দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিনামূল্যে চিকিৎসা ক্যাম্পের মাধ্যমে জটিল রোগে আক্রান্তদের শনাক্ত করে সুচিকিৎসার আওতায় আনা গেলে তা নতুন বাংলাদেশের জন্য সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
শনিবার (১০ মে) চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ধলই গ্রামের ফেদাই চৌধুরী নুরানী মাদ্রাসা মিলনায়তনে দিনব্যাপী এক ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও আলোচনাসভায় তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ একাডেমি অব ডার্মাটোলজি এই ক্যাম্পের আয়োজন করে।
ক্যাম্পে প্রধান চিকিৎসক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ একাডেমি অব ডার্মাটোলজির প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শহিদুল্লাহ সিকদার। আরও উপস্থিত ছিলেন ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের প্রধান ডা. মাহবুব উল আলম চৌধুরী, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামসুন নাহার বিনতে মান্নান, বাংলাদেশ একাডেমি অব ডার্মাটোলজির ওয়েলফেয়ার সেক্রেটারি ডা. সাজিয়া আফরিনসহ চর্ম, মেডিসিন ও ইএনটিসহ বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথি চিকিৎসকদের হাতে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোরশেদ হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফেদাই চৌধুরী নুরানী মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের সভাপতি কামরুল হাসান এবং এনটিভির সিনিয়র রিপোর্টার আরিচ আহমেদ শাহ।
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শামসুন নাহার বিনতে মান্নান জানান, চিকিৎসা ক্যাম্পে আসা প্রায় তিন শতাধিক রোগীর মধ্যে দুইশ’ জনই বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগে ভুগছেন। এদের মধ্যে স্ক্যাবিস (খোসপাঁচড়া) ও পাঙ্গাশ (সম্ভবত ছত্রাকজনিত চর্মরোগ) রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। অনেকের ক্ষেত্রেই ছত্রাকজনিত রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এ ছাড়া ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসজনিত সংক্রমণ এবং সোরিয়াসিসের মতো রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য বলে তিনি জানান। চিকিৎসকরা রোগীদের রোগ সম্পর্কে সচেতন করতে হাতে-কলমে বিভিন্ন বিষয় শিখিয়ে দেন, যা সাধারণত দেখা যায় না।
ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের প্রধান ডা. মাহবুব উল আলম চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের ক্যাম্পের মাধ্যমে রোগী শনাক্ত করে তাদের উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তুলতে পারলে নতুন বাংলাদেশের মানুষ সত্যিকারের বিজয়ের স্বাদ পাবে।’
বাংলাদেশ একাডেমি অব ডার্মাটোলজির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. শহিদুল্লাহ সিকদার তার বক্তব্যে বলেন, ‘ডার্মাটোলজির চিকিৎসকরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে কাজ করছেন। এক্ষেত্রে চট্টগ্রামে রোগী শনাক্তকরণ ও তাদের সুস্থ করে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা হচ্ছে।’ তিনি ইন্টারন্যাশনাল ডার্মাটোলজিস্ট সোসাইটির ভূমিকারও প্রশংসা করেন।
এই ব্যতিক্রমী আয়োজনে তিন শতাধিক রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র প্রদান করা হয়। সুবিধাভোগীদের মধ্যে নারী, শিশু ও বয়স্কদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোরশেদ হোসেন এই আয়োজনকে সময়োপযোগী উল্লেখ করে বলেন, এটি একটি চলমান উদ্যোগের অংশ। ভবিষ্যতেও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে আরও বড় পরিসরে এ ধরনের ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প আয়োজন করা হবে।
মন্তব্য করুন