নওগাঁর নিয়ামতপুরে সপ্তাহজুড়ে টানা বৃষ্টিতে নুয়ে পড়ে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে ইরি-বোরো ফসলের ধান। সোনালি ধানে কৃষকেরা এবারও রঙিন স্বপ্ন দেখছিলেন। শুরুতে আবহাওয়া ভালো থাকায় বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ে তেমন কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা ছিল না তাদের। তবে ধান কাটা শুরুর দিকেই সপ্তাহজুড়ে টানা বর্ষণের কবলে পড়ে স্বপ্ন ভঙ্গ হলো কৃষকদের।
নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় প্রায় সাড়ে ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় সরিষা চাষাবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৭৬০ হেক্টর ও আলু চাষাবাদ হয়েছে ৩ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে।
উপজেলার শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক সবুজ বলেন, বর্গা নিয়ে তিন বিঘা জমিতে সরিষা ও আলু চাষাবাদ শেষে বোরো ধান আবাদ করেছি। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া ও ঝড়ে ক্ষেতের ধান এলোমেলোভাবে নুয়ে পড়ায় ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছেন না তিনি। চার-পাঁচ দিন ধরে প্রতিদিনই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। ক্ষেতে বৃষ্টির পানি জমে গেছে। এতে ক্ষেতেই ধানের চারা গজিয়ে নষ্ট হচ্ছে ধান।
উপজেলার কন্যাপাড়া গ্রামের কৃষক জালাল উদ্দীন বলেন, আমন ধান কাটার পর চার বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করি। সরিষা তোলার পর সেই জমিতে বোরো ধান লাগাই। পাকা ধান কেটে শুকানোর জন্য জমিতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সেই ধান আর ঘরে তুলতে পারছি না। ক্ষেতেই ধান পচে যাচ্ছে। খুব বিপদে আছি।
উপজেলার শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের রাজাপুর দরগাপাড়া গ্রামের কৃষক সোহেল রানা বলেন, এবারে আলু চাষাবাদ করে ঋণের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে ৯ বিঘা জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছি। খরচের কমতি রাখিনি। এখনো ধান ঘরে তুলতে পারেনি। শ্রমিক লাগিয়ে তিন বিঘা জমির ধান কেটে শুকানোর জন্য মাঠেই ফেলে রেখেছি। টিভির খবরে শুনছি আবার নাকি ২৯ তারিখ থেকে সপ্তাহজুড়ে ঝড় বৃষ্টি হবে। এই ক্ষতি পূরণে আমাদের সরকারি ভর্তুকি প্রয়োজন। নয়তো চাষাবাদে আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুল হাসান কালবেলাকে বলেন, নিয়ামতপুরে এবার সবচেয়ে বেশি সরিষা ও আলুর আবাদ হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ জমির ধান কাটা-মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। সরিষা ও আলু চাষাবাদের কারণে বোরো ধান রোপণে দেরি হওয়ায় কাটা-মাড়াইয়ে দেরি হচ্ছে। সরিষা ও আলুর জমির ধান কাটা-মাড়াইয়ে শুরুর দিকেই বৈরী আবহাওয়ায় অতিবৃষ্টির কারণে কৃষকেরা বিড়ম্বনায় পড়েছে। জমিতে পাকা ধান থাকলে দ্রুত ধান কাটতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে চাষিদের।
মন্তব্য করুন