোগদান করাটা অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে নীতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। কেউ অন্যায় করে আদালতের রিট আনলেই সব সমস্যার সমাধান হয় না। ইতঃপূর্বে কলেজের অনেক শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত হয়েছে। আদালতে রিটও করেছে। তবে আওয়ামী লীগের আমলে তারা কেউ এত সহজে পুনরায় যোগদান করতে পারিনি।
কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ এ এস এম আনিসুর রহমান কালবেলাকে বলেন, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আমাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। আমি হাইকোর্টে রিট করার পর গত ২১ এপ্রিল পুনরায় যোগদান করেছি।
কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীন কালবেলাকে জানান, আর্থিক কোনো বিষয় নেই। কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আমি যোগদান দিয়েছি। যেহেতু আদালত আমাকে মেনশন করেছে, তাই আমি এডহক কমিটির অন্য কারোর সঙ্গে আলোচনা না করেই অধ্যক্ষকে পুনরায় যোগদান দিয়েছি।
তার সাময়িক বহিষ্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তবে সেটি পরে প্রত্যাহার করা হয়। তার সভাপতি হওয়ার জন্য প্রস্তাবনা কীভাবে গেছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর মো. লুৎফর রহমান কালবেলাকে বলেন, কলেজ থেকে তালিকায় নাম না আসলেও উপাচার্য তার নিজস্ব ক্ষমতাবলে যে কাউকে কলেজের সভাপতি পদে নিয়োগ দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে অবশ্যই শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচনা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সভাপতি পদে যে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি এর আগে কলেজ থেকে সাময়িক বহিষ্কার হয়েছিল এটা জানা নেই।
মন্তব্য করুন