রাজশাহীর বিভিন্ন স্থান থেকে ভটভটি বোঝাই গরু নিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে সিটি হাটে যাচ্ছিলেন গরুর মালিক ও ব্যবসায়ীরা। হাটে পৌঁছানোর আগেই গতকাল বুধবার সকালে গাড়িসহ গরুগুলো আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ভারতীয় গরু ভেবে ৪টি ভটভটি বোঝাই প্রায় ২৪টি গরু বিজিবি আটক করেছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।
তারা বলেন, গরুগুলো ‘দেশি’ এবং বাড়িতেই লালন-পালন করা। নিজেরা না খেয়ে লাভের আশায় গরুগুলোকে খাইয়েছেন। অথচ বিজিবি গরুগুলো আটক করে শুল্ক বিভাগে জমা দেয়। গরুগুলো ছেড়ে না দিলে তাদের আত্মহত্যা ছাড়া কোনো পথ নেই বলেও হুমকি দেন ভুক্তভোগীরা। আটক করা এই ২৪টি গরুর আনুমানিক দাম ৬৫ লাখ টাকা।
এদিকে ‘দেশি’ গরু আটকের প্রতিবাদে বুধবার দুপুরে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক অবরোধ করে নগরীর শালবাগান এলাকায় বিজিবি-১ ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ করেন ভুক্তভোগী গরুর মালিক ও ব্যবসায়ীরা। এতে সড়কের দুপাশে যানবাহন আটক পড়লে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে বিজিবি সদর দপ্তরে রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিজিবির সভা হয়। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি।
গরুর ব্যবসায়ী ও হাট ইজারাদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগধানী, বাগসারা ও দুয়ারী এলাকায় বিজিবি অভিযান চালিয়ে চার গাড়ি গরু জব্দ করে। মোট ২৪টি গরু আটক করে আনা হয় বিজিবির সদর দপ্তরে। এ খবর পেয়ে ব্যবসায়ীরা দুপুরের দিকে জড়ো হন বিজিবির সদর দপ্তরে। তাদের সঙ্গে হাটের বিভিন্ন পর্যায়ের ইজারাদার ও অন্যান্য গরু ব্যবসায়ীও জড়ো হন। তারা সেখানে নানা স্লোগান দেন। পরে বিজিবির সদস্যরা তাদের রাস্তা ছেড়ে দিতে বলেন। একপর্যায়ে তারা রাস্তা ছেড়ে দেন।
গরু ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম জানান, সকালে পবার দুয়ারী মোড় দিয়ে তানোর থেকে সিটি হাটের উদ্দেশ্যে গরু আনছিলেন। তাদের গাড়িতে মোট আটটি গরু ছিল। গরুগুলো তারা তানোরের বিভিন্ন গ্রামের চাষিদের থেকে কিনেছেন। সেগুলো নিয়ে চলে এসেছে বিজিবি। এগুলো দেশীয় গরু, ভারতের নয়। কাস্টতানোরের শিধাইল এলাকার বাসিন্দা ভটভটি চালক ইসমাইল হোসেন বলেন, আমার গাড়িতে ৮টি গরু নিয়ে সিটি হাটে আসতে থাকি। কিন্তু পথিমধ্যে গাড়ি থামিয়ে গরুগুলো আটক করে কাস্টমস গোডাউনে নিয়ে এসেছে। গরুগুলো ভেতরে ঢুকিয়ে গাড়ির চাবি তারা নিয়ে নিয়েছে। মোবাইলও কেড়ে নিয়েছিল, তা ফেরত দিয়েছে।
গরুর মালিক সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা কাস্টম অফিসে এসে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বলছি। তারা বলছে, বিজিবি ছাড়পত্র না দিলে তারা এগুলো ছাড়তে পারবে না।’ এ বিষয়ে জানতে বিজিবি-১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল হাসিবুল হককে একাধিকবার কল করা হয়। তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এজন্য এ বিষয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে বিজিবির সূত্র বলছে, এগুলো যে ভারতীয় গরু তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ভারতীয় গরুর বিষয়ে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছে। বিজিবি সিটি হাটসহ অন্য হাট ইজারাদারদের সঙ্গে কথা বলে ভারতীয় গরু হাটে না প্রবেশের অনুরোধ করে। কিন্তু তারা নিজেরাই বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের সিল বানিয়ে ছাড়পত্র করে ভারতীয় গরু হাটে তোলার ব্যবস্থা করছে।
মন্তব্য করুন