অতীতের ফ্যাসিস্ট সরকারের পুরোনো মডেলেই অন্তর্বর্তী সরকার নতুন অর্থবছরের বাজেট দিতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সোমবার (১৯ মে) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২৫-২৬ : নীতি সংস্কার ও জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক বহুপাক্ষিক অংশীজনের বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। সিপিডি ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম এ বৈঠকের আয়োজন করে।
সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে আমীর খসরু বলেন, বাজেটে দেশের অর্থনীতি ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট কতটুকু মাথায় রাখা হয়েছে? আমরা কি পুরোনো ইকোনমিক মডেল ফলো করব এখন? যদি পুরোনো মডেলের ওপর বাজেট করা হয়, তবে আমাদের পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা- তা বাস্তবায়ন হবে না। ভুল তথ্যের ওপর বাজেট ও পলিসি প্রণীত হলে জনআকাঙ্ক্ষারও কোনো প্রতিফলন হবে না।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুকে উপেক্ষা করছে। এর মাধ্যমে দেশ একটা অনিশ্চয়তার দিকে চলে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় বাজেট বলুন আর অর্থনৈতিক নীতি, কিছুই কাজ করবে না।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর খুব বেশি প্রত্যাশাও নেই। কারণ, এ ধরনের সরকারের কিছু লিমিটেশন আছে। তারা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে দেশ পরিচালনা করছে না। তারা পাবলিক ফিডব্যাক, জনগণ ও বিজনেস কমিউনিটির নার্ভ ফিল করতে পারে না।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, এই সরকারের ওপর মানুষের যেটুকু এক্সপেকটেশন সেটা একটু ভিন্ন। ডেমোক্রেটিভ অর্ডারে ফিরে যাওয়ার জন্য যে কাজগুলো করা দরকার, সেটাই হচ্ছে এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু আমরা সেখানে কতটুকু এগোচ্ছি? অনিশ্চয়তার মাধ্যমে যেখানে স্থিতিশীলতা থাকবে না, সেখানে মানুষ ইনভেস্টমেন্টেও ভরসা পাবে না। আগামী দিনের বাংলাদেশ কেমন হবে, এ সরকার কতদিন থাকবে, নির্বাচন কবে হবে, আগামী নির্বাচনের পর বাংলাদেশ কোথায় যাবে- এ বিষয়গুলো সবার মনে কাজ করছে। কিন্তু আমরা কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না।
আমীর খসরু বলেন, এই যে একটা ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম হলো, আমরা স্বাগত জানাই। তবে আমরা মনে করি ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম কোনো সরকারের দায়িত্ব না, বরং আমাদের সবার দায়িত্ব। এখানে ইনভেস্টমেন্টের অবশ্যই দরকার আছে। নির্বাচিত সরকার ছাড়া তো সেভাবে ইনভেস্টমেন্ট আসবে না। ইনভেস্টমেন্ট ছাড়া কোনো দেশই চলতে পারবে না। কারণ, ইনভেস্টমেন্ট ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো দেশই উন্নতি করতে পারে না। এমপ্লয়মেন্ট ক্রিয়েট করতে হলে আপনাকে প্রথমেই আমাদের প্রাইভেট সেক্টরে ইনভেস্ট করতে হবে। সেটা দেশে হোক বা বিদেশে। সেই জায়গাটিতে যে কনফিডেন্স দরকার, যে রোডম্যাপ দরকার, যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা দরকার, শর্টটার্ম, মিডটার্ম বা লংটার্ম- সেটা তো কেউ করতে পারছে না। সবাই অপেক্ষা করছে, পরবর্তী পদক্ষেপ কী, কেউ বুঝতে পারছে না। কারণ, দেশে এখন না কোনো ইলেকটেড সরকার আছে, না কোনো রোডম্যাপ আছে, যার ওপর ভরসা করে মানুষ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
মন্তব্য করুন