আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে অধিক যাত্রী পরিবহন করতে নীলফামারী সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় ১৪০টি কোচ মেরামত করা হচ্ছে। নিয়মিত কাজের শিডিউলের সঙ্গে মেরামত করা হচ্ছে এসব কোচ। বাড়তি এসব কোচ দিয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে দুটি ঈদ স্পেশাল ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেনের সঙ্গে বাড়তি কোচ সংযোজন করা হবে। এই লক্ষ্য পূরণে রেল কারখানার ২৮টি শপ কর্মমুখর হয়ে উঠেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শ্রমিক-কর্মচারীরা কোচ মেরামতে দৈনিক কর্মঘণ্টা শেষে অতিরিক্ত কাজ করছেন। ইতোমধ্যে ঈদযাত্রায় হস্তান্তর করা হয়েছে ১০০টি কোচ।
কারখানা সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় ৩ হাজার ২২০ জন মঞ্জুরি জনবল থাকলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৮৫৪ শ্রমিক-কর্মচারী। নতুন নিয়োগ বন্ধ থাকায় মাত্র ২৫ ভাগ জনবল নিয়ে উৎপাদনে রয়েছে কারখানাটি। আসন্ন ঈদুল আজহায় যাত্রী চাপ সামলাতে অতিরিক্ত কোচ মেরামত করার কর্মযজ্ঞ চলছে। কারখানার ক্যারেজ, বগি, হেভি রিপিয়ারিং শপ, ক্যারেজ কনস্ট্রাকশন ও পেইন্ট শপে অচল পুরাতন কোচের মেরামত কাজ চলছে। এসব শপে কোচের জরাজীর্ণ কাঠামো পরিবর্তন, চাকার ট্রলি মেরামত, নতুন আসন বিন্যাস ও অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জার কাজ করা হচ্ছে। সবশেষে রংকরণের কাজ হচ্ছে পেইন্ট শপে। এসব কাজে সাজ সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করছে কারখানার আরও ২৪টি শপ।
কারখানার ক্যারেজ শপের ইনচার্জ প্রকৌশলী মমিনুল ইসলাম জানান, ঈদ উপলক্ষে কারখানার ডিএস সাহেবের তত্ত্বাবধায়নে জনবল সংকটের মুখে মাত্র ২৫ ভাগ জনবল দিয়ে মোট ১৪০টি কোচ মেরামত করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১০০টি কোচ পাকশী ও লালমনিরহাট ট্রাফিক বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে। অবশিষ্ট কোচগুলো পর্যায়ক্রমে হস্তান্তর করা হবে।
কারখানার শিডিউল শপের ইনচার্জ প্রকৌশলী রুহুল আমীন জানান, ঈদে ট্রেন বহরে অধিক যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা বাড়াতে ১৪০টি কোচ সচল করা হচ্ছে। জরাজীর্ণ কোচগুলোকে মেরামত করে রূপান্তর করা হচ্ছে নতুন কোচে। নানামুখী সংকট থাকলেও অগ্রাধিকার দিয়ে ঈদের বাড়তি কোচ সরবরাহের কাজ করছি আমরা।
কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা বলেন, মালামাল ও লোকের সংকট থাকলেও ঈদে অধিক যাত্রী পরিবহনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। আমরা অতিরিক্ত শ্রম দিয়ে কয়েক গুণ বেশি কাজ করছি কোচ মেরামতের লক্ষ্য পূরণে। যাতে ঈদযাত্রায় অধিক সংখ্যক যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যে গন্তব্যে যেতে পারেন।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ জানান, ঈদ যাত্রায় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য অঞ্চল থেকে পশ্চিমাঞ্চলগামী অধিক যাত্রী পরিবহনের জন্য রেলওয়ে বহরে ১৪০টি কোচ যুক্ত করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এসব কোচ প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেনের সঙ্গে অতিরিক্ত কোচ হিসেবে সংযুক্ত করা হবে। এছাড়া পার্বতীপুর-জয়দেবপুর ও জয়দেবপুর-পার্বতীপুর রুটে দুই জোড়া ঈদ স্পেশাল ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ, যা ঈদের আগে ও পরে চলাচল করবে। এসব লক্ষ্য পূরণে সিডিউল কাজের সঙ্গে অতিরিক্ত ১৪০টি কোচ কারখানায় মেরামত করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে ১০০টি কোচ ট্রাফিক বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে। অবশিষ্ট কোচ ৩১ মের মধ্যে হস্তান্তর সম্পন্ন হবে। কারখানায় জনবল সংকটের মধ্যেও শ্রমিক-কর্মচারীরা দৈনিক কর্মঘণ্টার পর অতিরিক্ত শ্রম দিয়ে কাজ করছেন। অতিরিক্ত কাজের জন্য তাদের প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন