উপদেষ্টারা কথা বলছেন গণতন্ত্রের বিপরীত ভাষায় ও কাজ করছেন আইনের শাসনের বিরুদ্ধে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মনে করে তাদের কথায় জনগণ উঠবে ও বসবে। তাই উপদেষ্টারা মন যা চায় তাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তারা কথা বলছেন গণতন্ত্রের বিপরীত ভাষায়, কাজ করছেন আইনের শাসনের বিরুদ্ধে।
সোমবার (১৯ মে) বিকেলে সিলেট নগরীর শিল্পকলা একাডেমির অডিটরিয়ামে সিলেট বিভাগে বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টাদের উদ্দেশ করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মানুষ ১৭ বছর আইনের শাসনের জন্য অপেক্ষা করেছে। এখন আপনারা যে রাস্তায় হাঁটছেন সেটা অগণতান্ত্রিক পন্থা। এটা কারও জন্য ভালো হবে না।
ঢাকার মেয়র ইশরাকের শপথের প্রসঙ্গ উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, কম বয়সি উপদেষ্টা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন। এখন তিনি আদালতের রায়, গেজেট কিছুই মানছেন না। তাহলে গণতন্ত্রের বিপরীতে আমাদের যাত্রা শুরু।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যাকারী। তাদের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে। আজ পর্যন্ত তারা নিজেদের অপকর্মের জন্য কোনো অনুসূচনা করেনি বা ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। উল্টো তারা গণঅভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দুষ্কৃতকারী বলে আখ্যায়িত করছে। তারা কীভাবে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে? আমাদের নেতা তারেক রহমান ২০২৩ সালেই রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছিলেন। আমরা জানতাম, একদিন নিষ্ঠুরভাবে ফ্যাসিবাদের পতন হবে। যারা দেশের জনগণকে হত্যা করেছে, পঙ্গু করেছে, গুম, অপহরণ করেছে তাদের দলীয়ভাবে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশ যেন কোনো দিন আর স্বৈরশাসকের বা ফ্যাসিবাদের উৎপাদন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে অফিসিয়ালি ১৮ কোটি জনগণ বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে তা এখন ১৯ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। বিএনপির কি এতো আকাল পড়েছে যে আওয়ামী লীগ থেকে সদস্য আমদানি করতে হবে? যেই আওয়ামী লীগের ডিএনএতে গণতন্ত্র নেই, তাদের কেন আহ্বান করতে হবে বিএনপির সদস্য হওয়ার জন্য? গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে বিতাড়িত করে দিয়েছে। যে মানুষ বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, যিনি নিজেকে বাংলাদেশি পরিচয় দিবেন, তিনিই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সদস্য হতে পারবে। এই দেশের প্রতিটি ধূলিকণাকে বিএনপি ধারণ করে, লালন করে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বিএনপির জন্ম না হলে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন হতো না, বিএনপি সুসংগঠিত না থাকলে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হতো না, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি চালু হতো না। তাই বিএনপি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পাহারাদার।
মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৮৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদে দেশের একনায়কতান্ত্রিক সংবিধান বাকশালকে বিলুপ্ত করে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি সংবিধানে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম সংযুক্ত করে মহান আল্লাহতায়ালার ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি দেশের সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। সংবিধানে ধর্মের ভিত্তিতে সবার সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করে সব মানুষের ধর্মীয় চর্চার স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ এম. রাসেদুজ্জামান মিল্লাত বলেন, সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যারা পুরোনো সদস্য তারা নবায়ন করব। আর যাদের বয়স ১৮ হয়েছ, কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নন, যারা আমাদের দলের নীতি ও আদর্শে বিশ্বাসী, তারাই নতুন সদস্য হবেন। যারা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শকে লালন করে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আস্থাশীল তারা নতুন সদস্য হতে পারবেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় যারা সদস্য হতে আগ্রহী তারা সব তথ্য দিয়ে সদস্য হতে পারবেন। প্রতিটি ফরমের সঙ্গে একটি ঘোষণাপত্র দেওয়া হয়েছে, তা পূরণ করতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে সদস্য করতে হবে। কিন্তু সদস্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ থেকে সতর্ক থাকতে হবে। তারা যেন কোনোভাবেই সদস্য হতে না পারে।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জিকে গউছের সভাপতিত্বে ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ এম. রাসেদুজ্জামান মিল্লাত, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, আরিফুল হক চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালিক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, সহ-সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি শাম্মী আক্তার, সদস্য এম নাসের রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী।
আরও উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সিলেট জেলা ও মহানগর, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনসহ সিলেট বিভাগের সব উপজেলা, পৌর এবং সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন