আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩০০ আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। প্রার্থীদের নাম ঘোষণার বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি স্থানীয় ভোটারদের কাছে দলটি তাদের প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের কৌশল হিসাবে দেখা হচ্ছে। এরই ধারবাহিকতায় সারাদেশের ন্যায় কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে জামায়াতের এমপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা মুফতি আমীর হামজা।
গত ২৫ মে মনোনয়ন ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই জেলার রাজনৈতিক মহলে চলছে আলোচনার ঝড়।
জানা যায়, ইসলামিক আলোচক হিসাবে মুফতি আমীর হামজার খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। তিনি বাংলাদেশের বাইরে বিভিন্ন মুসলিম ও অমুসলিম রাষ্ট্রগুলিতে ইসলামের প্রচারে কাজ করেন। বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ইসলামিক আলোচক তিনি। তবে ইসলামী আলোচক হিসাবে আলোচনায় থাকলেও এবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য কুষ্টিয়া-৩ আসনে প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দিয়েছে। তাই তার মনোনয়ন নিয়ে জেলার রাজনীতিতে এখন চলছে সরব আলোচনা।
তবে বিষয়টি নিয়ে জেলার ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আরিফ মৃদা মুফতি আমির হামজার মনোনয়ন সম্পর্কে জানান, এটা জামায়াতের ইসলামীর কৌশলগত বিষয়। তবে আমরা চাই দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হোক। তাই এটা প্রতিষ্ঠিত করতে আলেম সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। তবে ব্যক্তি আমীর হামজা ও রাজনীতির মাঠে ওনার অবস্থান কেমন হবে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে অপারোগতা প্রকাশ করেন তিনি।
এ সময় তিনি বলেন, অন্য দলের কোনো বিষয়ে মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি। ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হলে দলগুলোর প্রার্থীতেও আসতে পারে পরির্বতন।
আমীর হামজার মনোনয়ন প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কুষ্টিয়ার সাধারণ সম্পাদক গোলাম তওহীদ আনোয়ার বলেন, প্রার্থী হিসাবে আলেম-ওলামা সমাজের যারাই আসুক তাদের আমরা সাধুবাদ জানাই ।
তিনি বলেন, আমীর হামজাকে মনোনয়ন দেওয়া জামায়তের একান্ত নিজেস্ব বিষয়। এ ব্যাপারে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই। আমির হামজা একজন বিশিষ্ঠ ইসলামী বক্তা কিন্তু তিনি রাজনীতিতে কেমন হবেন সে বিষয়ে কিছু এখন করতে চাচ্ছি না। জেলা জামায়াতের রাজনীতিতে অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন প্রথমে প্রার্থী হিসাবে মনোনীত ছিল পরে আমির হামজাকে জামায়াত থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়, আগামীতে যে পরির্বতন হবে না তা কেউ জানে। তবে কে এমপি হবে কে মনোনয়ন পাবে তা ভাববার সময় এখনো আসেনি।
আমির হামজাকে প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দেওয়া জামায়াতের সঠিক সিদ্ধান্ত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা জামায়াতের একান্ত সিদ্ধান্ত আমার এ ব্যাপারে কথা বলা ঠিক হবে না। কারণ আমি অন্য একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। তবে বিএনপির বিপক্ষে নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে তিনি ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে বাংলাদেশ যুব মজলিশ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি মোহাম্মদ শারাফাত হোসাইন বলেন, মুফতি আমীর হামজাকে তার সংগঠন উপযুক্ত মনে করেছে তাই তাকে মনোয়ন দিয়েছে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে তিনি সর্বসাধারনের কাছে একজন গ্রহণযোগ্য মানুষ।
তিনি বলেন, আমি ব্যাক্তিগতভাবে তাকে চিনি, তিনি একজন সাদাসিধা ভালো মানুষ।
প্রার্থী হিসাবে তিনি কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, তিনি প্রার্থী হিসাবে অবশ্যই ভালো হবে। কারণ তিনি একজন আলেম মানুষ। তার কাছে আমাদের প্রত্যাশাও থাকবে বেশি। তিনি এমপি হলে সমাজের জন্য ভালোই হবে। তবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যদি আরও দায়িত্বশীল ব্যাক্তিকে মনোনয়ন দিত তাহলে বিষয়টি আরও বেশি ভালো হতো বলে তিনি মনে করেন।
তবে স্থানীয় মানুষের দাবি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুর্নীতিবাজ, অসৎ ও মানুষের সম্পদ লুন্ঠনকারীদের বাদ দিয়ে সৎ, যোগ্য ও মানবিক গুণাবলি সমৃদ্ধ প্রার্থীদের যেন মনোনয়ন দেয় সেই তাই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রত্যাশা।
মন্তব্য করুন