জমি-সংক্রান্ত বিরোধ থাকায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা যাচ্ছে না কুমিল্লা লালমাই উপজেলার ছোট শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেই সুযোগে বিদ্যালয়টির মাঠের উত্তরাংশে সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড-গাড়ি পার্কিংয়ের নির্ধারিত স্থান ও পূর্বাংশে ময়লার ভাগাড় গড়ে উঠেছে।
মাঠে রাখা গাড়ি, অটোরিকশা ও স্কুল ভবন লাগোয়া সড়কে চলাচলকারী গাড়ির হাইড্রোলিক হর্নে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিতে পাঠগ্রহণে মনোযোগ হারাচ্ছে। ভাগাড়ের ময়লার দুর্গন্ধে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষক ও স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার ভুলইন দক্ষিণ ইউনিয়নের ছোট শরীফপুর গ্রামের লালমিয়া ১৯৪০ সালে ভুশ্চি বাজার ঘেঁষে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ছয়জন শিক্ষক ও ২৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। উপজেলার দুটি ক্লাস্টারের একটি এই বিদ্যালয়ে। ৮৫ বছরের পুরোনো বিদ্যালয়টিতে সীমানা জটিলতা ও স্থানীয় কিছু ব্যক্তির বাধার কারণে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার ভুলইন দক্ষিণ ইউনিয়নের ভুশ্চি পশ্চিম বাজারস্থ কাশিনগর-লাকসাম পাকাসড়ক লাগোয়া বিদ্যালয়টির পশ্চিম, উত্তর ও পূর্ব পাশে সীমানা প্রাচীর নেই। মাঠের উত্তরাংশ দখল করে গড়ে উঠা স্ট্যান্ডে আটটি ও হরিশ্চরমুখী চার থেকে পাঁচটি অটোরিকশা যাত্রীর অপেক্ষায় রয়েছে। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে অটোচালকরা দ্রুত সড়কে চলে যান।
মাঠের পূর্ব-উত্তর কোণে একটি প্রাইভেট কার পার্কিং করা। মাঠের ঠিক মধ্যখানে একটি ইট ভাঙার মেশিন পড়ে আছে। স্কুলের পূর্ব পাশে গড়ে উঠা ময়লার ভাগাড়ে কুকুর হাঁটছে। এসবের মধ্যেই মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের প্রাত্যহিক সমাবেশ করাচ্ছেন। গর্তে ভরা মাঠে শিশুরা সারি ঠিক রাখতে পারছে না। সমাবেশের পেছনে (পূর্বাংশে) উপস্থিত শিক্ষার্থীরা এক হাত নাক চেপে রেখেছে, বাকি এক হাতে শিক্ষকের নির্দেশনা পালন করছে।
বিদ্যালয়টির পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী কামাল হোসেন বলে, একদিকে স্কুল মাঠের গর্ত, অন্যদিকে ময়লার দুর্গন্ধ। বাতাসে গন্ধ শ্রেণিকক্ষেও যায়। কয়েকদিন আগে আমার একজন সহপাঠী দুপুরে খাবারের সময় দুর্গন্ধের কারণে বমি করেছিল।
জাহিদ নামের আরেক শিক্ষার্থী বলে, বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে আমাদের খেলার জন্য দোলনা, স্লিপার ও ভারসাম্যসহ কিছু সামগ্রী রয়েছে। সীমানা প্রাচীর না থাকায় আমরা সেখানে খেলতে পারি না। সেখানে প্রতিদিন সকাল থেকে গাড়ি পার্কিং করা থাকে।
ছোট শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম মিয়া জানান, বিদ্যালয় মাঠ ঘেঁষে অটোরিকশার স্ট্যান্ড বা ময়লার ভাগাড় গড়ে উঠায় পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে। স্কুলের পশ্চিম পাশে সরকারিভাবে খেলনা স্থাপন করা হলেও বাচ্চারা খেলতে পারছে না। বারবার উদ্যোগ নেওয়ার পরও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে না। সীমানা প্রাচীর হলেই সমস্যাগুলোর সমাধান হয়ে যাবে।
লালমাই সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আলমগীর হোসেন বলেন, যেহেতু এটি ক্লাস্টার স্কুল। আমার প্রায়ই সেখানে যাওয়া হয়। স্কুল ভিজিটে গেলেই দেখি মাঠে সিএনজি-অটোরিকশা, বিভিন্ন গাড়ি পার্কিং করা। তা ছাড়া মাঠের পূর্ব পাশে ময়লার ভাগাড়। জমি-সংক্রান্ত জটিলতা দূর করে দ্রুত সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হোক।
মন্তব্য করুন